"একটা থাপ্পড় খাবি ফাজিল!!",
চেঁচিয়ে উঠে
নিঝুম। সাথে
সাথে অবশ্য
নিবিড়ের উত্তরটাও
পেয়ে যায়,"তোর একারই
হাত আছে,
তাই না?"
এরপর মারামারি,
আর আরও
আরও ঝগড়া।
ঝগড়া করতে
করতে দুজন
ভুলেই যায়
যে আসলে
ঝগড়াটা কী
নিয়ে শুরু
হয়েছিল। কিছুক্ষণ
পরেই দেখা
যায় ভিন্ন
দৃশ্য। কার
কী একটা
কথায় হাসির
ফোয়ারা ছুটেছে
একটু আগের
ঝগড়া রত
দুই কিশোরকিশোরীর
মাঝে। হ্যাঁ,
ওরা এরকমই।
নিবিড় আর
নিঝুম। এই
ঝগড়া, এই
ভাব, এই
রোদ, এই
বৃষ্টি। এদেরকেই
হয়তো bestfriend বলা চলে। সেদিন বাড়ি
ফেরার সময়
বের হয়ে
গাড়ি খুঁজে
না পেয়ে
নিঝুমের মা
হঠাৎ নিবিড়কে
বলে বসেন,"বাবা যাও
তো তোমার
girlfriend এর সাথে যেয়ে গাড়িটা কই
দেখো তো!"
কথা শুনে
দুজনেই হা।
বলে কী
মহিলা! এদিকে
নিবিড়ের মাও
হেসে দিয়েছেন
এই কথা
শুনে। কিন্তু
যাদের নিয়ে
এই রসিকতা,
তাদের কারো
চেহারাতেই খুশির ছাপ দেখা গেল
না। বরং
আবার একচোট
ঝগড়া হয়ে
গেল এই
নিয়ে।
নিবিড়-"ওই তুই
আমার girlfriend হইলি কবে?? তুই আমার
girlfriend না।"
নিঝুমও
সমান তেজে
উত্তর দেয়-"এহ আমার
বয়ে গেছে
তোর girlfriend হতে!"
ভাগ্যক্রমে
তখনই গাড়িটা
পেয়ে যায়
ওরা। মারামারিটা
তখনকার মতো
স্থগিত থাকে।
যে যার
বাসায় চলে
যায় মায়ের
সাথে।
নিঝুম
আর নিবিড়।
সেই ছোট্টবেলা,
মানে নার্সারিতে
পড়ার সময়
থেকেই বন্ধু।
বন্ধু না
বলে শত্রু
বলাই হয়তো
ভালো, কারণ
এত ঝগড়া
আর মারামারি
শত্রুরাও করে
কিনা সন্দেহ।
তারপরও ওরা
কিন্তু বন্ধু!!
ছোটবেলায় একই
স্কুলে পড়ার
সুবাদে দুজনের
মধ্যে একটা
"বন্ধুত্ব" গড়ে উঠে
তাদের মায়েদের
কল্যাণে। মাঝে
স্কুল বদলের
কারণে নিবিড়
আর নিঝুমের
যোগাযোগে ভাটা
পড়লেও মায়েদের
সম্পর্ক অটুট
ছিল। তারপর
নিবিড়ের বাবা
হঠাৎ করে
মারা যাওয়ার
পর যোগাযোগটা
আবার বেড়ে
যায় দুজনের,
কারণ দুই
বাড়ির মানুষদের
যাওয়া আসা
বেড়ে যায়।
উপরোক্ত কথোপকথনটি
ওদের সেই
আবার বন্ধুত্বের
সময়ের।
ছোটবেলায়
সাইকেল চালানর
কারণে নিঝুম
নিবিড়ের থেকে
একটু লম্বা
হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এখন
নিবিড়ই বেশ
লম্বা। তবে
নিঝুম সে
যে লম্বা
ছিল এটা
শুনাতে ছাড়ে
না যখনই
নিবিড় ওকে
খাটো বলে
খেপায়। বেশ
দেখতে নিবিড়।
অন্তত অন্য
মেয়েদের চোখে
তো বটেই।
চশমার ওপাশে
চোখ দুটো
বড় কাছে
টানে। অনেক
মেয়ে আবার
তার উপর
ফিদাও! ভদ্র
ছেলে বলে
সুনাম আছে
নিবিড়ের। নিঝুম
আবার ঠিক
উলটো। ভালো
দেখানর ধারেকাহেও
নেই। তবে
খুব সেনসিটিভ
নিঝুম। খুব
অল্পেই যেমন
রেগে যায়,
তেমনি খুব
অল্পতেই অসম্ভব
খুশি হয়ে
যায়। নিঝুমের
রাগ মানে
চুপ হয়ে
যাওয়া, খুব
রাগ হলে
সে চুপ
হয়ে যায়,
যার উপর
রাগ তার
সাথে কথা
বলেনা। আর
যতসব অদ্ভুত
খেয়ালের সমাহার
নিঝুম। বন্ধুদের
মতে,"পাগল!" আহামরি চেহারা না
নিঝুমের, মডার্নও
না, বরং
একটু ব্যাকডেটেডই
বলা চলে
নিঝুমকে। সুতরাং
তার কোন
স্তাবক থাকার
প্রশ্নই উঠে
না। এতে
ওর কিছু
যায় আসেও
না। তার
কথা, প্রেম
মানুষে করেনা।
নিবিড়ের উপর
যতই মেয়ে
ফিদা হোক
না কেন,
নিঝুম কিন্তু
ফিদা হওয়ার
মতো কিছু
দেখতে পায়না
কখনও। আসলে
জ্ঞান হওয়ার
পর থেকেই
যে মুখ
দেখে আসছে,
সে মুখে
অচেনা কিছু
দেখা সম্ভব
ছিলনা নিঝুমের
জন্য। নিবিড়কে
নিয়ে তার
একটাই আফসোস-"ইসসি রে!
নিবিড় টা
আমার থেকে
লম্বা হয়ে
গেল ধুর!!!"
নিবিড়
যে কোচিঙে
পড়ে, মোটামুটি
নিঝুমের অনিচ্ছাতেই
তার মা
মেয়েকে ওই
কোচিঙে ভরতি
করে দিলেন।
প্রথমদিনেই নিবিড় একটা অদ্ভুত কাণ্ড
করে বসে।
নিঝুমের মা
গেছেন ভিতরে
টিচারের সাথে
কথা বলতে।
ওরা বাইরে
গল্প করছে।
গল্প আর
কী, খুনসুটি
আর একে
অন্যের পিছে
লাগা। কথা
বলতে বলতে
হঠাৎ নিবিড়
নিঝুমের একটু
কাছে সরে
আসে। নিঝুম
ভয় পেয়ে
যায়, আর
কোন চিন্তা
মাথায় আসার
আগে এটা
মাথায় আসে
ওর যে
মারবে নাকি
রে বাবা!!!
আগের দিন
কি কোন
ঝগড়া আন্সল্ভড
ছিল নাকি!!!
কিন্তু নিবিড়
কিছু করেনা।
কথা বলে
যায় আগের
মতই। নিঝুম
এদিকে একটা
গাড়ির সাথে
হেলান দিয়ে
দাঁড়ানো, পিছাতেও
পারছেনা। বড়ই
অস্বস্তিকর অবস্থা। নিবিড়কে বলে,"ওই
তুই সরে
দাঁড়া, মানুষ
অন্য কিছু
ভাববে।" নিবিড় বলে, "ভাবুক।" সরেনা
সে। নিঝুম
বুঝে বন্ধু
নিশ্চয়ই কোন
মেয়েকে জেলাস
করানোর চেষ্টা
করছে, পাশেই
তো মেয়েদের
একটা ক্লাস
দেখা যাচ্ছে,
সেখান থেকে
ওদের সরাসরি
দেখা যায়।
এই সময়
কোচিং থেকে
নিবিড়ের এক
বান্ধবী বের
হয়। নিঝুম
ফাজলামির সুযোগ
পেয়ে যায়।
বলে,"ওই দেখ তোর girlfriend." নিবিড় হেসে দেয়, "ও
আমার girlfriend?" বলে সেও
যোগ দেয়
খুনসুটিতে নিঝুমের সাথে।
নিবিড়ের
মোবাইল থাকলেও
নিঝুমের নেই।
কোচিঙে ভর্তি
হয়েছে দেরি
করে। পিছিয়ে
গেছে তাই
একটু নিঝুম।
নিবিড়ের সাহায্য
দরকার। তাই
ল্যান্ডলাইনে ফোন করে নিঝুম দরকার
হলে। রোজই
কথা হয়
বলতে গেলে।
কথার বেশিরভাগ
জুড়েই থাকে
পড়াশুনো। আর
মাঝে মাঝে
নিঝুমের কোন
বান্ধবীর কোন
ছেলেকে পছন্দ
হলে নিঝুমের
নিবিড়কে অনুরোধ,"তুই না
ভালো? দে
না একটু
অমুকের খোঁজটা
বের করে
প্লিস প্লিস
প্লিস!" এরকম এক সন্ধ্যায় কথা
বলছে দুজন।
হঠাৎ কী
নিয়ে কথা
কাটাকাটি শুরু
হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে
নিঝুম বলে,"আমি আর
জীবনে তোর
সাথে কথা
বলবনা!" এর উত্তরে নিবিড় যা
বলে, তা
শুনে কয়েক
সেকেন্ডের জন্য থ হয়ে থাকে
নিঝুম-"হ্যাঁ, আমার সাথে কথা
কেন বলবা??
যাও যেয়ে
শিহাবের সাথে
কথা বলগে
যাও!"
শিহাব!
চমকে উঠে
একটু নিঝুম।
শিহাবের কথা
এখানে কেন
আসলো? হ্যাঁ,
শিহাব বলতে
একটি ছেলের
খোঁজ সে
নিবিড়ের কাছে
চেয়েছিল বটে,
তবে সে
তো তার
বান্ধবীর জন্য।
সে নিজে
তো শিহাবকে
চেনেইনা, কথা
বলতে যাওয়া
তো বহুদুরের
ব্যাপার। তাহলে?
নিবিড় এভাবে
বলল কেন?
"দুত্তোর! ঝগড়া লাগানোর আর জায়গা
পায়না! যত্তসব!",
ভেবে আবার
পড়ায় মন
দেয় নিঝুম।
দিন
যায়। কথা
আজকাল ল্যান্ডলাইনের
বাইরেও ডালপালা
মেলতে শুরু
করেছে। নিঝুম
বাসার কারো
মোবাইল থেকে
নিবিড়কে মেসেজ
দেয়, নিবিড়
তা রিপ্লাই
করে। তবে
কেন যেন
আজকাল মায়েদের
অগোচরেই চলছে
এই মেসেজিং।
কথার বিষয়বস্তু
কিন্তু একই
আছে। ইতিমধ্যে
নিঝুমের গুটিকয়েক
বান্ধবীর সাথে
মোবাইলে পরিচয়
হয়েছে নিবিড়ের।
তবে তাদের
সাথে কী
কথা বলে
নিবিড়, তা
কখনো জানতে
চায়না নিঝুম।
মা'রা খুব
ভালো বন্ধু
হওয়ার কারণে
নিবিড়দের বাসায়
প্রায়ই যাওয়া
হয় নিঝুমদের।
এমনই একদিন
গেছে মায়ের
সাথে। নিবিড়
বাসায় নেই।
নিঝুম আবার
বরাবর একটু
ছটফটে। এক
জায়গায় সুস্থির
হয়ে বসে
থাকা যেন
তার ধাতে
নেই। এই
অস্থিরতার কারণে মুভি পর্যন্ত দেখেনা
সে। যাই
হোক, নিবিড়
তো নেই,
কী করবে
এখন নিঝুম?
খানিকক্ষণ এঘর ওঘর ঘুরাঘুরি করে
চোখ পড়ে
নিবিড়ের টেবিলের
দিকে। কাগজপত্র
স্তুপ হয়ে
আছে। "ইস কী অগোছালো হয়ে
আছে!", ভাবে নিঝুম। ভাবখানা এমন,
নিজে যেন
খুব গুছানো
মেয়ে! তবুও,
নিবিড়ের টেবিলটা
সে গুছানোর
চেষ্টা করে।
কিন্তু কাগজ
ঘাটাই সার
হয়, গুছানো
আর হয়না,
অত ধৈর্য
কোথায় তার?
যেখানকার কাগজ
সেখানে রেখে
দেয় আবার।
ইতিমধ্যে নিবিড়
এসে গেছে।
সময় কাটানো
আর কষ্ট
হয়না নিঝুমের।
পরদিন।
আবার কথা
হচ্ছে নিবিড়ের
সাথে। নিঝুমের
নোট দরকার
একটা। নিবিড়
বলে,"দাঁড়া খুঁজি।" নিঝুমের হঠাৎ
মনে পড়ে
যায়, নোটখানি
তো সে
কালই দেখে
এসেছে নিবিড়ের
টেবিলে। জানায়
সে কথা,"অ্যাই তোর
টেবিলে একটা
খাম আছে
না? তার
নিচে দেখ
নোটটা আছে।"
নিবিড় বলে,"তুই আমার
টেবিলে হাত
দিয়েছিলি?" নিঝুম-"হু দিয়েছি তো।"।সাথে
সাথে কেমন
রেগে যায়
নিবিড়,"কেন?? তুই আমার টেবিলে
হাত দিলি
কেন? আর
কখনো ধরবিনা
আমার জিনিস।
যা তুই
আর আমার
বাসায়ই আসিস
না কখনো।"
অভিমানী
নিঝুম। নিবিড়ের
এমন কথায়
কষ্ট পায়।
তবে কষ্টটা
চেপে রাখে
নিজের ভিতরেই।
মুখে কিছু
বলেনা, কিন্তু
এরপর বহুদিন
আর নিবিড়ের
বাসায় যায়নি
সে। আর
মনে মনে
প্রতিজ্ঞা করে,আর কখনো নিবিড়ের
কোন কিছুতে
সে হাত
দেবেনা।
আকাশ।
তালঢ্যাঙা একটি ছেলে। একই স্যারের
বাসায় পড়তে
যেয়ে নিঝুমের
সাথে বন্ধুত্ব
হয়েছে তার
নতুন নতুন।
নিঝুম নতুন
বন্ধু পেয়ে
মহাখুশি মনেই
নিবিড়কে জানায়
আকাশের কথা।
কিন্তু কোন
এক অজ্ঞাত
কারণে নিবিড়
আকাশকে কোনমতেই
সহ্য করতে
পারছেনা। কেন,
তা হাজার
জিগ্যেস করেও
কোন সদুত্তর
পায়নি নিঝুম।
নিবিড়ের বারবার
সেই একই
কথা, "আকাশ ভালো না, ওকে
আমার ভালো
লাগেনা।" আকাশের তরফ থেকেও নিবিড়ের
প্রতি খুব
একটা পছন্দনীয়
মনোভাব দেখা
যায় না।
অথচ দুজনের
কেউ কাউকে
চিনেনা, জীবনে
দেখেওনি, নামও
শুনেনি। ওদের
মাঝে শুধু
নিঝুমই কমন।
একে অপরের
কথা তারা
নিঝুমের থেকেই
জেনেছে। সেদিন
মা'র
অনেক চাপাচাপির
পর নিঝুম
যেতে রাজি
হয় নিবিড়ের
বাসায়। আরও
দু-একজন
বন্ধু বান্ধব
আসে ছোটবেলার,
আড্ডা হয়।
সব ছাড়িয়ে
নিবিড়ের বক্তব্য
শুনে গা
টা জ্বলে
উঠে নিঝুমের-"আকাশ যে
তোর boyfriend না তার প্রমাণ দে।"
কিন্তু নিজেকে
সামলে নেয়
সে। বলে,"আমার boyfriend হলে
সবার আগে
তোরই জানার
কথা নিবিড়।"
নিবিড় তবুও
মানেনা। বলে,"প্রমাণ কর।"
নিঝুম বলে,"কীভাবে প্রমাণ
করব আমি?
সমস্যা কোথায়
তোর??? আমার
এমন কেউ
থাকলে তুই
জানবিনা এটা
কেমন করে
হয়??" বলে অন্য প্রসঙ্গে চলে
যায়।
ফেরার
সময় সেদিন
একটা অভাবনীয়
ঘটনা ঘটে।
ওদেরই এক
বান্ধবী, লিসার
ছোট্ট ভাগ্নিকে
নিয়ে এসেছিল
সে নিবিড়ের
বাড়িতে আসার
সময়। ভীষণ
কিউট বাচ্চাটাকে
নিঝুমের ভালো
লেগে যায়।
ফেরার সময়
মা'রা
নেমে গেছেন
আগে, নিঝুম
লিসা আর
নিবিড় গল্প
করতে করতে
নামে। সিঁড়ি
দিয়ে নামতে
নামতে বাচ্চাটার
গালে ছোট
করে একটি
চুমু এঁকে
দেয় সে,
গাল টিপে
দেয়। নিবিড়
একটু উপরে
ছিল। সে
নিঝুমকে ডাকে,"এই তুই
একটু উপরে
আয় তো।"
অবাক হলেও
চুপচাপ নিবিড়ের
কথা মানে
নিঝুম। উপরে
যায় নিবিড়ের
কাছে,"কী? ডাকলি কেন?"
"ওই জায়গায় আকাশ হলে
ভালো হত।
না?", নিঝুমের কানের কাছে মুখ
এনে বলে
নিবিড়। প্রচণ্ড
রাগে একটা
মিনিট কোন
কথা বলতে
পারেনা নিঝুম।
এরপর সিঁড়ির
আধো আলো
আধো অন্ধকারে
"ঠাস" করে একটা শব্দ। আর
একটা কথাও
না কারো
মুখ থেকে।
দুদ্দাড় করে
সিঁড়ি বেয়ে
নেমে চলে
যায় নিঝুম।
বাসায় ফিরে
একটা মেসেজ
দেয় নিবিড়কে,"তুই আমাকে
এরকম ভাবতে
পারলি?" কোন রিপ্লাই আসেনা সেই
মেসেজের। চড়
খেয়ে হতবাক
হয়ে গিয়েছিল
নিবিড়। আজ
পর্যন্ত কেউ
তাকে এত
নীরব, অথচ
এত সশব্দ
প্রতিবাদ জানাতে
পারেনি কোন
বিষয়ে। আর
নিঝুম কিনা...?
তবে একটা
ব্যাপারে সিওর
হয়ে যায়,
না নেই
কিছু নিঝুমের
মনে কারো
জন্য। জানেনা
কেন, কেমন
একটা খুশির
বাতাসও ছুঁয়ে
যায় চড়
খেয়ে অপমানে
জ্বলতে থাকা
গালটাকে। তবে
পরক্ষনেই আবার
সেই জ্বালাটা
ফিরে আসে
নিঝুমের মেসেজ
দেখে। "চড় মারলি কেন তুই
আমাকে??"-লিখতে যেয়েও লিখলনা। নিঝুমের
সাথে আর
কোন কথা
বলবেনা, ঠিক
করে সে।
দু'দিন যায়।
তিনদিন। কোচিঙেও
কোন দেখা
নেই, বাসার
সবাইকে লুকিয়ে
মোবাইলও চেক
করে নিঝুম।
কোন মেসেজ
নেই।
"চড়টা কি বেশি জোরে
হয়ে গেছে?
আমার হাত
তো আবার
চড় মারার
জন্য বিখ্যাত।...আচ্ছা বেশি
রিঅ্যাক্ট করে ফেললাম নাকি? নাহ
যা করেছি
একদম ঠিক
করেছি। আনটি
কে ডেকে
যে মার
খাওয়াইনি, এটাই বহুত। কিন্তুহ...শালার
পেটে পেটে
এত রাগ
কেন? ব্যাটা
তুই তো
দোষ করেছিস
বলেই থাপ্পড়টা
খেলি, এখন
নিদেনপক্ষে সরি তো বল! তা
না, বাবুর
উল্টা আমার
উপরেই রাগ
দেখান হচ্ছে।
দেখাক গা।
who cares?!"- এমনি সব সাতপাঁচ
ভাবে নিঝুম,
ফোনটা হাতে
নিয়ে মেসেজ
করতে যেয়েও
রেখে দেয়।
চারদিনের
দিন আর
ধৈর্য রাখতে
পারেনা নিঝুম।
একটা গুরুগম্ভীর
মেসেজ পাঠিয়েই
দেয়,"তুই কি আমার সাথে
কথা বলবি?
হ্যাঁ, নাকি
না?" এরপর নিবিড় আর রিপ্লাই
না করে
কীভাবে? জানে
তো মেয়ের
জেদ। যদি
না বলে,
জীবনেও আর
কথা বলতে
আসবেনা তার
সাথে। মাঝ
থেকে কোথাকার
কোন আকাশের
জন্য এতদিনের
বন্ধুকে হারাতে
হবে। তারচেয়ে
রিপ্লাই করেই
দেওয়া যাক!
তবে... চড়
মেরেছে যে
সেই রাগটাও
ভোলা যাচ্ছেনা।
থাক কী
আর হবে
রাগ করে,
যে মেয়ে
রে বাবা!
"একটু রাগ দেখিয়েই রিপ্লাই করি
নাহয়, দুধের
স্বাদ ঘোলে
তো মিটুক!",
এই ভেবে
রিপ্লাই করে
দেয় নিবিড়-"হু।" ওপাশ
থেকে রিপ্লাই
আসে-" গুড। কিন্তু আমার সাথে
রাগ দেখিয়ে
লাভ নেই।
তোর এই
রাগ আমি
পরোয়া করবনা।
আর কোনদিন
ওই রকম
কথা বললে
হাঁটুর মালাইচাকি
ভেঙ্গে হাতে
ধরিয়ে দিব
মনে রাখিস।"
আহা! কোথায়
ভেবেছিল থাপ্পড়
মারার জন্য
স্যরি টরি
বলে মেসেজ
দিবে, তা
না, এ
কী! "হে ঈশ্বর! এই মেয়ে
এত দস্যি
কেন??!", ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বের
হয় বুক
থেকে।
আবার
কাটতে থাকে
সময়। পুরনো
ঝগড়া ভুলে
বন্ধুত্ব আবার
এগিয়ে যায়।
তবে আকাশের
প্রতি বিদ্বেষের
কোন পরিবর্তন
হয়না নিবিড়ের।
বরং দিন
দিন বেড়েই
যায় আকাশকে
নিয়ে নিঝুমের
উচ্ছাস দেখে।
তবে সেদিনের
মতো নিঝুমকে
কষ্ট দিয়ে
কথা বলেনা
আর নিবিড়,
সে খুব
ভালভাবেই জানে
এখন যে
নিঝুমের এই
শিশুসুলভ উচ্ছাস
শুধুই নতুন
বন্ধু পাওয়ার
আনন্দ আর
নিবিড়কে সব
বলার আগ্রহ।
তবুও, মনের
কোথায় যেন
খচখচ করে।
কেন করে,
নিজেকে জিগ্যেস
করেছে বহুবার।
উত্তর-জানিনা,
বুঝিনা, বুঝতে
চাইও না,
আমি আকাশকে
সহ্য করবনা
ব্যস। আকাশের
প্রতি ক্ষোভ
প্রকাশও করে
ফেলে মাঝে
মাঝে, কিন্তু
নিঝুম আর
পাত্তা দেয়না,
তার মতে,
বন্ধু বন্ধুই।
নিঝুম ভাবে,
নিবিড় হয়তো
মনে করছে
আকাশ তার
বন্ধুত্বকে কেড়ে নিবে। কিন্তু নিঝুমের
জীবনে নিবিড়ের
যে জায়গা,
সেখানে আকাশ
তার হাজার
ভালো বন্ধু
হলেও বসতে
পারবেনা। নিবিড়
তা বুঝুক
না বুঝুক,
সে তো
জানে নিবিড়
তার সবচেয়ে
ভালো বন্ধু,
bestfriend. তার সিংহাসন তারই থাকবে। তবে
খুঁটিনাটি মান অভিমান যে চলেনা,
তা না।
এই তো
সেদিনই নিঝুমকে
আবার রাগিয়ে
দিল নিবিড়।
না, আকাশকে
নিয়ে নয়।
বান্ধবীর সাথে
কী নিয়ে
লেগেছে নিঝুমের,
তা নিঝুমকে
জিগ্যেস করায়
উত্তর পায়নি।
পরে আবার
নিঝুম একটু
দরকারে কথা
বলতে আসলে,প্রশ্ন করলে
নিবিড় বিরক্তি
দেখায়। পরে
জানতে পারে
সেদিন নিঝুমের
মন অনেক
খারাপ ছিল
বলে উত্তর
দেয়নি, কারণ
বৃষ্টি তার
অনেক ভালো
বন্ধু, নিবিড়ের
মতো না
হলেও কাছাকাছি।
তার সাথে
কিছু হলে
মন খারাপই
লাগে। কিন্তু
নিবিড় তাকে
এভাবে ভুল
বুঝবে সে
ভাবেনি। একটু
মুখভার করে
নিঝুম। মেসেজ
দিয়ে দেয়,"আমার ভুল
হয়েছে। আর
কোনদিন তোকে
কিছু জিগ্যেস
করবনা। স্যরি
বিরক্ত করার
জন্য। বাই"। নিবিড়
ভুল বুঝতে
পেরে অনেক
স্যরি বলে
মেসেজ দিলেও
উত্তর দেয়
না। পরদিন
কোচিঙে অঙ্ক
পরীক্ষা ছিল।
নিবিড়ের সাথে
কথা বলেনি
বলে জানেনা
সে আসবে
কিনা। নিঝুম
নিজের ক্লাস
টাইমে যেয়ে
বসে থাকে।
জানালার ধারের
সীট তার
খুব পছন্দ।
সেখানেই বসে
তাকিয়ে থাকে
বাইরে। এমন
সময় দেখতে
পায় নিবিড়
আসছে। বাইরে
থেকে নিঝুমকে
দেখতে পেয়ে
হাসি দেয়
একটা। নিঝুম
অন্যদিকে তাকায়।
ক্লাসে ঢুকে
আর কোনদিকে
না যেয়ে
সোজা নিঝুমের
কাছে এসে
বসে পড়ে।
মাথায় আদুরে
একটা চাঁটি
মেরে আরও
আদুরে গলায়
বলে,"তুই এমন বাচ্চাদের মতো
রাগ করিস
কেন রে?"
ব্যস, রাগ
গলে জল।
"মোটেও আমি বাচ্চাদের মতো রাগ
করিনা", প্রতিবাদ করতে যেয়ে হেসে
ফেলে নিঝুম।
মান অভিমানটা
বড্ড বেশিই
যেন তাদের,
তারপরও বন্ধুত্বটা
বড় মধুর
লাগে,নিবিড়ের
ফার্স্ট বেঞ্চ
আর নিঝুমের
লাস্ট বেঞ্চ
মিলেমিশে পরীক্ষা
দিতে দিতে
এরপর পুরো
সময় জুড়ে
এই কথাই
ভেবে চলে।
"ওহহো আকাশ, তোকে না
কতবার বলেছি
ফোন নেই
আমার? তাও
বারবার ফোন
দিসনা কেন
বলার মানে
কী?", খাতায় কুনোব্যাঙের ছবি আঁকতে
আঁকতে আকাশের
প্রতি একটু
ঝাঁঝিয়েই ওঠে
নিঝুম।
-"তোর সাথে কথা বলতে
ভালো লাগে...
ব্যাঙের ঠ্যাং
ঠিক কর,
বাঁকা হয়েছে",
আকাশ বলে।
-"কই? খাতা বাঁকা......... তোদের
সবার ভালো
লাগানোর দায়িত্ব
নিয়েছি নাকি
আমি??"
-"আহা দোস্ত এমন করিস
কেন? আসলে
হয়েছে কী,
ওই ব্যাপারটা
নিয়ে একটু
কথা বলতে
চাচ্ছিলাম, তাই বলছিলাম তোর ফোন
থাকলে ভালো
হত, ফোন
করতে পারতি
অথবা আমি
ফোন করতে
পারতাম তোকে।"
-"ও ওই ব্যাপার? তো
সেটা আগে
বলবেই পারতি।
সাতসকালে উঠে
ফোন দিস
না কেন
রেকর্ডটা গ্রামোফোনে
না চাপালেও
তো পারতি।
আমি তো
আসিই, তখন
যা বলার
বললেই হয়।
আর তুই
কীভাবে দাবি
করিস তোকে
আমি ফোন
দিব? জীবনে
দিয়েছি? নিবিড়কেই
আমি খুব
দরকার লাগলে
ফোন করি,
তাও ল্যান্ডলাইনে।
আর তুই
চাস আমি
তোকে এমনি
এমনি ফোন
দিব!"
-"আবার নিবিড়!"
-"হ্যাঁ নিবিড়। কেন তোর
কোন সমস্যা
হয়েছে নিবিড়ের
কথা বলায়??
ভুলে যাস
না ও
আমার সবচেয়ে
ভালো বন্ধু,
তোর সাথে
বন্ধুত্বের অনেক আগে থেকে ওর
সাথে বন্ধুত্ব...বুঝিনা বাবা
একজন আরেকজনের
নাম শুনলেই
এমন খেপে
যাস কেন
তোরা!"
-"আচ্ছা হয়েছে হয়েছে, এখন
আমার কথা
শুনবি তো
নাকি?"
-"হু বল তোর কী
কথা।"
এস
এস সি
পরীক্ষা সামনেই।
স্কুল শেষ,
পরীক্ষা পূর্ববর্তী
প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন স্যার ম্যাডামদের
বাসায় আর
কোচিঙে দৌড়াদৌড়ি
চলছে খুব
ছাত্রছাত্রীদের। তেমনই এক বায়োলজি স্যারের
ভোর সাতটার
ক্লাসে বসে
উপরের কথাবার্তাগুলো
চলছে নিঝুম
আর আকাশের।
ঘুম ভেঙ্গেই
মেঘলা আকাশ
দেখে মনটা
বেশ উড়ু
উড়ু ছিল
নিঝুমের। কিন্তু
আকাশের প্রশ্ন
শুনে মেজাজটা
যায় বিগড়ে।
নিঝুম ক্লাসে
ঢুকার সাথে
সাথে আকাশের
প্রশ্ন-"তুই আমাকে ফোন দিস
না কেন?"
ব্যাটা তোর
কাছে আমি
ফোন করব
চুক্তিপত্রে সই করেছি নাকি!-বলতে
যেয়েও বলেনা
নিঝুম। সকাল
সকাল মুড
অফ করার
ইচ্ছে হচ্ছিলনা।
তবে মেজাজটা
খারাপ হয়
ঠিকই। কিন্তু
ভালো হতেও
সময় লাগেনা
কালো মেঘে
ঢাকা আকাশের
ছায়ায় মন
হারাতে হারাতে
আর বন্ধু
আকাশের সাথে
পরবর্তী ক্লাসটাইম
টকশো করতে
করতে।
আজকাল
নিবিড় বেশ
বাবুয়ানা দেখানো
শুরু করেছে
নিঝুমের সাথে।
কোচিঙের ক্লাস
শেষ। সুতরাং
দেখাও হয়না।
সামনে পরীক্ষা,
বাসায়ও যাওয়া
হয়না তেমন
একটা। কিন্তু
মেসেজ ঠিকই
চলে দুজনার।
এখন অবশ্য
পড়াশুনোই পুরো
জায়গা দখল
করে নেই।
অন্য কথাও
হয়। তার
মধ্যে নিবিড়ের
দখলদারিত্ব প্রকট। কিছুদিন হল তাদের
মধ্যে মিসডকল
মিসডকল খেলা
শুরু হয়েছে।
খেলাটা যে
কে আগে
শুরু করেছে,
বলা মুশকিল।
হয়তো নিঝুমই।
নিঝুম হঠাৎ
হঠাৎ ল্যান্ডলাইন
থেকে নিবিড়ের
মোবাইলে ফোন
করে একটা
রিং বাজলেই
ছেড়ে দিচ্ছে।
নিবিড়ও উত্তরে
নিঝুমের ল্যান্ডলাইনে
একটা রিং
বাজাচ্ছে। কোন নিয়ম নেই যে
দিতেই হবে।
এটা শুধুই
খেলা। তাই
মাঝে মাঝেই
খেলেনা নিঝুম।
কিন্তু পরদিন
মেসেজ দিতে
গেলে একজনের
রাগী রাগী
মেসেজ আসে-"কাল খোঁজ
ছিলনা কেন?"
রিপ্লাই-"মানে?"
আবার
রিপ্লাই-"মানে বুঝনা তুমি? কাল
'মিস' দাওনি
কেন?"
-"রোজ দিতে হবে এমন
কোন নিয়ম
আছে নাকি
রে কোথাও?"
-"আছে।"
-"কোন শাস্ত্রে আছে? দেখা।"
-"আমার শাস্ত্রে আছে। তুমি
দিবে কি
না? মেসেজ
দিতে না
পার, একটা
'মিস' দিবে
রোজ যেখান
থেকেই পার।"
-"কেন?"
-"আমি বলছি তাই। টেনশন
লাগে।"
-"আজিব!টেনশন কেন লাগবে?"
-"জানিনা। যা বলছি করবে
ব্যস।"
হ্যাঁ,
নিবিড় আর
নিঝুমের ডিজিটাল
চিরকুটের সংলাপগুলো
আজকাল এরকমই।
'মিস' মানে
'মিসডকল' ইনশর্ট।আর
দেখা যাচ্ছে
বেশ উল্লেখযোগ্য
একটা পরিবর্তনও
হয়েছে; নিবিড়
আজকাল নিঝুমকে
মেসেজে 'তুমি'
করে বলা
ধরেছে। নিঝুম
অবশ্য নিবিড়ের
চাপাচাপিতে হাজার চেষ্টা করেও পারেনি
তুমি বলতে।
চার বছর
বয়স থেকে
তুইতোকারির সম্পর্ক, একদিনে বদলে দেওয়া
যায় নাকি?
আর দেবেই
বা কেন?
বন্ধুকে তুই
করেই তো
বলে। নিবিড়
হঠাৎ কেন
তুমি করে
বলছে, তা
জিগ্যেস করায়
উত্তর দিয়েছে,
এমনি। নিঝুম
যেমন পাগল,
বন্ধুও তার
সঙ্গদোষে পড়ে
পাগল হয়ে
গেছে ভেবে
আর কথা
বাড়ায়নি। সে
যাই হোক,
কথা হচ্ছে
নিঝুমকে রোজ
নিজের খোঁজ
নিবিড়কে দিতেই
হবে মিসডকল
বা মেসেজ
দিয়ে। তবে
দুষ্টু নিঝুম
কথা মানেনা
প্রায়ই। ইচ্ছা
করেই 'খোঁজ'
দিতে ভুলে
যায়। না
না, সবসময়
না, মাঝে
মাঝে তো
এমনিতেই মনে
থাকেনা 'খোঁজ'
দিতে, রোজ
রোজ মনে
থাকে নাকি?
তবে বেশিরভাগ
সময় ইচ্ছা
করেই মনে
থাকছেনা। কেন?
নিবিড়ের বকা
খেতে যে
তার ভী-
ষ- ণ
ভালো লাগে।
আর তাছাড়া,
তার জন্য
কেউ চিন্তা
করে, টেনশন
করে, এই
চিন্তাটা নিঝুমের
মনকে অন্যরকম
একটা খুশিতে
ভরে দেয়।
ভালো ছাত্রী
সে। এই
জীবনে দরকার
ছাড়া, লেখাপড়ায়
সাহায্য চাওয়া
ছাড়া কেউ
তার খোঁজ
করেনি। নিবিড়ের
হঠাৎ এমন
খাপছাড়া আচরণে
অবাক হলেও
তাই খুশিও
হয় নিঝুম।
তাই এই
ভালোলাগাটাকে বারবার এভাবে ওভাবে নেড়েচেড়ে
দেখতে মন
চায়। সেজন্যই
'খোঁজ' দিতে
'ভুলে যেয়ে'
রাগিয়ে দেয়
মাঝে মাঝেই
তার প্রাণপ্রিয়
বন্ধুকে।
একদিন
খোঁজ না
পেলে নিঝুমের
বান্ধবীদের মাথা খারাপ করে দেয়
নিবিড়। “নিঝুম
কোথায়?? যেখানে
থাকুক, একটা
খোঁজ এনে
দে প্লিস।”,
এভাবেই অনুরোধ
করে সে
তাদের।তবে নিঝুম এসবের কিছুই জানেনা।
প্রজ্ঞা, নিঝুমের
অন্যতম ভালো
বান্ধবীদের মধ্যে একজন। তার সাথে
ফোনে নিবিড়ের
পরিচয় করিয়ে
দিয়েছিল নিঝুম।
কারণ প্রজ্ঞার
পছন্দের ছেলে
ঋজুর ব্যাপারে
খোঁজ নিয়ে
দিয়েছিল নিবিড়।
তারপর থেকেই
প্রজ্ঞা আর
ঋজুর প্রেম
শুরু, আর
প্রজ্ঞার সাথে
নিবিড়ের পরিচয়।
এই প্রজ্ঞাই
সর্বপ্রথম নিঝুমের কাছে তার সন্দেহটা
ব্যক্ত করে
নিঝুম তার
বাসায় এলে,
“নিবিড় মনেহয়
তোকে পছন্দ
করে রে
নিঝুম।” কিন্তু
নিঝুম আমলেই
নেয়না সে
কথা। বলে,
“খেয়ে আর
কাজ নেই
তোর? নিবিড়কে
আমি চিনিনা,
না?” প্রজ্ঞা
বলে,“চিনবি
না কেন?
তবে এবার
একটু আলাদাভাবে
চেনার চেষ্টা
কর। তুই
জানিস, তোর
একদিন খবর
না থাকলে
ছেলেটা কেমন
অস্থির হয়ে
থাকে?” এবার
ঘাড় ঘুরিয়ে
সরাসরি প্রজ্ঞার
দিকে তাকায়
নিঝুম, “তাই?
তোকে কে
বলল?” প্রজ্ঞা
নীরব। এরপর
নিঝুম বলে,
“তোর কোথাও
ভুল হচ্ছে।
তুই তো
জানিস এটা
সম্ভব না।
জানিস না
আমরা...” নিঝুমকে
কথা শেষ
করতে দেয়না
প্রজ্ঞা, “হ্যাঁ আমি জানি বাধাটা
কোথায়। কিন্তু
প্রেম কি
এসব দেখে
নিঝুম?”প্রাণখোলা
একটা হাসি
দেয় এবার
নিঝুম, “এবার
বুঝেছি। নিজে
আরেকজনের প্রেমে
হাবুডুবু খাচ্ছিস
কিনা, তাই
সবখানেই প্রেম
দেখিস! শোন,
তোরা যা
জানিস তার
চেয়েও বড়
বাধা হল
we never feel anything like this for each other. নিবিড়
আমার প্রেমে
পরলে আমি
বুঝতামই। তোদের
কারো কিছু
বলা লাগত
না। কিন্তু
তা হয়নি।
আমরা দুজন
এত ঝগড়া
করি টম
এন্ড জেরির
মতো, তোরাই
তো বলিস।
এরপরও কী
করে এখন
আবার এই
কথা বলিস?
আমাদের মধ্যে
সম্পর্ক হলে
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
লেগে যাবে!
হা হা
হা! গাধী!”,
বলে প্রজ্ঞার
পনিটেইল করা
চুলে একটা
ঝাঁকুনি দিয়ে
চলে যায়
নিঝুম।
দেখতে
দেখতে ডিসেম্বর
মাস এসে
যায়। সামনে
মাধ্যমিক পরীক্ষা
থাকলেও ডিসেম্বর
মানেই কেমন
একটা ছুটি
ছুটি ভাব
ঘুরে বেড়ায়
আকাশে বাতাসে।
ছুটির আমেজে
ছোটবেলার বন্ধু
নিঝুম নিবিড়
লিসা আর
সুপ্তি একত্রিত
হয় নিঝুমদের
বাসায়। এরা
সবাই ছোটবেলায়
একই স্কুলে
পড়লেও এখন
প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা স্কুলে পড়ছে।
নিবিড় আর
নিঝুমের মধ্যে
যে গাঢ়
বন্ধুত্ব, লিসা কিংবা সুপ্তির সাথে
অতটা অ্যাটাচমেনট
নেই ওদের,
ওদের সাথে
অত যোগাযোগও
হয়ে ওঠেনা।
নিবিড়ের
দূরসম্পর্কের বড় বোন ঈশিতাও এসেছে।
সে নিবিড়দের
বাসায় থেকে
পড়াশুনা করে।
তাই নিবিড়ের
বন্ধুদের সাথে
পরিচয় তারও
আছে। আর
সবার মা
তো এসেছেনেই।
তবে মা
এবং ছেলেমেয়েদের
ফ্রেন্ড সার্কেল
আলাদা আলাদা
আড্ডা দিচ্ছে
অবশ্যই। হাসিঠাট্টায়
সময় কাটাতে
কাটাতে নিবিড়
আজ আবারও
নিঝুমকে আঘাত
করে বসে
আকাশকে নিয়ে।
এবার নিঝুম
আর কোন
ঝগড়াঝাঁটিতে যায় না, সাফ বলে
দেয় যে
আকাশকে নিয়ে
নিবিড় আর
একটা কথাও
বললে সে
নিজের একটা
ক্ষতি করে
বসবে। বেগতিক
দেখে ঈশিতা
নিঝুমকে টেনে
নিয়ে যায়
অন্য ঘরে।
কিন্তু নিয়ে
যেয়ে যে
কথা বলে
তা শুনে
আবারও নিঝুম
দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ঈশিতা নিঝুমকে
প্রশ্ন করে,
“নিঝু তুই
কি নিবিড়কে
পছন্দ করিস?”
নিঝুম বলে,
“এই এক
ব্যাপার আমি
আর কতজনের
কাছ থেকে
শুনব?? একজন
বলে নিবিড়
আমাকে পছন্দ
করে, আরেকজন
আবার আমাকেই
প্রশ্ন করছে
আমি পছন্দ
করি কিনা।
সমস্যাটা কোথায়
তোমাদের সবার?
জান না
তোমরা এটা
সম্ভব না?
” অন্য কেউ
হলে এত
কড়া ভাবে
কথাগুলো বলতে
পারতোনা নিঝুম।কিন্তু
নিবিড়ের বোন
মানেই তারও
বোন, এজন্যই
বয়সের পরোয়া
না করে
এভাবে বলে
দেয়। ঈশিতা
দমে না।
বলে, “সম্ভব
করতে চাইলেই
সম্ভব। তোদের
মতো এরকম
সমস্যা অনেকেরই
আছে। কিন্তু
তারা সেটাকে
জয় করেছে।
কিন্তু সম্ভব
অসম্ভবের কথা
পড়ে আসছে।
তুই আরেকবার
ভাব, ভেবে
বল তুই
নিবিড়কে পছন্দ
করিস কি
না। তুই
ওর জন্য
নিজের ক্ষতি
করতে চাইলি,এটা তো
স্বাভাবিক না।” নিঝুম বলে, “আমি
কোন ছেলের
ব্যাপারেই এরকম কিছু ফিল করিনা।
আর কেন
নিজেকে কষ্ট
দেব সেটা
আমি বলেছি
তোমার সামনেই।
ও আকাশ
আর আমাকে
নিয়ে এমন
কথা বলে
কেন? ও
তো জানে
যে আমি
এমন না।
” এবার নিঝুমের
চমকে যাওয়ার
পালা। ঈশিতা
বলে, “তুই
পছন্দ করলেও
আমি তোকে
মানা করতাম
সিরিয়াস হতে।
কারণ ও
হয়তো তোকে
সিরিয়াসলি নিত না। তোকে মিসডকল
দেয়, ওর
স্কুলের একটা
মেয়ে আছে,
ওর ফ্রেন্ড,
রূপা, ওকেও
দিত এরকম
মিসডকল। ওর
কাছে অবশ্য
সেটা শুধু
বন্ধুত্বই। কিন্তু রূপা সম্ভবত ওকে
পছন্দ করে।
ইচ্ছা করে
করে ওকে
ফোন দেয়,
দরকার না
থাকলেও। ও
মিসডকল দিলে
তখন নিবিড়
ব্যাক করত।
আমাকে বলেছে
ওর নাকি
বিরক্ত লাগে।
কিন্তু আমি
ঠিক সিওর
না। আমার
মনেহয় নিবিড়
ওকে পছন্দ
করে। ” নিঝুমের
চোখেমুখে একটা
খুশি ঝিলিক
দিয়ে যায়,
“নিবিড়ের কাউকে
পছন্দ???? ও হো!” মুহূর্তে রাগ
ভুলে নিবিড়ের
কাছে ছুটে
যায় নিঝুম।
“কী রে
রূপা কে?”,
প্রশ্ন করে।নিবিড়
একটু হকচকিয়ে
যায় প্রশ্নটা
শুনে। কিছু
বলেনা। নিঝুম
সুযোগ পেয়ে
আবার পিছে
লাগে, “হু
হু তোমার
বলতে হবেনা
গুরু, আমি
জেনে গেছি!
পছন্দ কর
তো বলতে
কী ভয়?আমাকে নাম্বার
দিস, আমিই
বলে দেব।”
নিবিড় বুঝানর
চেষ্টা করে,
“তোকে কে
বলল আমি
রুপাকে পছন্দ
করি? করিনা।
ও শুধুই
আমার ক্লাসমেট,
আমার আর
সব বন্ধুর
মতো একজন
বন্ধু।” কিন্তু
নিঝুম শোনে
না। এরপর
খোঁচাতেই থাকে।
সাথে যোগ
দেয় লিসা
আর সুপ্তি।
নিবিড় একবার
কটমট করে
ঈশিতার দিকে
তাকায়। নিঝুম
তা দেখেও
দেখেনা। সে
আছে তার
খেয়ালে, নিবিড়-
রূপা, রূপা-
নিবিড়। না
দেখেই মেয়েটাকে
পছন্দ করে
ফেলে সে।
লিসা
আর সুপ্তি
নিজেদের মধ্যে
নিচুস্বরে কী যেন আলোচনা করছে।
নিঝুম যেয়ে
হামলে পড়ে,
“এই তোরা
কী এত
বলছিস রে
কখন থেকে?”
কিন্তু পাশ
কাটিয়ে যায়
ওরা এই
প্রশ্ন। নিঝুম
গায়ে মাখেনা।
নিবিড় আর
সেও তো
কতকিছু গল্প
করে, সব
তো ওরা
জানেনা। এই
ভেবে আর
কিছু বলেনা।
হোসট হওয়ার
কারণে নিঝুম
আজ বন্ধুদের
সাথে বেশি
আড্ডা দিতে
পারছেনা, আতিথেয়তা
করতে একটু
ছুটাছুটির মধ্যেআছে। তাও যতটা সম্ভব
সে বন্ধুদের
সাথে থাকার
চেষ্টা করছে।
দেখতে দেখতে
বিকেল হয়ে
যায়। এবার
একটু চিন্তায়
পড়ে যায়
নিঝুম। এক
স্যারের বাসায়
ক্লাস আছে।
তার যাওয়ার
ইচ্ছে নেই
আজ। মা
কে বললে
হয়তো যেতে
মানাই করবেন।
কিন্তু স্যার
তো ছার
দেবেন না।তাও
একবার চেষ্টা
করে দেখবে
ভাবে নিঝুম।
অন্তত রেডি
তো হয়ে
থাকা যাক,
ভাবে সে।
আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে চুল
আঁচড়াতে থাকে।
নিবিড় একদৃষ্টে
তাকিয়ে আছে
ওর দিকে।
সে জানে
যে আজ
নিঝুমের ক্লাস
আছে। আর
এটাও জানে
যে সেই
ক্লাসে আকাশ
আছে। হঠাৎ
বলে ওঠে,
“খালি চুল
আঁচড়াচ্ছ কেন?
ভালভাবে সাজগোজ
কর একটু।”
নিঝুম মাথায়
চিরুনি ধরা
অবস্থাতেই আয়নার দিক থেকে ঘুরে
দাঁড়ায়, “কী
বললি?” নিবিড়ের
কণ্ঠের ঝাঁজ
এবার স্পষ্টই
বোঝা যায়,“ডেটে যাচ্ছ
যখন, একটু
সেজেগুজে যাওয়াই
তো ভালো
তাই না?”
নিঝুম কী
বলবে ভেবে
পায়না। নিবিড়
খুব ভালোমতই
তো বুঝছে
যে তার
যাওয়ার কোনই
ইচ্ছে নেই
ক্লাসে। তাও
এমন কথা
বলল! না
যাওয়ার চেষ্টা
করবে ভেবেছিল,
মুহূর্তে সেই
চিন্তাটা বাতিল
করে দেয়
এবার নিঝুম।
এই ছেলের
সাথে আর
এক মুহূর্তও
এক ছাদের
নিচে না।
নিবিড়ের দিকে
আর একবারও
তাকায় না
সে। আর
সবাইকে ‘বাই’
বলে মাকে
যেয়ে বলে
ক্লাসে যাবে।
বের হয়ে
যায় বাবার
সাথে। যাওয়ার
সময় বাবার
ফোন থেকে
নিবিড়কে একটা
মেসেজ দেয়,
“আজ খুব
বেশি কষ্ট
দিলি তুই
আমাকে।” এই
মেসেজের কোন
উত্তর দেয়
না নিবিড়।
তার ভেতরটা
তখন জ্বলছে।
তাকে উপেক্ষা
করে নিঝুম
আর কোথাও
চলে যাবে,
তাও আবার
যেখানে ওই
আকাশ আছে,
এটা সে
কোনমতেই মেনে
নিতে পারেনা।
নিঝুমের চুল
আঁচড়ানো দেখেই
তার মেজাজ
খারাপ হওয়া
শুরু হয়েছে,
তাই বাঁকা
বাঁকা কথা
বলে ইচ্ছে
করে নিঝুমকে
কষ্ট দিয়েছে।
কিন্তু তাও
নিঝুম চলে
গেল। বুকের
ভেতর এটা
কীসের আগুন
জ্বলছে অহরহ
তা বুঝেও
না বুঝার
চেষ্টা চালিয়ে
যায় নিবিড়।
প্রজ্ঞার জেরার
পর জেরায়
তার কাছে
সে কাল
রাতে একটু
আভাস দিয়েছে
নিজের মনের।
কিন্তু তা
নিঝুমকে বলতে
মানাও করে
দিয়েছে। কারণ
নিশ্চিতভাবে সে কিছুই জানায়নি। সে
নিজেও নিশ্চিত
না নিজের
ব্যাপারে। এমন তো হওয়ার কথা
না! হবেও
না। তবুও,
নিজের অনুভূতিগুলোকে
নিজের কাছেই
বড় অচেনা
ঠেকে। প্রজ্ঞা
সাথে সাথে
বান্ধবীকে জানাতে চেয়েছিল, কিন্তু নিবিড়
বাঁধা দিয়েছে,
“প্রজ্ঞা আমি
এখনো সিওর
না। আমাকে
একটু সময়
দে। বলিস
না কিছু
আগেই। তোকে
ঋজুর দোহাই।
” এরপর প্রজ্ঞার
আর কিছু
করার থাকেনা।
ঋজুর নামটাই
তার দেহমনে
অদ্ভুত এক
শিহরণ জাগায়।
সেখানে তার
দোহাই দিলে
প্রজ্ঞা অচল,
নিরুপায়।
ক্লাসে
ঢুকার সাথে
সাথেই আকাশ
বলে ওঠে,
“এত দেরি
করলি কেন
আসতে? আমি
কখন থেকে
এসে বসে
আছি!” মনটা
আগেই খারাপ
ছিল আজ
নিবিড়ের কথা
শোনার পর
থেকে। আকাশের
এই প্রশ্নে
আর নিজেকে
সামলাতে পারেনা
নিঝুম, বারুদের
মতো দপ
করে জ্বলে
ওঠে “একদম
চুপ আকাশ।
আমি তোমার
girlfriend না যে আমাকে সময় বেঁধে
আসতে হবে।
আমি ক্লাসে
পড়তে আসি,
ক্লাসের সময়েই
আসব। তোমার
সাথে আমার
দেখা করার
কথা না
যে আগেই
এসে বসে
থাকতে হবে।”
বলতে বলতে
গলা ধরে
যায় তার।
আকাশ হতভম্ব
হয়ে থাকে।
এই মেয়ের
রাগ সে
আগেও দেখেছে,
যতদিন ধরেই
চেনে, রাগটাই
সবচেয়ে বেশি
দেখার সুযোগ
হয়েছে তার
অভিমানী নিঝুমের,
আর আন্তরিকতা,
যার কারণে
মাত্র এক
মাসের পরিচয়ে
নিঝুম হয়ে
উঠেছে তার
অন্যতম প্রিয়
বন্ধু। কিন্তু
তার কষ্টের
রূপটা কখনো
দেখেনি আকাশ।
সদা উচ্ছল
এই মেয়েটা
যে কাঁদতে
পারে, তা
তার জানাই
ছিলনা। “কী
বলে ফেললাম
যে এভাবে
কেঁদে দিল
নিঝুম?”, অবাক
হয়ে ভাবতে
থাকে। জিগ্যেস
যে করবে
কী হয়েছে,
তাও সাহস
পায়না। এখন
পর্যন্ত ক্লাসে
শুধু সে
আর নিঝুমএসেছে।
বাকিরা আসা
শুরু করলে
এভাবে কান্নাকাটি
দেখলে কী
মনে করবে
তা ভেবে
পায় না
আকাশ। তবে
নিঝুম নিজেই
একটু পরে
সামলে নেয়।
চোখ মুছে
বলে, “স্যরি
রে। বেশি
রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছি। কিন্তু তোকেও
একটা কথা
বলে দিচ্ছি
আমি, তোকে
আর আমাকে
জড়িয়ে কোন
কথা শুনতে
আমি রাজি
না। আমি
তোর জন্য
বন্ধুত্বের বাইরে কিচ্ছু ফিল করিনা।
এজন্য এমন
কিছু কখনও
করবিনা যাতে
মানুষের মনে
হয় যে
আমাদের সম্পর্কটা
শুধু বন্ধুত্ব
না।” “মানুষের
না শুধু
নিবিড়ের নিঝুম?”,
আকাশের এমন
প্রশ্নের কোন
উত্তর দিতে
পারেনা সে।
আকাশ বলে,
“তোকে আর
নিবিড়কে নিয়েও
তো মানুষ
কত কিছু
ভাবে। সেখানেতো
তুই এমন
রেগে যাস
না। আর
নিবিড় তোকে
আর আমাকে
নিয়ে সন্দেহ
করলেই তোর
এত লাগে
কেন? ওর
কাছে নিজেকে
ঠিক প্রমাণিত
করার এত
চেষ্টা কেন
তোর?” নিঝুম
জ্বলন্ত চোখে
আকাশের দিকে
তাকায়, “তুই
ভুলে যাচ্ছিস
আকাশ যে
নিবিড় আমার
bestfriend.ও আমাকে ভুল বুঝলে আমার
কষ্ট লাগবেই।
” কিছু না
বলে কাঁধ
ঝাঁকিয়ে একটা
বিশেষ ভঙ্গি
করে আকাশ
যার মানে
অনেক কিছুই
হতে পারে।
আরও ছাত্রছাত্রী
এসে গেছে
ইতিমধ্যে। স্যারও এসে গেছেন। এরপর
আর বিশেষ
কথাবার্তা হয়না। ক্লাস শুরু হয়ে
যায়। পুরো
সময়টা অকারণেই
বারবার চোখ
ভিজে উঠতে
থাকে নিঝুমের।
এরপর
কেটে গেছে
বেশ কয়েকদিন।
সেদিন ভীষণ
মন খারাপ
করে বাসায়
ফিরেছিল নিঝুম।
এসে দেখে
বন্ধুরা চলে
গেছে। রাতে
মোবাইল চেক
করে। না,
কোন মেসেজ
নেই। পরদিন
একটা জাতীয়
দিবস ছিল।
সেই দিবসের
শুভকামনা জানিয়েছিল
রাতে নিবিড়কে।
ব্যস, এইই।
এরপর আর
কোন কথা
হয়নি প্রায়
একসপ্তাহ। এরপর একটা নতুন ঘটনা
ঘটে। নিঝুম
যে স্যারের
কাছে বাংলার
জন্য কোচিং
করছিল,অযাচিতভাবেই
সেখানে ভর্তি
হয় রূপা।
হ্যাঁ, সেই
রূপা যার
কথা ঈশিতা
বলে গিয়েছিল
নিঝুমকে। প্রথমে
রূপা নাম
শুনে বিশ্বাস
করতে পারেনি
নিঝুম যে
এই রূপা-ই সেই
রূপা। পরে
পুরো নাম
মিলিয়ে দেখেছে
যে হুম,
এ সেই।
খুশিতে লাফালাফি
করা বাকি
রাখে শুধু
নিঝুম। উত্তেজনা
চেপে পরিচয়
করে রূপার
সাথে। বলে
যে সে
নিবিড়ের বন্ধু।
নিঝুমের নাম
শুনে একটা
মিষ্টি কিন্তু
রহস্যময় হাসি
দেয় রূপা,
“ও তুমিই
নিঝুম?” “আমিই
নিঝুম মানে?”,
অবাক হয়ে
প্রশ্ন করে
নিঝুম। “না
কিছুনা, নিবিড়ের
কাছে অনেক
শুনেছি তোমার
কথা।”, রূপার
উত্তর। নিঝুম
আরও অবাক
হয়। তার
ব্যাপারে অনেক
আবার কী
বলবে নিবিড়?
জিগ্যেস করে
রূপাকে। কিন্তু
রূপা কিছু
একটা চেপে
যায় নিঝুমের
কাছে “এই
তো তেমন
কিছুনা” বলে।
কৌতূহল হলেও
আর চাপাচাপি
করেনা নিঝুম,
নতুন পরিচয়
কেবল, এখনই
কিছু নিয়ে
চাপাচাপি করা
ঠিক হবেনা
ভেবে চুপ
হয়ে যায়।
পিছনের সীটে
বসে রূপাকে
দেখতে থাকে
তার অলক্ষ্যে।
দেখতে ভালোই
রূপা। লম্বা
কোঁকড়া চুল,
হালকা ফোলা
গাল, দেখলেই
টিপতে ইচ্ছে
করে, আর
মুখটা, নিঝুমের
মনে হয়
অবিকল নিবিড়ের
মায়ের মুখের
গড়ন সেখানে।
নিবিড়ের মাকে
ছোটবেলা থেকেই
নিঝুমের খুব
পছন্দ। ছোট
থাকতে নিঝুমের
মা তো
তাকে স্কুলে
দিয়ে চলে
যেতেন। নিবিড়ের
মা রোজ
বসে থাকতেন,
স্কুল শেষ
হওয়া পর্যন্ত।
নিঝুমের মনে
পড়ে, তাকে
টিফিন খাইয়ে
দিতেন রোজ
আনটি। সেই
চার বছর
বয়স থেকেই
যেন নিঝুমের
আরেক মা
হয়ে গেছেন
নিবিড়ের মা।
ছোটবেলায় কতদিন
মনে মনে
চেয়েছে অবুঝ
নিঝুম যাতে
সৃষ্টিকর্তা নিবিড়ের মাকে তার মা
করে দেন।
নিঝুমের কাছে
অফুরন্ত মমতার
প্রতিমূর্তি এক নারী নিবিড়ের মা।
রূপাকে দেখতে
দেখতে শৈশবের
অজস্র এলোমেলো
কথা মনে
পড়ে যায়
নিঝুমের, নস্টালজিক
হয়ে যায়।
বাড়ি
ফিরেই আর
তর সয়
না,নিবিড়কে
মেসেজ দেয়,
“তোর বউকে
দেখলাম আজ।”
এতদিন কোন
মেসেজ দেয়নি
নিবিড় নিঝুমকে,
নিঝুমও দেয়নি।
সেদিনের ব্যাপারটা
নিয়ে মেজাজ
খিচড়ে ছিল
দুজনেরই। বেশ
কয়েকবার দেবে
ভেবেও পরে
আর দেয়নি
কেউই। কিন্তু
এবার আর
নিবিড় রিপ্লাই
না করে
পারেনা, “আমার
বউ মানে?”
নিঝুম রিপ্লাই
দেয়, “মানে
রূপা। আমার
খুব পছন্দ
হয়েছে রে,
একদম আনটির
আদল ওর
চেহারায়, এই
মেয়ে ভালো
না হয়েই
যায় না।”
নিবিড় এই
মেসেজ পেয়ে
হাসবে না
কাঁদবে বুঝে
পায়না। ফোনটা
হাতে নিয়ে
বসে থাকে
কিছুক্ষণ। শেষে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস
ফেলে রিপ্লাই
করে, “আচ্ছা
আমার বউকে
তাহলে বলে
দিস যে
আমি কাল
মামাবাড়ি যাচ্ছি।”
নিঝুম আরও
খুশি হয়ে
যায়, বলে,
“আচ্ছা বলে
দেবো। সাথে
এটাও বলে
দেবো যে
তুই ওকে...”
বাক্যটা শেষ
না করেই
দুষ্টুমিমার্কা একটা হাসি জুড়ে দেয়
মেসেজের শেষে,
তারপর পাঠিয়ে
দেয়। কিন্তু
এই মেসেজের
কোন রিপ্লাই
আসেনা। না
আসুক, একসময়
না একসময়
তো নিবিড়ের
রূপাকে বলতেই
হবে, তাই
এখন এড়িয়ে
গেলেও কিছু
যায় আসেনা,
ভাবে নিঝুম।
পরদিন যেয়ে
রূপাকে বলে
যে নিবিড়
মামাবাড়ি গেছে।
একই সাথে
পাশে বসে
থাকা নিলীমার
মোবাইল থেকে
নিবিড়কেও মেসেজ
পাঠায়, “বলে
দিলাম তোর
‘বউ’ কে
যা বলতে
বলেছিলি। এখন
কি বাকিটাও
বলব?” নিবিড়
সাথে সাথে
উত্তর দেয়,
“না তোর
কিছু বলার
দরকার নেই।
একদম পণ্ডিতি
করবিনা। ” আর কথা বাড়ায় না
এরপর নিঝুম।
রূপার সাথে
গল্প করতে
থাকে। দেখে
রূপা তো
বেশ ভালভাবেই
জানে নিবিড়ের
সম্পর্কে! এটাও জানে যে ওর
মামাবাড়ি কোথায়!
মামাবাড়ি গেছে
বলতেই বলে
দিল, “হুম্ম
রাজশাহী গেছে।”
মনে মনে
বেশ আশান্বিত
হয়ে যায়
নিঝুম যে
না,রূপা
আর নিবিড়
নিশ্চয়ই পছন্দ
করে একে
অপরকে। মনটা
গুনগুনিয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই, ঠোঁটের
কোণে একটা
মুচকি হাসিও
চলে আসে
কখন যেন।
“পিয়া
কী নাযারিয়া...”,
নতুন শেখা
খেয়ালটা গুনগুন
করতে করতে
আর চুল
মুছতে মুছতে
কী মনে
করে থমকে
যেয়ে আয়নায়
নিজেকে দেখে
নিঝুম।সদ্যস্নাত গোলগাল ফর্সা মুখ,পাতলা
ঠোঁট, আর
হালকা নীল
কামিজ পরিহিত
মাঝারি গড়নের
দেহটা দেখতে
দেখতে ছোট্ট
একটা হাসি
ছুঁড়ে দেয়
নিজের উদ্দেশ্যে।
“নাহ আমি
এমনই ভালো!
সাজগোজ আমার
পোষাবে না!”,আপনমনেই বলে।
গতকাল সন্ধ্যায়
একটা বিয়েবাড়িতে
গেছিল নিমন্ত্রণ
রক্ষা করতে।
সেখানে তার
বয়সী মেয়েদের
প্রসাধনের বহর দেখে তার আক্কেল
গুড়ুম হয়ে
গেছে। এত
সাজতে পারে
কোন মেয়ে?!বাব্বাহ! অবশ্য
সাজতেই পারে,
পরক্ষনেই আবার
ভাবে সে,
নিজে তো
সাজগোজের ব্যাপারগুলো
ভালো বোঝে
না নিঝুম।
এত বড়
হয়েছে, এখনো
কাজল দিতে
পারেনা, মা'র দিয়ে
দিতে হয়।
“আজ তো
বড়দিন, আজ
একটু সেজে
ক্লাসে যাবো
নাকি?”, ভাবতে
যেয়ে আবার
হেসে ফেলে
সে। “ইশ!
তোমাকে কে
দেখবে তুমি
ছাড়া সোনা
যে আজ
সাজার শখ
হল তোমার?”,
প্রতিবিম্বের দিকে ভেংচি কেটে ভেজা
চুলগুলো আবার
মুছতে থাকে।
কেমন যেন
একটা বিষণ্ণতা
এসে ভর
করে মনে।
তারও তো
কেউ থাকতে
পারত, যার
জন্য সে
নিজেকে সাজিয়ে
তুলত মনের
মাধুরী মিশিয়ে,
চোখের কোলে
কাজল টেনে,
কপালে প্রজাপতির
ডানার আবির
মাখা টিপ
পরে, আর
হাতে বৃষ্টির
রিমঝিম সুর
তোলা চুড়ি
গলিয়ে,আর...“এই নিঝু!
ক্লাস আছে
যাবিনা??” মায়ের ডাকে সম্বিত ফেরে
নিঝুমের। “হ্যাঁ মা যাবো, আসছি
দাঁড়াও”, বলে
মাথে নেড়ে
যেন বিষণ্ণতাটাকে
ঝেড়ে ফেলে
সে। আনমনে
নিজের দিকে
তাকিয়ে আরেকবার
হেসে ক্লাসের
জন্য ব্যাগ
গুছাতে চলে
যায়।
ক্লাসে
যাবার সময়
পুরোটা পথ
কেমন আনমনা
হয়ে থাকে
নিঝুম। নিজের
কাছে তো
সে পরিষ্কার।
তবে কেন
আজ বুকের
মাঝে একটা
অব্যক্ত বেদনা
বারবার মাথা
তুলে দাঁড়াতে
চাইছে? কেন
মনে হচ্ছে
তাকেও যদি
কেউ ভালবাসত?
বান্ধবীদের রিলেশন আর কিছুদিনের মধ্যেই
ব্রেকআপের সমাহার দেখতে দেখতে তো
প্রেমের উপর
তার যতটুকু
ভরসা ছিল
তাও নেই
বললেই চলে।
তাহলে আজ
কেন কারো
অভাব বোধ
হচ্ছে তীব্রভাবে?
আর সবচেয়ে
আশ্চর্য, এই
অভাববোধের সাথে সাথেই এমন একটা
মুখ মনের
পর্দায় ভেসে
উঠছে যাকে
দেখে নিঝুম
বারবার চমকে
উঠছে। এই
মুখ, এই
হাসি, এই
চোখ, এসব
তো তার
জন্মজন্মান্তরের পরিচিত। এ কেমন দ্বিধা?
এ কী
করে সম্ভব?
নিঝুম তো
কোনদিন তার
ব্যাপারে আর
কিছু ভাবেনি।
তবে আজ
কেন সেই
অনুপস্থিত, অস্তিত্বহীন ‘কারো’ সাথে এই
মুখটা একাকার
হয়ে যাচ্ছে?
আর ভাবতে
পারেনা নিঝুম।
কে যেন
কথা বলে
ওঠে বুকের
মধ্যে বসে,“ভালবাসার দরকার
নেই তোমার
নিঝুম। তুমি
কারো জন্য
কিছু ফিল
করনা। আর
ওর জন্য
তো না-ই। তুমি
কি ভুলে
গেছ যে
মানবজাতিকেই তুমি সবচেয়ে বেশি ভয়
কর? ভুলে
গেছ যে
তোমার বন্ধুবান্ধবদের
জন্যেও তুমি
শুধু একটা
ব্যবহারের জিনিস? যখন যার দরকার
হবে, তখন
সে তোমার
সাথে বন্ধুত্ব
করবে। তোমার
সরলতার সুযোগ
নিয়ে তোমাকে
ঠকাবে,তোমার
পিছে তোমার
সরলতা নিয়ে
অন্যদের সাথে
হাসাহাসি করবে।
ভুলে গেছ
নিঝুম এসব?
ভালবাসা তোমার
জন্য নয়।
তুমি একা
নিঝুম, বড়
একা। তুমি
শুধু ভালবেসে
যাও, তোমার
জন্য কারো
ভালবাসা নেই।
” নিজের অজান্তেই
একটা দীর্ঘশ্বাস
বের হয়ে
আসে নিঝুমের।সত্যিই
তো, সে
বড় একা।
সবার সাথে
সে উচ্ছল,
রঙিন প্রজাপতির
মতো নিঝুম।
আর তার
নিজের জগতে
সে তার
নামের মতোই
নিঝুম। কেউ
নেই তার।
বন্ধুদের জন্য
সে জান
দিয়ে দিতে
পারে, কিন্তু
এই বন্ধুরাই
তাকে বারবার
ঠকিয়েছে, বারবার
কষ্ট দিয়েছে।
সে তাদের
মতো মডার্ন
না, তা
নিয়ে হাসাহাসি
করেছে, দরকার
শেষ হলে
তাকে এড়িয়ে
গেছে। হাতেগোনা
কয়জন মাত্র
ভালো বন্ধু
আছে তার।
তার মধ্যে
নিবিড় সবার
থেকে আপন।
নিবিড়!নামটা
মনে হতেই
আবার আড়ষ্ট
হয়ে যায়
নিঝুম। বারবার
মাথা নেড়ে
যেন নামটাকে
ঝেড়ে ফেলতে
চায় এই
মুহূর্তের জন্য। গাড়ির জানালা দিয়ে
বাইরে তাকিয়ে
থাকতে থাকতে
একসময় এই
বিষণ্ণতাটা কেটে যায়। তার জায়গায়
ঠাঁই নেয়
অন্য একটা
আনন্দ। আজ!
আজ সে
রূপাকে বলবে
নিবিড়ের পছন্দের
কথা। এই
কয়দিন নিবিড়কে
সে বহুত
জ্বালান জ্বালিয়েছে
রূপার কথা
বলে বলে।
হুমকি দিয়েছে
রূপাকে বলে
দেবে বলে।
কিন্তু কেন
যেন নিবিড়
বারবার ওকে
বাধা দিয়েছে।
নিঝুম এই
বাধাটাকে নিবিড়ের
প্রেয়সীকে পছন্দের কথা না বলতে
পারার জড়তা
বলেই ধরে
নিয়েছে। তারপর
নিজে নিজেই
ঠিক করেছে
রূপাকে বলে
দেবে যে
নিবিড় তাকে
পছন্দ করে।
নিজের একাকীত্বের
কথা ভাবতে
ভাবতে হঠাৎ
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে নিঝুম যে
আজ-ই
বলবে। নিঝুমের
জীবন খালি
থাকুক না,
তাতে কিছু
যায় আসেনা।
কিন্তু নিবিড়ের
জীবন তো
সে তার
মতো খালি
থাকতে দিতে
পারেনা, যেখানে
নিবিড়ের কাউকে
পছন্দও আছে।
বোকাটা বলতে
না পারলে
দেখা যাবে
রূপা অন্য
কারো হয়ে
গেল,তখন?
তখন নিবিড়ের
কষ্ট তো
সে সইতে
পারবেনা। তারচেয়ে
বলে দেওয়াই
ভালো, দুজনই
দুজনকে পছন্দ
করে যখন,
ভাবতে ভাবতে
স্যারের বাসার
গেটের সামনে
গাড়ি এসে
যায়। বাবাকে
‘টা টা’
জানিয়ে নেমে
পড়ে গাড়ি
থেকে।
ক্লাসে
যেয়ে দেখে
রূপা তখনও
আসেনি। তবে
নিলীমা এসেছে।
নিঝুম আর
নিলীমা, নাম
দুটির মধ্যে
অনেক মিল
আছে বলেই
হয়তো অনেক
ছোট ছোট
ঝগড়া, সারাজীবন
মুখ না
দেখার পণ
করার পরেও
তাদের বন্ধুত্বটা
রয়ে গেছে,
আরও গভীর
হয়েছে। যতটুকুই
মন খারাপ
ছিল নিঝুমের,
নিলীমাকে দেখে
এক মুহূর্তের
মধ্যে সব
যেন কর্পূরের
মতো উবে
যায়। স্যার
এখনও আসেননি,
অন্য রুমে
আছেন। ক্লাসে
শুধু নিঝুম,
নিলীমা, আর
আরও কয়েকজন
ছাত্রী। কী
যে হয়
নিঝুমের, ছুটে
যেয়ে নিলীমার
পাশে বসে
পড়ে অন্যরকম
উচ্ছ্বাসে তাকে জড়িয়ে ধরে, “নিলী
আই লাভ
ইউ! উম্মাহ!!”,
টুক করে
একটা চুমুও
খেয়ে ফেলে
গালে। নিলীমা
ভীষণ অবাক
হয়ে যায়
নিঝুমের এমন
খুশি দেখে।নিঝুম
না বললেও
সে ঠিকই
বুঝতে পারে
যে তার
নিঝুর কোন
কারণে মন
খারাপ ছিল,
এখন সেটা
চাপা দিতে
চাইছে তাকে
আঁকড়ে ধরে।
কিচ্ছু বলেনা
নিলীমা, কী
হয়েছে কিছুই
জিগ্যেস করেনা,
শুধু ধীরে
ধীরে নিঝুমের
রেশম কোমল
ভেজা চুলগুলোতে
হাত বুলিয়ে
দেয়। নিঝুমও
যেন নিলীমার
হাতের সবটুকু
মমতা শুষে
নিতে চায়
নিলীমার কাঁধে
চুপচাপ মাথা
রেখে চোখবন্ধ
করে। সেই
মুহূর্তে দুজনের
মনেই একটা
কথাই খেলে
যায় বারবার,
কথায় বলে
মেয়েরাই নাকি
মেয়েদের শত্রু,
কিন্তু মেয়েরাই
হয়তো পারে
আরেকটা মেয়েকে
এমন আপন
করে নিতে,
এমন গভীর
মমতায়, ভালবাসায়
আঁকড়ে ধরতে।
একটু পর
মুখ তুলে
নিঝুম বলে,
“জানিস নীলু
আজ না
আমি রূপাকে
নিবিড়ের কথা
বলে দেবো!”,। নিলীমা
বান্ধবীর মুখের
দিকে তাকায়
ভালো করে,দেখতে চায়
এই আকাঙ্ক্ষার
অন্তরালে কোন
বেদনা আছে
কিনা। কিন্তু
পারেনা দেখতে।
বরং নিঝুমের
মুখটা কেমন
একটা আনন্দে
জ্বলজ্বল করছে।
নিলীমা অবাক
হয়ে ভাবে,
“বন্ধুত্ব এতটা নিঃস্বার্থ হতে পারে?
সবচেয়ে কাছের
বন্ধুকে অন্য
কারো হাতে
তুলে দিতে
কি এই
বোকা মেয়েটার
একটুও বাধবেনা?”। কিন্তু
এই ভাবনাগুলো
যে নিঝুমকে
বলে কোনই
লাভ নেই,তা নিলীমার
থেকে ভালো
বোধহয় আর
কেউ জানেনা
নিঝুমের বান্ধবীদের
মধ্যে। একটা
অজানা আশঙ্কায়
বুক কেঁপে
ওঠে নিলীমার,
“মেয়েটা এজন্য
পরে কষ্ট
পাবেনা তো?
যখন জানবে
রূপা নয়,
সে-ই
ছিল নিবিড়ের
যোগ্য জীবনসঙ্গিনী?”
আবার নিঝুমের
মুখের দিকে
তাকায় নিলীমা,দুর্গাপ্রতিমার কল্যাণদায়িনী
মুখের কথা
মনে পড়ে
যায় তার,
বড় শুদ্ধ
মনে হয়
এইমুহূর্তে তার প্রাণের বান্ধবীটিকে। সমস্ত
দুশ্চিন্তা পাশে ঠেলে হাসে অবশেষে
নিলীমা, “দেখ
তুই যা
ভালো বুঝিস
কর। তোকে
তো বাধা
দিয়ে লাভ
নেই। তবে
আমি বলব
একবার নিবিড়ের
সাথে সরাসরি
কথা বলে
নে।”, বলে
নিজের মোবাইলটা
বাড়িয়ে দেয়
নিঝুমের দিকে।নিঝুম
ভাবে, স্যার
যখন এখনও
আসেননি পড়াতে,
দেরি হবে
নিশ্চয়ই আজ,
আরও স্টুডেন্ট
আসা বাকি
আছে, কথাটা
বলেই ফেলা
যাক নিবিড়ের
সাথে। আজ
একটা হেস্তনেস্ত
করতেই হবে,
কারণ আজই
শেষ ক্লাস
তার রূপার
সাথে। নিলীমাকে
আবারও জড়িয়ে
ধরে বলে,
“এজন্যই তো
তোকে এত
ভালবাসি রে
আমার নীলপরী!
তুই সব
বুঝিস!” তারপর
ফোনটা হাতে
নিয়ে নিচে
নেমে যায়
কথা বলতে।
নিবিড়
এখনও মামাবাড়ি
আছে। আজ
সকালে মামাত
ভাইয়ের সাথে
বেড়াতে বের
হয়েছে। রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আছে,
এমন সময়
ফোন বেজে
ওঠে। পকেট
থেকে বের
করে দেখে
নিলীমার নাম্বার।
ভ্রু কুঁচকিয়ে
ফেলে। নিলীমার
তো তাকে
ফোন করার
কথা না।
কোনদিন কথা
বলেনি নিলীমার
সাথে ফোনে।
নিঝুম পরিচয়
করিয়ে দিয়েছে,
তারপর টুকটাক
কথা হয়েছে
মেসেজে। তাহলে
ফোন কেন
দিল? আজ
সকাল থেকে
আবার নিঝুমেরও
কোন খবর
নেই, মিসডকল
দেয়নি। এইসব
সাতপাঁচ ভাবতে
ভাবতে ফোনটা
কেটে যায়।
কলব্যাক করে
নিবিড়। প্রথম
রিং হতেই
ওপাশ থেকে
একটা উচ্ছল
গলা ধমকে
ওঠে, “এতক্ষণ
লাগে ফোন
ধরতে!?” এক
ঝলক দমকা
হাওয়া বয়ে
গেল যেন
নিবিড়ের চারপাশে।
এই কণ্ঠ,
এই ধমকের
সুর,এ
যে তার
ভীষণ ভাললাগার!
“নিঝুম! তুই?”,
কয়েক সেকেন্ড
পরে কোনরকমে
বলতে পারে।
নিঝুম বলে,
“হ্যাঁরে আমি!
এত অবাক
হবার কী
আছে শুনি?”
“না মানে
আমার সাথে
তো ফোনে
কথা বলিসনা,সবসময়েই মেসেজেই
কথা হয়েছে।
আজই প্রথম
ফোন করলি,
তাও আবার
নিলীমার নাম্বার
থেকে তাই
একটু অবাক
হলাম।”, বলে
নিবিড়। এতক্ষণে
কিছুটা সামলে
নিয়েছে নিজেকে।
নিঝুমেরও মনে
পরে যে
হ্যাঁ, আজই
তো সে
নিবিড়কে প্রথম
ফোন করছে
পারসনালি যোগাযোগ
শুরু হবার
পর থেকে।
বলে, “হু
জানিসই তো
আমার ফোন
নেই। আর
বিনা দরকারে
ফোন করে
বিরক্তই বা
করব কেন
তোকে বল?”
নিবিড়ের দিক
থেকে এই
প্রশ্নের কোন
উত্তর আসেনা।
কী বলবে
সে এই
মেয়েকে? দরকারের
বাইরেও যে
কী দরকার
থাকতে পারে
তা একে
কে বোঝাবে?
নিঝুম কিছুক্ষণ
উত্তরের আশায়
থেকে বলে,
“কেমন আছিস?মামাবাড়ি কেমন
ঘুরছিস?” নিবিড়
বলে, “ভালো।
তুই কেমন
আছিস?” ঝর্ণার
বহমান পানির
মতো কলকল
করে ওঠে
এবার নিঝুমের
কণ্ঠ, “আমি
তো আজ
থেকে অনেক
ভালো থাকব!
আজ যে
আমার বন্ধুকে
তার প্রিয়তমার
সাথে মিলিয়ে
দেবো!”, বলে
হাসতে থাকে
নিঃশব্দে। নিবিড় হাসির শব্দ না
শুনতে পেলেও
কণ্ঠ শুনেই
বুঝতে পারে
যে নিঝুমের
ঠোঁটে এখন
একটুকরো হাসিঝলমল
করছে। কিন্তু
কথাটা শুনে
যে তার
মেজাজ খারাপ
হয়ে গেছে।
কীসের কথা
বলছে নিঝুম
তা সে
খুব ভালমতই
বুঝতে পারছে।
আর এটাও
বুঝতে পারছে
যে আজ
আর আর
ছাড়াছাড়ি নেই,
বলেই ছাড়বে
নিঝুম।তবুও শেষ চেষ্টা করে দেখে,
না বুঝার
ভান করে,
“কী বলছিস?
কার কি
প্রিয়তমা না
ছাতা??” নিঝুম
রাগেনা। নিবিড়ের
চালাকি তার
কাছে ধরা
পড়ে গেছে।
ইচ্ছে করেই
না বুঝার
ভান করছে
নিবিড়। এবার
একটু শব্দ
করেই হেসে
ওঠে সে,
“আহা বাছাধন
বোঝনা কিছু
তাই না?আচ্ছা ভালমত
বুঝিয়ে দিচ্ছি,
শোন, আজ
আমি রূপাকে
বলে দেবো
যে তুই
ওকে পছন্দ
করিস।এবার বুঝেছিস তো? দ্বিতীয়বার যাতে
আবার না
বুঝান লাগে।”
“নিঝু পাগলামি
করিস না!আমি ওকে
পছন্দ করিনা।”,
বেশ একটু
রাগত কণ্ঠে
বলে ওঠে
নিবিড়। নিঝুম
শুনতে চায়না,বলে, “পছন্দ
করিস না
তো ওকে
মিসডকল দিতি
কেন রোজ?”
উত্তর দেয়না
নিবিড়। নিঝুম
বলে, “কী?
উত্তর দিতে
পারলিনা তো?
কীভাবে দিবি?
ওকে পছন্দ
করিস যে!
আর ও
ও তোকে
পছন্দ করে
রে। আমি
গেলাম বলতে।”
এবার সাংঘাতিক
রেগে যায়
নিবিড়, “দুত্তোর!
কিচ্ছু বুঝতে
চায়না কিছুনা!
ঠিক আছে
যা বল
গে যেয়ে!”,
বলে ফোন
রেখে দেয়।
নিঝুম এহেন
রাগে একটু
অপ্রস্তুত হয়ে পরে। আবার ফোন
করতে যায়
নিবিড়কে, কিন্তু
সেই সময়ে
রূপাকে আসতে
দেখে আর
ফোন করেনা,
ক্লাসে চলে
যায়। যেয়ে
দেখে ক্লাস
শুরু হয়ে
গেছে। নিলীমার
পাশে যেয়ে
ফোনটা ওর
হাতে গুঁজে
দিতে দিতে
ফিসফিস করে
বলে, “বলতে
বলেছে, কিন্তু
খুব রেগে
গেছে কেন
জানি।” বান্ধবীর
বেচারা মুখটার
দিকে তাকিয়ে
হাসি চাপতে
পারেনা নিলীমা,
বলে, “বেশ
হয়েছে! তোমার
উপর রাগাই
উচিত!” নিলীমা
জিগ্যেস করতে
যাবে “কেন?”,
এই সময়
রূপা এসে
ওদের সামনের
সীটে বসে।
এখন আর
রূপা আর
নিবিড়কে নিয়ে
কথা বলা
যাবেনা বুঝে
নিঝুম চুপ
হয়ে যায়,
শুধু মুচকি
হেসে একটা
ইশারা করে
নিলীমাকে যে
এসে গেছে,
আর দেরি
নেই।নিলীমা আবার নিঝুমের আনন্দ দেখে
আনমনা হয়ে
পড়তে থাকে।
ক্লাস
চলছে। এখন
কথা বলার
উপায় নেই।
সুতরাং ধৈর্য
ধরতেই হয়
নিঝুমকে। দীর্ঘ
দেড়টি ঘণ্টা
পর সে
সুযোগ পায়
রূপার সাথে
কথা বলার।
ক্লাস শেষ
তখন। রূপা
চলে যাচ্ছিল।
নিঝুম ডেকে
বসায়, “রূপা
একটু বসবে?
কথা আছে।”
পাশ থেকে
নীলিমারও হাত
চেপে ধরে
রাখে। রূপা
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে
তাকিয়ে বসে
পড়ে আবার।
ক্লাসটা খালি
হবার সময়
দেয় নিঝুম।
যখন ক্লাসে
তারা তিনজন
ছাড়া আর
কেউ নেই,
তখন মুখ
খোলে।কিন্তু সাথে সাথেই আবার বন্ধ
করে ফেলে,
এত সিরিয়াস
কথা তো
সে জীবনে
কারো সাথে
বলেনি। সারাজীবন
বন্ধুদের সাথে
ফাজলামি, দুষ্টুমি
করে সময়
কেটেছে তার।
বন্ধুমহলের অন্যতম প্রাণ হিসেবে পরিচিত
এই নিঝুম।
এখন এত
গুরুত্বপূর্ণ, গম্ভীর কথা সে কীভাবে
বলবে? তাও
আবার নিজের
না, বন্ধুর
প্রেমের প্রস্তাব
দিতে হবে!
“ইশশি বড্ড
ভুল হয়েগেছে,
প্র্যাকটিস করা উচিত ছিল একটু।”,
ভাবতে ভাবতে
মাথা চুলকাতে
থাকে নিজের
অজান্তেই।“কী হয়েছে নিঝুম? কী
বলবে?”, রূপার
প্রশ্নে থতমত
খেয়ে যায়
নিঝুম। অবশেষে
যা থাকে
কপালে ভেবে
হড়বড় করে
বলে ফেলে,
“রূপা নিবিড়
তোমাকে ভীষণ
পছন্দ করে।
আমি জানি
তুমিও ওকে
পছন্দ কর।
কিন্তু কেউই
কাউকে বলতে
পারছনা। তাই
আমিই নিবিড়ের
পক্ষ থেকে
তোমাকে প্রপোস
করছি।” বলে
যেমন আচমকা
শুরু করেছিল
তেমন আচমকাই
চুপ হয়ে
যায় নিঝুম।
সারা ক্লাসরুমে
কেমন একটা
নিস্তব্ধতা নেমে আসে। সবকিছু বড়
চুপচাপ। রূপা
চেয়ে আছে
নিঝুমের দিকে।
তাকিয়ে থাকতে
পারেনা নিঝুম
রূপার চোখে।
নিলীমার হাত
থেকে ফোন
নিয়ে দ্রুত
নিবিড়কে মেসেজ
করে দেয়,
“বললাম।” তারপর
আবার তাকায়
রূপার দিকে।
কী উত্তর
দেবে রূপা?
পরদিন।
নিবিড় পাগলের
মতো নিলীমাকে
ফোন করে
যাচ্ছে, “কোথায়
গেল ও?
যেভাবে হোক
ওকে খুঁজে
দে নিলীমা।
আমি তো
ওকে মানা
করেছিলাম, ও শুনল না।” সকাল
থেকে রাত
পর্যন্ত কয়েকটা
মানুষ তন্ন
তন্ন করে
খোঁজে নিঝুমকে।
বাসায় ফোন
দিলে ব্যস্ত
আছে বলে
ফোন ধরছে
না, মোবাইলও
নেই যে
ফোন করে
পাওয়া যাবে।
নিবিড়ের অবস্থা
পাগলপ্রায়। কী করবে কিছুই বুঝে
পাচ্ছেনা। শহরে থাকলে তাও মাকে
বলে কোনভাবে
নিঝুমের বাসায়
চলে যাওয়া
যেত, কিন্তু
সে তো
আছে মামাবাড়ি!
কেন যে
এত বোকা
আর জেদী
মেয়েটা!!! নিজের উপরই রেগে যায়
নিবিড়।গতকালের ঘটনা ভেসে আসে চোখের
সামনে। কাল
নিঝুম মেসেজ
দেওয়ার পর
সে সাথে
সাথে রিপ্লাই
করেছিল রূপা
কী বলেছে
জানতে চেয়ে।বেশ
কিছুক্ষণ পর
নিঝুম শুধু
একটা শব্দ
লিখেছে রিপ্লাইয়ে,
“স্যরি।” তারপর
থেকে আর
কোন খোঁজ
পায়নি নিবিড়
নিঝুমের। নিবিড়
জিগ্যেস করেছে
কিসের জন্য
স্যরি, কোন
রিপ্লাই নেই।
একঘণ্টা কেটে
যাওয়ার পর
আর না
পেরে ফোন
দিয়েছে নিলীমার
নাম্বারে। নিলীমা ফোন ধরে জানিয়েছে
নিঝুম চলে
গেছে। আর
জানিয়েছে কী
হয়েছে। নিঝুমের
কথার পর
রূপা একটা
বিস্ময়ের অভিব্যক্তি
নিয়ে নিঝুমের
দিকে তাকিয়ে
থেকেছে। তারপর
বলেছে, “কী
বলছ তুমি
নিঝুম? এটা
সম্ভব না।
আমার পরিবারের
লোকেরা জানলে
আমাকে মেরে
ফেলবে। নিবিড়
আর আমার
মধ্যে এমন
কিছুই নেই।
নিবিড় আমাকে
পছন্দ করেনা।
আমরা শুধুই
বন্ধু।” এরপর
চলে গেছে।
নিঝুম বসে
থেকেছে বজ্রাহতের
মতো। টেরও
পায়নি তার
পাশে বসে
থাকা নিলীমা
কখন একটা
স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলেছে রূপার
উত্তর শুনে।
কিন্তু নিঝুম?
তার চোখ
যে ভিজে
উঠেছে জলে।
বৃষ্টির ফোঁটার
মতো টপটপ
করে ঝরতে
থাকে নীরবে।
নিলীমা কী
বলে সান্ত্বনা
দেবে বুঝে
উঠতে পারেনা।
বান্ধবীর অবস্থা
দেখে আবারও
ভাবতে শুরু
করে, এই
মেয়ে এত
বোকা কেন?
মুখে বলে,
“কাঁদিস না
নিঝুম। আমি
তো তোকে
আগেই মানা
করেছিলাম।” নিঝুম কাঁদতে কাদতেই বলে,
“কিন্তু রূপার
চোখে যে
আমি নিবিড়ের
জন্য ভালবাসা
দেখেছি রে,
সেটা তো
মিথ্যা নয়।
ও কেন
মানা করল?
এখন নিবিড়ের
কী হবে?”
নিলীমা বলে,
“রূপা কেন
মানা করে
দিল তা
তো আমি
জানিনা। কিন্তু
নিবিড় শুনলে
হয়তো খুশিই
হবে।” অঝোর
কান্নার মধ্যেও
ঝাঁঝিয়ে ওঠে
নিঝুম, “খুশি
হবে কেন?যাকে পছন্দ
করে সে
মানা করে
দিলে কি
কেউ খুশি
হয়??” নিলীমা
উত্তর দেয়
না। নিঝুম
আস্তে আস্তে
বলে এরপর,
“কিন্তু নিলী,
আমি যে
ওদের বন্ধুত্ব
নষ্ট করে
দিলাম। এরপর
তো রূপা
আর নিবিড়
কখনোই স্বাভাবিকভাবে
কথা বলতে
পারবেনা হয়তো।
ভালবাসা তো
গেলই,আমার
জন্য নিবিড়
তার বন্ধুও
হারিয়ে ফেলল।”
অদ্ভুত এক
অপরাধবোধে ছেয়ে যায় নিঝুমের মন।
কিছুতেই কান্না
থামাতে পারেনা
সে। নিলীমা
ওকে বলে,
“নিবিড় মেসেজ
দিয়েছে,রিপ্লাই
কর।” নিঝুম
বলে, “কী
রিপ্লাই করব?
আমি যে
ওর কাছে
অপরাধী। আমি
চাইনা ওর
জীবনে আর
আমি থাকি।
একটার পর
একটা ক্ষতিই
করে যাবো
হয়তো এরপর।
আমি আর
ওর সাথে
বন্ধুত্ব রাখব
না। ” বলে
নিবিড়কে “স্যরি”
লিখে পাঠিয়ে
বের হয়ে
যায় ক্লাস
থেকে, নিলীমাকে
কিছু বলার
সুযোগ না
দিয়েই। সবকিছু
শোনার পর
নিবিড় রূপাকে
নিয়ে একটা
কথাও বলেনি,
শুধু পাগলের
মতো নিলীমাকে
বারবার অনুরোধ
করেছে নিঝুমের
একটা খোঁজ
করে দিতে।
আজ দ্বিতীয়
দিন, নিঝুমের
এখনও কোন
খোঁজ নেই।
কাল থেকে
নিলীমা, প্রজ্ঞা
কাউকে বাদ
রাখেনি নিবিড়
নিঝুমকে একটা
বার খুঁজে
দেওয়ার কথা
বলতে। কিন্তু
নিঝুম কারো
কোন যোগাযোগেরই
সাড়া দিচ্ছেনা।
মামাবাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে নিস্ফল আক্রোশে
বাতাসে থাবা
মারে নিবিড়।
ইচ্ছে হয়
এখনই নিঝুমের
কাছে ছুটে
যায়, এই
পাগলামি আর
টেনশনের জন্য
অবুঝ মেয়েটাকে
দু-চার
ঘা লাগিয়ে
বুকে টেনে
নেয়, বলে,
“নিঝুম...” কিন্তু কী বলবে কোনমতেই
ভেবে পায়না
নিবিড়। নিজের
কাছেই নিজেকে
বড় অসহায়
মনে হতে
থাকে।
কাল
বাসায় চলে
যাওয়ার পর
সোজা নিজের
রুমে যেয়ে
দরজা বন্ধ
করে দিয়েছে
নিঝুম। কেঁদেছে
অনেকক্ষণ। এটা সে কী করল?
নিজের এতদিনের
বন্ধুর বন্ধুত্বকে
রাখতে দিল
না? রূপা
ওকে ভালো
বাসুক না
বাসুক,এতদিন
তো কথাটা
দুজনের কাছেই
না- বলা
ছিল। নিঝুম
বলে দেওয়ার
পর আর
কি তারা
সারাজীবনেও স্বাভাবিকভাবে বন্ধুর মতো পথ
চলতে পারবে
সত্যিটাকে উপেক্ষা করে? কাঁদতে কাঁদতে
কখন ঘুমিয়ে
পড়েছে জানে
না। রাতে
মা’র
ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংলে উঠে কোনমতে
নাকেমুখে কিছু
গুঁজেছে। মা’র কাছে
শুনেছে প্রজ্ঞা
আর নিলীমা
ফোন করেছিল।
বলে দিয়েছে
তার শরীরটা
খারাপ, এখন
কারো সাথে
কথা বলতে
ভালো লাগছেনা,
তাই আবার
ফোন করলে
মা যাতে
বলে যে
সে ব্যস্ত
আছে। বলে
আবার উঠে
নিজের রুমে
চলে গেছে।
নিঝুমের মা
মেয়ের চোখমুখ
ফোলা কেন,
জ্বর এসেছে
নাকি জিগ্যেস
করতে যাচ্ছিলেন,
কিন্তু নিঝুম
কোন সুযোগ
দেয়নি, যেয়ে
শুয়ে পরেছে।
আজ যখন
রাতের অন্ধকারে
পুকুরপাড়ে একলা দাঁড়িয়ে নিবিড় তার
কথা ভাবছে,
ঠিক একই
সময়ে নিঝুমও
ভাবছে নিবিড়ের
কথা। চুপচাপ
জানালা দিয়ে
বাইরে তাকিয়ে
আছে নিঝুম।
ভাবছে বন্ধুর
সামনে এরপর
কোন মুখে
দাঁড়াবে সে
কালকের পর।
ভেবে চিন্তে
ঠিক করে
যে না,
তার কোন
অধিকার নেই
নিবিড়ের জীবন
নষ্ট করার।
একবারই যথেষ্ট
হয়েছে, আর
না। আর
নিবিড়ের সাথে
সে যোগাযোগ
করবেনা। সারাদিন
এভাবেই অন্যমনস্ক
হয়ে থেকেছে
আজ নিঝুম।
ক্লাস ছিলনা
কোন, তাই
বাইরেও যায়নি।
পুরোটা দিন
আকাশে মেঘ
আর সূর্যের
লুকোচুরি খেলা
দেখেছে। এখন
দেখছে ভরপুর
জ্যোৎস্নায় আলোকিত হয়ে ওঠা প্রকৃতি।
চাঁদ আর
মেঘ, বড়
পছন্দ নিঝুমের।
শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন
প্রকৃতিতে আজ দুটোই বিদ্যমান। তন্ময়
হয়ে দেখতে
থাকে নিঝুম।
আর মন
ভেসে যেতে
থাকে বহুদূরের
কোন নিবিড়
আর রূপার
কাছে। আপনা
থেকেই বারবার
বৃষ্টি নামে
চোখের কোল
বেয়ে।
নিঝুমের
মা কোনমতেই
মেয়ের এরকম
চুপ হয়ে
থাকা আচরণ
মেলাতে পারছেন
না তার
রোজকার আচরণের
সাথে। নাম
নিঝুম হলে
কী হবে,
মেয়ে তাঁর
মোটেই নিঝুম
নয়। সারা
বাড়ি মাতিয়ে
রাখে সবসময়
মেয়েটা। যেখানে
হাসির কিছুই
নেই, সেখান
থেকেও কী
করে যেন
হাসির খোরাক
বের করে
ফেলে। সবকিছু
নিয়ে ফাজলামির
জন্য মায়ের
কাছে বকুনিও
কম খায়
না, তবুও
থামেনা তার
দুষ্টুমি, ফাজলামি। সেই মেয়ে দুদিন
ধরে একদম
নিশ্চুপ। কিছু
জিগ্যেস করলে
দায়সারা জবাব
দিচ্ছে, বেশিরভাগ
সময়ই কাটিয়ে
দিচ্ছে ঘুমিয়ে।
আজও প্রজ্ঞা
আর নিলীমা
কয়েকবার করে
ফোন করেছে,
ধরেনি নিঝুম।
ওদের জিগ্যেস
করেছেন যে
কিছু হয়েছে
নাকি, নিঝুম
ওদের সাথে
কথা বলছেনা
কেন। ওরা
কোন সন্তোষজনক
উত্তর না
দিয়েই ফোন
রেখে দিয়েছে।
শেষে ভেবেছেন
কোন মান
অভিমান হয়েছে
হয়তো ওদের
সাথে, অভিমান
তো খুব
বেশি নিঝুমের।
কিন্তু তাই
বলে নিজে
এমন চুপ
হয়ে যাবে,
এমন মেয়ে
তো সে
নয়। নিঝুমকে
কী হয়েছে
যে জিগ্যেস
করবেন, সে
সাহসটাও পাচ্ছেন
না নিঝুমের
মা, জানেন
মেয়ের চাপা
স্বভাব, হাজার
সমস্যায় পড়লেও
কোনদিন কাউকে
কিচ্ছু বলবে
না। কী
আর করা,
একটা নিঃশ্বাস
ফেলে নিবিড়ের
মা কে
ফোন করেন
তিনি, মেয়ের
ব্যাপারে যে
কোন কথায়
বান্ধবীর মতামতকে
তিনি সবচেয়ে
বেশি গুরুত্ব
দেন। মেয়ে
তাঁর পেটের
হলেও নিঝুমের
মতো তিনিও
নিবিড়ের মাকে
নিঝুমের মা’র সম্মানই
দিয়ে এসেছেন।
তাই ওকে
নিয়ে যে
কোন ব্যাপারে
নিবিড়ের মা’র মতামত
নেওয়া জরুরি।
রিং বেজেই
চলে ল্যান্ডলাইনে,কেউ ধরেনা।
বেশ কয়েকবার
করার পর
মনে পরে
নিবিড়দের তো
রাজশাহী যাওয়ার
কথা, সুতরাং
এখন না
পাওয়ারই কথা।
নিবিড়ের মোবাইলে
করবেন নাকি
ভাবেন, তারপর
সময়ের দিকে
তাকিয়ে বোঝেন
যে এতরাতে
‘মেয়ে কেন
চুপ’ এই
ইস্যু নিয়ে
বান্ধবীকে বিরক্ত করা ঠিক হবেনা।
খানিকটা হতাশ
হয়েই ফোনটা
নামিয়ে রাখেন
তিনি। নিঝুমের
রুমে যেয়ে
দেখেন মেয়েটা
আবার ঘুমিয়ে
পড়েছে, রাতে
খেলোও না
আজ। অস্থিরচিত্তে
নিজের রুমে
ফিরে আসেন
তিনি। নিঝুমের
বাবাকে যে
বলবেন, তাও
পারছেন না,
মহা হৈচৈ
লাগিয়ে দেবেন
তাহলে কন্যাপাগল
বাবা, অথচ
শেষে দেখা
যাবে কিছুই
না। নিজের
মনের অশান্তি
মনেই রেখে
দেন নিঝুমের
মা।
মা'র উপস্থিতি
টের পেয়ে
চোখ বন্ধ
করে ফেললেও
আসলে নিঝুম
ঘুমায়নি। মা
চলে যাওয়ার
পর আবার
তাকায়, একদৃষ্টিতে
ছাদের দিকে
তাকিয়ে থাকে,
মন জুড়ে
কেমন একটা
অবসাদ। বারবার
নিবিড়ের নামটা
ঘুরেফিরে বাজতে
থাকে কানের
কাছে। আর
সেই সাথে
বন্ধুকে কষ্ট
দেওয়ার বেদনায়
বারবার হৃদয়
মোচড় দিয়ে
ওঠে।
চোখে
ভোরের আলো
এসে পড়ায়
ঘুম ভেঙ্গে
যায় নিঝুমের।
তবে চোখ
খোলে না।
পাশ ফিরে
শোয়। চোখের
পাতাগুলো অসম্ভব
ভারি হয়ে
আছে,চোখ
না খুলেই
বুঝতে পারে।
ঘুমের মধ্যেও
কেঁদেছে সম্ভবত।
অবসাদটা ফিরে
আসে আবার
মনে। তবে
আজ কিছুটা
প্রকৃতস্থ সে।মা তাকে নিয়ে চিন্তিত
হয়ে পড়েছেন,
কাল বুঝেছে।
তাই অন্তত
বাবা মা’র সামনে
নিজের বিষণ্ণতাটা
প্রকাশ করা
চলবেনা কোনমতেই,
ভাবে সে।
“ওহ আজ
তো আবার
নিলীমার সাথে
ক্লাস আছে।
দুদিন ফোন
করে পায়নি,
আজ নিশ্চয়ই
আমাকে চেপে
ধরবে। আর
তারমানে নিবিড়ের
বিষয়টা নিয়ে
কথা বলবেই...”,
নিজের অজান্তেই
একটা গোঙানি
বের হয়ে
আসে মুখ
থেকে। চোখ
বন্ধ অবস্থাতেই
বিছানার এপাশ
থেকে ওপাশে
শরীরটাকে নিয়ে
যায়। গুটিসুটি
মেরে লেপের
নিচে ঢুকে
যায় আরও
ভালোমতো। ঘুমিয়ে
পড়ে আবার
কখন যেন।
অদ্ভুত একটা
স্বপ্ন দেখে।
অনেকগুলো নিবিড়
তার চারপাশে।
যেদিকেই যাচ্ছে
শুধু নিবিড়
আর নিবিড়।
পালাতে চায়
সে অনেক
দূরে। পারেনা।
হাত টেনে
ধরে রেখেছে
নিবিড়। ছাড়ানোর
চেষ্টা করে,
পারেনা। ধীরে
ধীরে অনেক
নিবিড়ের মুখ
মিলে যায়
একটা নিবিড়ে।
কী যেন
বলতে চাইছে
নিবিড়। কিন্তু
নিঝুম কিছুতেই
শুনতে চাইছেনা।
শেষ পর্যন্ত
জোরে টান
দিয়ে নিজের
খুব কাছে
নিয়ে আসতে
থাকে নিবিড়
নিঝুমকে ... আরও কাছে ... আরও ......ধড়মড়
করে উঠে
বসে নিঝুম।
এই শীতেও
ঘামে ভিজে
গেছে শরীর।
ঘড়ির দিকে
তাকায়, আটটা
বেজে পাঁচ।
তাড়াহুড়ো করে
উঠে পড়ে
ফ্রেশ হতে
দৌড় লাগায়
বাথরুমের দিকে,
ক্লাস আছে
সাড়ে আটটায়।
স্বপ্নটা থেকে
যেন জোর
করে বের
হয়ে আসতে
চায় সে,
একবার ভাবেওনা
যে কী
দেখল, কেন
দেখল, জোর
করে দূরে
সরিয়ে রাখে
স্বপ্নটাকে।
নাস্তার
টেবিলে নিঝুমকে
দেখে স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলেন
মা। আবার
আগের মত
উৎফুল্ল নিঝুম।
এই প্রথমবার
মেয়ের দুষ্টুমিতে
বাধা দেন
না তিনি।
বরং খুশি
হন। ভাবেন
যে মেয়ের
শরীর খারাপ
ছিল হয়ত
এই দুদিন।
মায়ের স্বস্তি
নজর এড়ায়
না নিঝুমের।
তবে কিছু
বলেনা। মাকে
খুশি দেখার
জন্যই তো
তার খুশি
থাকার এই
অভিনয়।
ক্লাসে
যেয়ে দেখে
প্রচুর ছাত্রছাত্রী
হাজির। তবে
নিলীমা তখনও
আসেনি। বেছে
বেছে একদম
পিছনের সীটে
যেয়ে বসে
নিঝুম যাতে
নিলীমা আসলেও
তাকে দেখতে
না পায়।
কিন্তু বিধি
বাম। নিলীমা
ঠিকই খুঁজে
বের করে
ফেলে তার
অবস্থান। নিঝুমের
পাশের সীটে
বসে থাকা
মেয়েটিকে একরকম
জোর করেই
উঠিয়ে দিয়ে
সীটটা দখল
করে। নিঝুম
দেখেও দেখেনা
এসব। চুপচাপ
ক্লাস লেকচার
তুলতে থাকে
খাতায়। নিলীমা
কোন ভুমিকায়
যায়না। সোজা
নিঝুমের কানে
মোবাইল ঠেকিয়ে
দেয়, “কথা
বল।” সে
কিছু বলার
আগেই ওপাশ
থেকে নিবিড়ের
অস্থির, উদ্বিগ্ন
কণ্ঠ ভেসে
আসে, “হ্যালো!”
উত্তর দেয়না
নিঝুম। নিলীমার
দিকে তাকিয়ে
ইশারা করে
ফোনটা তার
হাতে ছেড়ে
দিতে। নিলীমা
দিয়ে দেয়।
ফোন হাতে
পেয়েই নিঝুম
কান থেকে
নামিয়ে নিয়ে
কেটে দেয়।
একটা কথাও
বলেনা নিবিড়ের
সাথে। নিলীমা
রেগে যেয়ে
বলে, “তুই
এটা কী
করলি? তুই
জানিস এই
দুদিন ছেলেটা
কী পরিমাণ
টেনশন করেছে
তোর জন্য?”
নিঝুম উত্তর
দেওয়ার আগেই
আবার ফোনের
স্ক্রিনে নিবিড়ের
নামটা জ্বলতে
নিভতে শুরু
করে। নিঝুম
কেটে দেয়।
নিলীমা এবার
ভীষণ রেগে
যায় নিঝুমের
ওপর। বলে,
“শোন নিঝুম,
তুই বাড়াবাড়ি
করছিস খুব
বেশি। যা
হয়েছে তাতে
তোর তো
কোন দোষ
নেই। এভাবে
নিজেকে আর
আরেকটা মানুষকে
কষ্ট দেওয়ার
মানে কী?
তুই যদি
এবার কথা
না বলিস,
আমি আর
কক্ষনও তোর
সাথে কথা
বলবনা। এটা
আমার শেষ
কথা।” এতক্ষণে
মুখ খোলে
নিঝুম, “এভাবে
আমাকে ব্ল্যাকমেইল
করছিস কেন?”
নিলীমা উত্তর
দেয়, “ব্ল্যাকমেইল
হলে তাইই।
কিন্তু কথা
তোকে বলতেই
হবে নিবিড়ের
সাথে।” হাল
ছেড়ে দেয়
নিঝুম। তবুও
শেষ চেষ্টা
করে, “কিন্তু
এখন তো
ক্লাসে আছি।
স্যারও আছেন
ক্লাসে। এখন
কথা বলা
সম্ভব না।”
নিলীমা এবার
তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে, “কেন লিখতে
জানিস না
নাকি তুই??
নিবিড়কে না
এত এত
মেসেজ দিয়েছিস?
ভাবটা এমন
দেখাচ্ছিস যেন শুধু ফোনেই কথা
হয়েছে। কথা
ক্লাস শেষ
হলে বলবি
দরকার হলে।
এখন এস
এম এস
দে। যা
বলছি কর।”
বান্ধবীর রাগ
দেখে এত
অসহায় অবস্থায়ও
হেসে দেয়
নিঝুম। ফোনের
দিকে তাকায়।
দেখে ইতিমধ্যে
সাতটা মিসডকল
এসে গেছে
নিবিড়ের নাম্বার
থেকে। ফোন
সাইলেন্ট থাকায়
রিং শোনা
যায়নি। আবার
বাজতে শুরু
করে। নিঝুম
কেটে দিয়ে
মেসেজ লেখে,
“আমি ক্লাসে।”
এক মিনিটও
পার হয়না,
উত্তর আসে,
“আমি কিচ্ছু
কেয়ার করিনা।
আই জাস্ট
ওয়ানট টু
টক টু
ইউ রাইট
নাও।” নিঝুম
লেখে, “নিবিড়
একটু বোঝার
চেষ্টা কর
প্লিস। আমি
ক্লাসে আছি।”
নিবিড় উত্তর
দেয়, “ফোন
ধরে একটাবার
শুধু হ্যালো
বল, তারপর
কেটে দিয়ে
মেসেজ দেব।
” অগত্যা তাই
করে নিঝুম।
ফোন আসলে
ধরে “হ্যালো”
বলে। অপর
প্রান্ত থেকে
কিছু বলা
হয়না। ফোন
কেটে যায়।
এরপর অনেক
তর্কবিতর্ক হয় দুজনের মধ্যে মেসেজে।
নিবিড়ের অস্থিরতা,
নিঝুমের দূরে
সরে যাওয়ার
চেষ্টা, আর
নিবিড়ের বারবার
তাকে ধরে
রাখার ব্যাকুলতা,
কাকুতিমিনতিভরা অসংখ্য মেসেজ আদানপ্রদানের পরও
নিঝুমের সিদ্ধান্তের
কোন পরিবর্তন
না হওয়া।
শেষপর্যন্ত নিঝুম লিখে দেয়, “দ্যাখ
নিবিড়, আমার
জন্য তোর
আর রূপার
মধ্যে নরমাল
ফ্রেন্ডশিপটাও নষ্ট হয়ে গেছে। আমি
চাইনা আর
তোর জীবনে
থেকে তোর
আরও বড়
কোন ক্ষতি
করে ফেলতে।
তুই প্লিস
আর আমার
সাথে যোগাযোগ
করিস না।
নতুন একটা
জীবন শুরু
কর যেখানে
কোন নিঝুম
নেই। ভাল
থাকিস। বাই।”
তারপর নিলীমার
হাতে ফোন
দিয়ে দেয়।
রিপ্লাইটা নিলীমার কাছে পরে। সে
মেসেজটা পড়ে
একটা কথাও
না বলে
নিঝুমের চোখের
সামনে তুলে
ধরে ফোনটা।
তাতে লেখা,
“আমি পারবনা।
আমার জীবনে
আমি তোমাকে
চাই, ব্যস
চাই। এরপর
আর একটা
কথাও আমি
শুনতে চাইনা।
রূপার সাথে
বন্ধুত্বের দাম তোমার সাথে এত
বছরের বন্ধুত্বের
থেকে বেশি
না। আর
সত্যি কথা
বলতে গেলে
এমন কোন
গভীর বন্ধুত্ব
নেইও ওর
সাথে আমার
যে তা
নষ্ট হলে
আমার জীবন
চলে যাবে।
আমি আজ
মামাবাড়ি থেকে
ফিরব। আজ
রাতের মধ্যে
যদি কোন
খোঁজ না
পাই তোমার
তাহলে সোজা
তোমার বাসায়
যেয়ে উপস্থিত
হব। এখন
তুমি ভেবে
দেখ কী
করবে।” নিবিড়ের
এমন অবুঝ
কথায় নিঝুম
নির্বাক হয়ে
যায়। নিলীমা
আস্তে আস্তে
বলে, “এই
মানুষটাকে হারাসনা রে নিঝু। ” আর
কোন কথা
হয়না দুজনের
মাঝে এরপর।
ক্লাস শেষ
হয়ে যায়
একটু পর।
নিঝুম বের
হয়ে দেখে
তার গাড়ি
এসেছে। ড্রাইভারকে
জিজ্ঞেস করে
কেউ আসেনি
কেন বাসা
থেকে। ড্রাইভার
বলে যে
হঠাৎ জরুরি
কাজ পড়ে
যাওয়ায় কেউ
আসতে পারেনি।
বাসায় ফিরে
ভীষণ একটা
দুঃসংবাদের সম্মুখীন হয় নিঝুম।
ফেরার
সময় নিঝুম
কল্পনাও করতে
পারেনি তার
জন্য এরকম
একটি খবর
অপেক্ষা করে
থাকবে। বাড়ি
ফিরে দেখে
কেউ নেই।
কোথায় গেল
সবাই ভাবতে
ভাবতেই ল্যান্ডলাইনটা
বেজে ওঠে।
ফোন ধরে
নিঝুম। মা।
“কোথায় গেছ
মা??”, মা’র গলা
শোনার সাথে
সাথে ভয়
আর উদ্বেগমিশ্রিত
কণ্ঠে প্রশ্ন
করে নিঝুম।
কিন্তু তার
প্রশ্নের কোন
উত্তর না
দিয়ে মা
তাকেই প্রশ্ন
করেন, “কখন
ফিরেছ?” নিঝুম
জানায় যে
মাত্রই বাসায়
ঢুকেছে সে।
এরপর মা
বলেন, “শোন,
বাসার দরজা
ভাল করে
লাগিয়ে সাবধানে
থাক। আর
ফ্রিজে খাবার
আছে, গরম
করে খেয়ে
নিও। আমি
তোমার বাবার
সাথে হসপিটালে।
ওঁর হঠাৎ
হার্টঅ্যাটাক করেছে। অপারেশন লাগবে সম্ভবত।
সাবধানে থাক
মা। আমি
পরিস্থিতি বুঝে আসছি। তাড়াতাড়িই ফেরার
চেষ্টা করব।
তখন তোমাকেও
নিয়ে আসব
সম্ভব হলে।”
বলে নিঝুমকে
কোন কথা
বলার সুযোগ
না দিয়েই
ফোনটা কেটে
দেন তিনি।
নিঝুম তখনও
ফোন ধরেই
রেখেছে। নিজের
কানকে বিশ্বাস
করতে পারছেনা
সে। বাবা
হার্টঅ্যাটাক করেছেন! নিজের অজান্তেই হাঁটু
ভাঁজ হয়ে
আসে তার।
কোনমতে ফোনটা
ক্রেডলে রেখে
মেঝেতেই বসে
পড়ে সে।
সমস্ত বোধবুদ্ধি,
আবেগ কোথায়
হারিয়ে গেছে
যেন। কাঁদতেও
পারছেনা। বাবা
কোন হসপিটালে
আছে নামটাও
তো জানা
হয়নি তার।
হঠাৎ করেই
নিজেকে বড়
অসহায় লাগতে
থাকে নিঝুমের।
বাবা...
ক্রিং
ক্রিং! ক্রিং
ক্রিং! ফোনের
শব্দে বাস্তবে
ফিরে আসে
নিঝুম। কতক্ষণ
একভাবে বসে
আছে সে
নিজেই জানেনা।
কেমন একটা
ঘোরের মধ্যে
ছিল। ফোনের
দিকে তাকিয়ে
থাকে অপলকে।
বাজছে, ধরতে
হবে, কোন
খেয়ালই নেই
যেন তার।
ক্রিং ক্রিং!
এবার যেন
কারেন্টের শক খেয়ে হুঁশ ফেরে,
তাড়াহুড়ো করে
ফোন কানে
ঠেকায়। “হ্যালো!!”
মা করেছেন
আবার। জানান
যে ডাক্তাররা
বলছেন এখন
বাবা বিপদমুক্ত।
কয়েকদিন ভর্তি
থাকতে হবে,
তারপর অপারেশন
করা হবে।
তবে আপাতত
আর কোন
ভয় নেই।
অনেকটা আশ্বস্ত
হয়ে ফোন
রাখে নিঝুম।
এবার হসপিটালের
নামও জেনে
নিয়েছে। মা
চলে আসবেন
একটু পরেই।
ইতিমধ্যে আত্মীয়
স্বজনদের ফোন
আসা শুরু
হয়ে গেছে।
সবার একই
প্রশ্ন, কী
হয়েছে বাবার
আর অভয়
প্রদান। একনাগাড়ে
অনেকগুলো কল
অ্যাটেনড করে
একটু হাঁপিয়ে
ওঠে নিঝুম।
বসে না
থেকে একটু
হাঁটাচলা করে।
অসম্ভব শূন্যতা
অনুভব করে
এইসময়। ফাঁকা
বাড়িটা যেন
তাকে গিলে
নিতে চাইছে।
হঠাৎ স্পষ্ট
শুনতে পায়
মা তাকে
ডাকছে ড্রয়িং
রুম থেকে,
“নিঝুম! নিঝুম!”
অথচ মা
তো বাসায়
নেই। তাহলে?
তাহলে কে
ডাকছে? তবে
কি মনের
ভুল? কেমন
একটা ভয়
ধরে যায়
নিঝুমের মনে।
একছুটে মা’র ঘরে
এসে বসে
পড়ে বিছানায়।
বিকেলে মা
আসা পর্যন্ত
আর একটাবারের
জন্যও বের
হয়না ওই
ঘর থেকে,
দুপুরে খায়
পর্যন্ত না।
মা
আসেন বিকেলে।
তাঁর কাছ
থেকে জানতে
পারে নিঝুম
যে সে
চলে যাওয়ার
কিছুক্ষন পরই
হঠাৎ ভীষণ
ব্যথা হতে
থাকে বাবার
বুকে। পারিবারিক
ডাক্তারের কাছে ফোন করলে তিনি
বলেন যত
দ্রুত সম্ভব
হাসপাতালে মুভ করাতে। হাসপাতালে নেওয়ার
পর আই
সি ইউ
তে নিয়ে
যাওয়া হয়
বাবাকে। কিছুক্ষণ
পর ডাক্তাররা
জানান মাইল্ড
একটা অ্যাটাক
হয়েছে তাঁর,
অপারেশন করতে
হতে পারে।
আরও দু-তিন ঘণ্টা
পর জানা
যায় হার্টে
কিছু ব্লক
আছে বলে
ধারণা করা
হচ্ছে, অপারেশন
লাগবে। তবে
আপাতত ভয়ের
কোন কারণ
নেই বলেও
জানিয়েছেন ডাক্তাররা। কিছু টেস্ট দিয়েছেন,
সেগুলো করার
পর নিশ্চিত
হওয়া যাবে
এখন ঠিক
কী অবস্থা
তাঁর হৃদযন্ত্রের।
এখন ঘুমের
ওষুধ দিয়ে
রাখা হয়েছে,
ঘুমুচ্ছেন। সেই ফাঁকে মা বাসায়
এসেছেন। সারাদিন
অভুক্ত আর
অসম্ভব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত
মাকে জোর
করে খাওয়ায়
নিঝুম, নিজেও
কিছু খায়
কোনমতে। মা
আবার হসপিটালে
যাওয়ার জন্য
বের হবেন
একটু পরেই।
এবার নিঝুমকেও
নিয়ে যাবেন
বলেন।
হসপিটালে
গেলেও বাবার
সাথে দেখা
হয়না। এখনও
অবজারভেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। রাতে
থাকারও কোন
ব্যবস্থা নেই
তাই। কিছুটা
হতাশ মন
নিয়েই বাড়ি
ফেরে মা-মেয়ে। তবে
ডাক্তাররা আশ্বাস দিয়েছেন ভয়ের কিছু
নেই বলে,
এটুকুই সান্ত্বনা।
বাড়ি
ফিরে আর
পড়তে মন
চায় না
নিঝুমের। মা
রান্নাঘরে ব্যস্ত। ফিরেই নিবিড়ের মাকে
ফোন করেছিলেন
বিপদের কথা
জানিয়ে। তাদের
কথোপকথনে থাকেনি
নিঝুম। নিজের
রুমে চলে
আসে। চেঞ্জ
করে বিছানায়
গড়িয়ে পড়ে।
জানালার ধারেই
বিছানা। উলটো
হয়ে শুয়ে
কত কী
আকাশ-পাতাল
ভাবতে থাকে
সে। এমন
সময় মা’র ডাক
শুনে উঠে
আসে। নিলীমা
ফোন করেছে।
নিঝুমের বাবার
খবর জানতে
চায়। নিঝুম
জানতে চায়
যে সে
কীভাবে জানল
তার বাবা
অসুস্থ, সে
তো কোন
বন্ধুবান্ধবকে জানায়নি এখনও। নিলীমা বলে
নিবিড় একটু
আগে তাকে
একটা মেসেজ
পাঠিয়েছে, তা থেকে জেনেছে আঙ্কেল
হসপিটালে। মেসেজটা পড়ে শোনায় নিঝুমকে।
মুলত তাকেই
উদ্দেশ্য করে
লেখা মেসেজের
কথাগুলো। লিখেছে,
“নিঝুমকে বলিস
ও যদি
আমাকে বন্ধু
বা আর
কিছুও মনে
করে তাহলে
যাতে জেনে
রাখে যে
ওর এই
বিপদে আমি
ওর পাশেই
আছি, ও
একা না।
ও যাতে
ভয় না
পায়, আঙ্কেল
ভাল হয়ে
যাবেন নিশ্চয়ই।”
কথাগুলো শুনতে
শুনতে কেমন
অদ্ভুত একটা
শিহরণ খেলে
যায় নিঝুমের
শরীরে। তবে
নিলীমাকে কিছু
টের পেতে
দেয়না। বলে,
“হুম।” নিলীমা
বলে, “প্লিস
এবার একটা
মেসেজ দিস
নিবিড়কে। নিজের
জন্য না
হোক, আমার
জন্য। ” এবার
আর নিলীমার
কথা ফেলে
না সে।
বলে, “আচ্ছা
দেব বাবা।
এখন রাখ,
কাল দেখা
হবে। তুই
চিন্তা করিস
না, আমি
ভাল আছি।”
ফোন রেখে
আবার ফিরে
আসে নিজের
ঘরে। অকারণেই
মনটা ভাল
হয়ে আছে।
কী মনে
করে ডেস্কটপটার
দিকে এগিয়ে
যায়। অন
করে গানের
ফোল্ডারটা বের করে খুঁজে খুঁজে
বের করে
“নিঝুম” লেখা
ফোল্ডারটা। এতে তার প্রিয় শিল্পীর
প্রিয় গানগুলো
রয়েছে। তাই
আলাদা করে
নিজের নামে
ফোল্ডার বানিয়েছে
এই গানগুলো
দিয়ে। সবচেয়ে
প্রিয় গানটা
ছেড়ে দিয়ে
আবার বিছানায়
চলে আসে।
স্পিকারে বাজতে
থাকে,
“নীরবে
হায় এ
মন যে
ভেসে যায়।
জানিনা
যে কোন
স্বপনের সীমায়।
এলোমেলো
মন, ভাবে
শুধু তোমারে
আজ...
শেষ
হবে রাত
শুধু তুমি-আমি আজ।
......................................................
... ... ... ... ... ... ... ...
... ... ... ... ... ...
তুমি
যদি চাও
বৃষ্টