বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১২

যার যাতে মজে মোন কিবা হাঁড়ি কিবা ডোম !

রাস্তায় কোনো আলো জলছে না ! একেতো অন্ধকার তার উপর লোডসেডিং তার উপর শুরু হয়েছে ঝির ঝিরে বৃষ্টি ! এমনিতেই রাস্তা কাঁচা ! বৃষ্টির জন্য পিছলও হয়ে উঠেছে ! চারিদিকে ছোটো খাটো খানা খন্দ ! নতুন কলোনির ( কলোনি না বলে বস্তিই বলা ভালো ! ) জন্য এখনো কোনো সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এখানে শুরু হয়নি ! কারণ এখান কার সমস্ত বাসিন্দারাই উদ্বাস্তু ! বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে হিন্দুরা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে ! আর ভারত সরকার দয়া দেখানোর জন্য অনেক গুলি উদ্বাস্তু কলোনির জায়গা দিয়েছেন ! কিন্তু এদের এখনো মানুষ বলে মনে করেননি ! তাই এরা কি ভাবে বেঁচে থাকবে তার দেখার দরকার হয়নি ! শুধু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে নিজের দেশের মহানুভবতা তুলে ধরতে বাংলাদেশী উদ্বাস্তুদের এমন সমস্ত জায়গায় জায়গা দেওয়া হচ্ছে যেখানে মানুষের থাকার মত কোনো পরিবেশি নেই ! কিন্তু এরা উদ্বাস্তু এরা মানুষ নয় ! তাই এদের জন্য চিন্তা করার কিছুই নেই সরকারের বা তাদের বিপক্ষের ! শুধু তাদের নিয়ে রাজনীতি করতে পারলেই যেন তারা বেঁচে যাই ! এরা এখনো কোনো পার্টির ভোট ব্যাঙ্ক হয় নি তাই এখানকার লোকেদের কষ্ট দুক্ষ নিয়ে কোনো নেতাদের কোনো মাথা ব্যথাই নেই ! শুধু একবার করে তারা আসেন আর বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যান ! সরকারী উদারতা বলতে এরা পেয়েছে একটা টিউব কল আর লাইন টানা ইলেকট্রিসিটি ! তাতে কখন কারেন্ট আসে আর কখন যায় এখানকার লোকেরা কিছুই বুঝতে পারেনা !
নিজের মনে নিজের দেশের সরকার কে গালাগালি করতে করতে ডাক্তার আনন্দ সেন সেই পিছিল পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন !
ডাক্তার আনন্দ সেন বয়স ৩৫ বছর ! এম বি বি এস লখনৌ, লম্বা পুরুষালি চেহারার একটি মানুষ যিনি নিজের জীবন কে বিলিয়ে দিয়েছেন গরিব আর আর্ত মানুষের সেবায় ! মা বাবার এক মাত্র সন্তান হয়েও এখনো বিয়ে করেননি কারণ তার মতে তিনি যদি বিয়ে করেন তাহলে গরিব মানুষের কি হবে !! গ্রাস্সাছাদ্দনের জন্য চিন্তা করেন না ! একটা ক্লিনিক খুলে রেখেছেন বটে কিন্তু কোনো গরিব রোগীর কাছে কোনো ফিস নেন না ! কিন্তু যদি কোনো মধ্য বর্গীয় পরিবার বা কোনো বড়লোক তার কাছে চিকিত্সা করাতে আসেন তবে তাদের গলা কেটে টাকা আদায় করেন ! অবশ্য তার এই ব্যবহারে কোনো মানুষই কোনো প্রতিবাদ করেন না ! কারণ তিনি যে ফিস বড়লোকেদের থেকে নেন সেটাই পথ্য হয়ে ফিরে যায় গরিবের কাছে ! গরিব বড়লোক সবার কাছে তিনি নমস্য ! আর তার মা তার একমাত্র আরাধ্য দেবী যিনি তার এই কাজে উত্সাহ দিয়ে যান আর সময়ে অসময়ে তার কম্পাউন্ডার হয়ে কাজ চালিয়ে যান ! যখন আনন্দ সেন থাকেন না তখন তিনি প্রাথমিক চিকিত্সাও করে দিয়ে থাকেন !! তিনি হলেন ডাক্তার মা আর আনন্দ হলো ডাক্তার ছেলে !
সমস্ত পার্টির নেতারা আসেন আনন্দ সেনের কাছে আবদার নিয়ে, একবার যদি তিনি তাদের হয়ে লোকেদের বলেন তো তারা ভোটে জিততে পারেন ! কিন্তু আনন্দ সেন পরিস্কার কড়া কথায় তাদেরকে জানিয়ে দেন " আগে কাজ করে দেখান যে আপনারা মানুষের সাথে আছেন মানুষের পাশে আছেন তারপর আমি মানুষকে বলব আপনাদের ভোট দিতে !!" কাজ না করে আগে ভোট দিলে আপনাদের চেহারাটা বদলে যায় সেটা আমি ভালো করেই জানি !
কোনো নেতাই আনন্দ সেনকে চটাতে সাহস পাননা ! একমাত্র ডাক্তার বিধান চদ্র রায়ের কথা আলাদা !! তিনি শুধু একবার এই এলাকা পরিদর্শন করতে এসে ডাক্তার আনন্দ সেনের মুখোমুখি হন আর তখন তিনি আনন্দ সেনকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান যে তিনি এই অঞ্চলের এবং এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করবেন ! তিনি তার প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন এই কলোনিতে একটা টিউব কল বসিয়ে আর ইলেক্ট্রিসিটির কানেক্সন দিয়ে ! তার প্রতিশ্রুতি মত এখন রোজ সরকার থেকে লোক আসে এলাকার পরিদর্শন করতে ! ফলে স্থানীয় রাজনীতিও মাথা চারা দিয়ে উঠেছে ! প্রতিদিনই স্থানীয় নেতারা আসেন সকলের সুখ দুক্ষের কথা জানতে আর চলে যান কিন্তু কোনো কাজ হয় না ! বেশ কিছুদিন হলো সরকারের তত্ত্বাবধানে কিছু মাটি ফেলে একটা রাস্তা তৈরী হয়েছে বটে কিন্তু তাকে ঠিক মত রাস্তা বলা যায় না !
সেই রাস্তা দিয়েই হেঁটে হেঁটে ডাক্তার আনন্দ সেন চলেছিলেন নতুন গড়ে ওঠা উদ্বাস্তু কলোনির দিকে ! বিকালে খবর পেয়েছেন যে কলোনির অনেক বাচ্ছা হটাত করে নতুন একধরনের জ্বরের শিকার হয়েছে ! এবং কোনো কিছুতেই তাদের কোনো উপশম হচ্ছেনা ! ডাক্তার বিধান রায়ের একান্ত অনুগ্রহে যে সাধারণ চিকিত্সা কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল সেখান থেকে অসুধ খেয়েও তাদ্রের কোনো পরিবর্তন নেই ! তাই এলাকার কিছু সেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুরোধে এই ঝর বাদল রাতে ডাক্তার আনন্দ সেন চলেছেন তাদের দেখতে ! হটাত ঠোকর খেয়ে ডাক্তার আনন্দ সেন নিজে কে আর সামলাতে পারেন না ! ধরম করে পরে যান ! কিন্তু পরেই বুঝতে পারেন যে তিনি একটি শরীরের উপরে পড়েছেন ! তারাতারি নিজে কে সামলিয়ে তিনি বলে ওঠেন কে ভাই এখানে পরে আছ?? কিন্তু কোনো জবাব নেই ! নিচু হয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন শরীর তা মানুষের না কোনো পশুর !! হাত বুলিয়ে অনুভব করতে চেষ্টা করেন ! "একই ! এটি তো একটি মানুষের শরীর ! সারা শরীর জলে ভিজে ঠান্ডা হয়ে গেছে !! অন্ধকারেই ডাক্তারি সভাব বসত খুজতে থাকেন মানুষটি হাত ! যাতে করে নারী দেখে বুঝতে পারেন সে বেঁচে আছে না মরে গেছে !! অন্ধকারে ঠাহর হয় না ! হাথ বলাতে বলাতে অনুভব করেন হাতের স্পর্শে আছে একটি স্তন !! তিনি বুঝতে পারেন এটি একটি নারী শরীর !! হাতরে হাতরে হাতটি খুঁজে পান তিনি আর নারী দেখেই বুঝতে পারেন এখনো প্রাণ আছে শরীর তাতে ! নিজের ডাক্তারি বাক্স খুলে হাতরে হাতরে বের করে আনেন নিজের ছোট্ট টর্চ লাইট টা ! জেলে দেখেন একটি ২০/ ২১ বছরের মেয়ে সঙ্গাহীন হয়ে পরে আছে সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে ! একটা হাত দুমড়ে পিঠের নিচে পরে আছে !!
একেবারে কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে গেলেন ডাক্তার আনন্দ সেন !! আসে পাসে কাউকে না পেয়ে তিনি চিত্কার করে উঠলেন ! " কে কথায় আছ তারাতারি এসো !" এখানে একটি মেয়ে পরে আছে তাকে বাঁচাতে হবে !! " বেশ কিছুক্ষণ চিত্কার করার পর কলোনি থেকে চার পাঁচ জন হাতে হেরিকেন নিয়ে এগিয়ে এলো ডাক্তার আনন্দ সেনের কাছে !! মুখের কাছে হেরিকেন তুলে একজন ডাক্তার কে চিনতে পারল !" কি হইসে ডক্টর সাহেব !!আপনে চেল্লায়তে সিলেন ক্যান?? "
-আরে আগে একে তোলো আর আমার ক্লিনিকে নিয়েচলো !! না হলে এই মেয়েটি বাঁচবে না !!
-এইডা তো দেহি নিবারণের ছেমরি ! কি হইসে অর ?? একজন ভালো করে নিরীক্ষণ করে বলে উঠলো !! ওদের সাথে নিবারণ ছিল ! তারাতারি এগিয়ে এসে দেখে বুক চাপড়ে কেঁদে উঠলো ! " কি হিল আমার মাইয়ার ! ও ডাক্তার সাহেব আমার মাইয়াটারে বাঁচান ! আপনার দুইটা পায়ে পড়তাছি !"
- ডাক্তার আনন্দ সেন ধমকে উঠলেন " পায়ে পর্বে পরে আগে একে আমার ক্লিনিকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা কর !
তরী ঘড়ি কোনো কিছুই পাওয়া গেল না ! ডাক্তার আনন্দ সেন বললেন একটা বড় চাদরের ব্যবস্থা কর আর দুটো বাঁশের !
চাদর আর বাঁশ বেঁধে স্ট্রেচারের মত করে নেও হলো আর তাতেই মেয়েটিকে বয়ে নিয়ে চলতে শুরু করলো সবাই ক্লিনিকের দিকে !!
যখন ক্লিনিকে পৌঁছলো তখন সবাই বেশ ভিজে গেছে ! মেয়েটির অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে গেছে ! একেতো অনেক রক্ত ক্ষরণ হয়েছে তার উপর বৃষ্টি তে ভিজে মেয়েটির নার্ভ খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে ! সেই অবস্থাতেই আনন্দ তিন চারটে ইনজেকসন মেয়েটির শরীরে পুশ করে দিলেন ! মহামায়া দেবী মানে আনন্দ সেনের মা পরম মমতায় মেয়েটির শরীর থেকে সমস্ত রক্তের দাগ মুছিয়ে সমস্ত ক্ষত তে ওষুধ লাগিয়ে দিলেন ! যেহেতু মেয়েটি সম্পূর্ণ ভিজে অবস্থায় ছিল তাই সমস্ত কিছু করার আগে মেয়েটির সমস্ত কাপড় খুলে ফেলে দিয়ে নিজের শাড়ি দিয়ে কোনো রকমে মেয়েটির শরীর কে ঢেকে আনন্দ কে ডাকলেন !!
" বাবা আনন্দ ! আমার অবস্থা খুব সুবিধের মনে হচ্ছে না ! তুই কি একবার দেখবি??"
- দাঁড়াও মা আগে লোকাল থানায় একটা ফোন করে দিই আর একটা এম্বুলেন্সের জন্য ফোন করি ! এই মেয়েটিকে এখুনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করতে হবে ! তাহলে যদি মেয়েটি বেঁচে যায় !!
ক্লিনিকের বাইরের ঘরে সমস্ত লোকজন বসে আছে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে ! বিশেষ করে নিবারণ ! দু চোখ দিয়ে জলের ধারা অনবরত বয়ে চলেছে ! ডাক্তার আনন্দ বাইরের ঘরে এসে বললেন ! " দেখো হয়ত মেয়েটিকে বাঁচানো যাবে না ! খুব পাশবিক অত্যাচার হয়েছে ওর উপর তার উপর যে ভাবে অর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে তাতে অর বাঁচা খুবই মুস্কিল ! আমি পুলিস কে ফোন করে দিয়েছি আর এম্বুলেন্স কেও ! ওরা এসে পড়ল বলে ! ওরা এলেই ওকে medikel কলেজে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হবে ! কিন্তু ওকে বাঁচাতে অনেক রক্ত লাগবে ! তোমরা কে কে রক্ত দিতে পারবে সেটা ঠিক করে নাও ! যারা রক্ত দেবে তারা যেন এম্বুলেন্সের সাথে কলকাতা মেডিকেলে যাবে !! " আর হ্যা এটি কার মেয়ে?? নিবারণ দুচোখে জলের ধারা নিয়ে দুই হাত জোর করে উঠে দাঁড়ালো !!
- কি নাম আপনার??
- আজ্ঞে নিবারণ হালদার !
- আপনার মেয়ের নাম কি?
- নন্দিনী হুজুর !
- আমি হুজুর টুজুর কেউ নই ! আমি একজন ডাক্তার !! এবার বলত তোমার মেয়ের এই অবস্থা কি করে হলো??
- জানি না ডাক্তার সাহেব ! সকাল বেলাতেই আমার মেয়ে বেরিয়ে যায় ! সোনারপুরে একটা কোম্পানিতে সেলাইয়ের কাজ করে ! আজও সকাল বেলাতেই বেরিয়ে গেছিল ! তার পর তো আপনি সব জানেন !! ও আমার একমাত্র মেয়ে ! ওই আমাদের মুখের গ্রাস জোগায় ! কত কষ্ট করে যে আমাদের দু বেলা দু মুঠো ভাত তুলে দেয় সেটা আমরা বুঝেও কিছু করতে পারিনা !! বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো !
কান্নার মাঝেই পুলিশ চলে আসলো !!
- কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব !! এত জরুরি তলব কেন??
- আরে সিকদার সাহেব নিজে এসেছেন যে !!
- কি করব যখন শুনলাম যে আপনি থানায় ফোন করেছেন তার মানে নিশ্চই আপনার কিছু হয়েছে তাই নিজেই চলে এসেছি !! কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব বলুন তো !!
- কি আর বলব বলুন ! মনে হচ্ছে একটা ব্রুটাল রেপের ঘটনা ঘটেছে !!
- ভিকটিম কে??
- ওই লোকটির মেয়ে ! নাম নন্দিনী হালদার ওই নতুন উদ্বাস্তু কলোনির মেয়ে !! বলে নিবারণের দিকে ইশারা করে সমস্ত ঘটনা তা পুলিস অফিসার সিকদার কে খুলে বললেন !
সিকদার সমস্ত কিছু শুনে একেবারে থম মেরে গেলেন !! আমার এলাকাতে এই ধরনের ঘটনা কি করে ঘটতে পারে আমি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না ডাক্তার সেন !! এখন মেয়েটির অবস্থা কেমন??
- বাঁচবে বলে মনে হয় না ! আমি এম্বুলেন্স কে ফোন করে দিয়েছি ! যদি মেডিকেলে নিয়ে গয়ে বাঁচানো যায় !
- আমি কি একবার মেয়েটির অবস্থা দেখতে পারি??
- যান না ভিতরে ক্লিনিকে আছে ! আমার মা আছেন সেখানে !!
- অনেক অনেক ধন্নব্যাদ ! বলেই সিকদার সাহেব ক্লিনিকের ভিতরে প্রবেশ করলেন ! তখন মহামায়া দেবী মেয়েটির ক্ষত স্থানের পরিচর্চাতে ব্যস্ত ছিলেন !!
- মাসিমা কেমন বুঝছেন??
- আরে জয়ন্ত যে !! মাসিমাকে একেবারে ভুলে গেছ??
- না মাসীমা ! ভুলিনি ! একটু কাজের ছাপ আছে তাই আসতে পারিনা ! আজ যখন শুনলাম ডাক্তার সাহেব ফোন করেছেন তাই আর থাকতে না পেরে নিজেই চলে এলাম !! এর অবস্থা এখন কেমন??
- খুব খারাপ ! নিন্মাঙ্গ কে করা যেন চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে উপরে ফেলার চেষ্টা করেছিল !! দুটি স্তন কে কামড়ে কামড়ে বিভত্স জখম করে দিয়েছে ! কি বিভত্স ভাবে যে মেয়েটিকে শারীরিক যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে তুমি যদি না দেখো তাহলে বুঝতে পারবেনা ! কিন্তু একজন ম্য়েয়ে আর একজন মা হয়ে আমি তোমাকে সেই সব জিনিস দেখাতে পারব না !! একে নিয়ে যাও যদি মেডিকেলে গেলে ওরা বাঁচাতে পারে !!
খুবই গম্ভীর মুখে জয়ন্ত সিকদার বেরীয়য়ে এলেন ! নিবারণ বাবু আপনাকে আমার সাথে থানায় গিয়ে একটা ডায়রি করতে হবে ! তার আগে চলুন এম্বুলেন্স এসে গেছে ! আগে মেডিকেলে যাওয়া যাক ! পুলিশ ছাড়া ওরা ওকে ভর্তি করবে না ! আপনি আমার সাথে আমার গাড়িতে উঠুন !
আনন্দ সেন আর মহামায়া দেবী মেয়েটির সাথে এম্বুলেন্সে উঠে বসলো ! ডাক্তার সেন আর মহামায়া দেবী আগে উঠে মেয়েটির শ্রুসশ্যার কাজে লেগে রইলেন ! বাকি লোকেরা পুলিশের জিপে এগিয়ে চলল মেডিকেলের দিকে !!
মেডিকেল কলেজে মেয়েটিকে ভর্তি করার পর জয়ন্ত সিকদার নিবারণ হালদার আর আনন্দ সেনকে নিয়ে থানায় চলে গেলেন রিপোর্ট লেখানোর জন্য ! নিবারণের সাথে যারা ছিলেন তারা আর মহামায়া দেবী হাসপাতালে রইলেন ! ডাক্তারেরা মহামায়া দেবীকে আলাদা করে দেকে বললেন !
" দেখুন ম্যাডাম মেয়েটির ইউট্রাস টিতে যে রকম জখম হয়ে গেছে তাতে মনে হচ্ছে ইউট্রাস কেটে বাদ দিতে হবে ! কিন্তু আমরা ততক্ষণ কিছুই করব না যতক্ষণ না মেয়েটির জ্ঞান ফেরে ! তবে আশা খুবই কম ! আমরা আমাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করব ! আপনারা এখন অপেখ্যা করুন ! কিছু লাগলে জানাবো !! বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার ডাক পড়ল মহামায়া দেবির !
- দেখুন মাসীমা আপনার মেয়েকে বাঁচাতে গেলে এখুনি একটা অপারেসন করতে হবে ! আপনি এই বন্ড পেপার তে সই করে দিন ! কারণ অপারেসন হলেই যে আপনার মেয়ে বাঁচবে তার কোনো গ্যারান্টি আমরা দিতে পারব না ! আমরা শুধু চেষ্টা করছি ! আর মেয়েটির ব্লাড গ্রুপ AB+ তারাতারি আপনারা ব্লাডের ব্যবস্থা করুন !!
মহামায়া দেবী বলে উঠলেন দেখুন আপনারা অপারেসন করতে চাইছেন সেটা খুব ভালো খবর কিন্তু আমি তো আপনাদের বন্ড পেপারে সই করতে পারব না !
ডাক্তার অবাক হয়ে জিজ্ঞাস্সা করলেন ! "আপনার মেয়ে আর আপনি সই করবেন না?? তাহলে আমরা তো অপারেসন করতে পারব না !!"
- আপনারা ভুল বুঝছেন ! আমি ওই মেয়েটির মা নই ! আমি ডাক্তার আনন্দ সেনের মা ! আমার ছেলেই ওই মেয়েটিকে রাস্তা থেকে তুলে এনে আপনাদের হাসপাতালে ভর্তি করেছে ! আমি শুধু মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে ওর সাথে এসেছি যাতে করে একজন নার্স হিসাবে মেয়েটির সুশ্রসা করতে পারি ! যতক্ষণ না আপনাদের চিকিত্সা চালু হয় ! আপনারা চিকিত্সা শুরু করে দিয়েছেন আর আমার কোনো কাজ নেই ! তবুও এখানে বসে আছি এই কারণে কারণ আমিও একজন মা ! একজন মা কোনো ভাবেই কোনো বছর কষ্ট সজ্জ্হ করতে পারে না ! যতক্ষণ আপনারা মেয়েটির জ্ঞান ফেরার সংবাদ দেবেন ততক্ষণ আমি এখানে বসে থাকব !!
ডাক্তার সব শুনে চিন্তায় পরে গেলেন ! তাহলে আমরা কি ভাবে অপারেসন করব?? বন্ড পেপারে সই না হলে যে আইনত আমরা অপারেসন করতে পারি না !! ওর কোনো অভিভাবক সঙ্গে নেই?
- হ্যা ওর বাবা এসেছেন কিন্তু এখন তো তিনি নেই ! তিনি তো আমার ছেলের সাথে থানায় গেছেন ! দেখুন যদি থানাতে ফোন করে ওনার সাথে কথা বলা যায়??
ঠিক আছে দেখছি আমরা কি করা যায় !! বলেই ডাক্তার ফোন করতে শুরু করলেন ! থানা থেকে জানানো হলো যে ওনারা বেরিয়ে গেছেন কিছুক্ষনের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছে যাবেন !! কিন্তু ডাক্তার অতক্ষণ অপেখ্যা করতে নারাজ ! কারণ তারাও রীতিমত আশঙ্কিত ছিল মেয়েটির জীবন নিয়ে !!
- মাসিমা ! আমরা যদি এই মুহুর্তে অপারেসন না করি তাহলে হয়ত মেয়েটিকে আর বাঁচানো যাবে না ! কি করা যায় বলুন তো??
- ঠিক আছে দিন কোথায় সই করতে হবে ! আমি সই করে দিচ্ছি !! যদি একটা প্রান একটা সইয়ের জন্য বেঁচে যায় তো আমার সই করতে কোনো আপত্তি নেই !
- কিন্তু যদি মেয়েটি না বাঁচে? আর ওর পরিবারের লোকেরা যদি আপনাকেই দোষী সাবস্ত্য করে ওর মৃত্যুর জন্য?? তখন কি করবেন??
- দেখুন ডাক্তার বাবু আমি একজন মা হয়ে যদি একটা প্রান বাঁচানোর চেষ্টা না করি তাহলে যে মায়েরা কলঙ্কের ভাগিদারি হবেন !! যদি মেয়েটি বেঁচে যায় তাহলে তো আর সেটা হবে না ?? নিন আপনি অপারেসন শুরু করুন !! আমি দেখি ব্লাডের যোগার করি !! বলে মহামায়া দেবী সই করে বাইরে বেরিয়ে এলেন !
মেয়েটির সাথে যে সমস্ত লোক ছিল তাদের সমস্ত কথা বললেন ! তারা শুনে আপ্লুত হয়ে শ্রধ্যায় মহামায়া দেবির পা ছুঁয়ে প্রনাম করলো ! একজন বলেই ফেলল " আপনি সত্যি শাখ্যাত মহামায়া !! তাই তো আপনার ছেলেও হয়েছে ভগবান !! "
সবই ঠিক থাক চলছিল কিন্তু বিপদ দেখা দিল রক্তের জন্য ! যে কজন এসেছিল তাদের কারুরুই ব্লাড গ্রুপ AB+ নয় ! কি করা যায় ! মহামায়া দেবী বললেন " দেখুন আমার রক্ত কিন্তু একই গ্রুপের আপনারা আমার রক্ত নিতে পারেন ! কিন্তু ডাক্তারেরা মানা করলেন ! আপনার বয়স হয়ে গেছে তাই আপনার রক্ত নেওয়া যায় না !
যখন সবাই চিন্তিত ঠিক তখনি ডাক্তার আনন্দ সেন আর নিবারণ বাবু জয়ন্ত সিকদারের সাথে ফিরে এলেন ! সমস্ত শুনে জয়ন্ত আর আনন্দ দুজনে রক্ত দিলেন ! অপারেসন মোটামুটি নির্বিঘ্নে মিটে গেল ! ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ৭২ ঘন্টা না গেলে কিছুই বোঝা যাবে না !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন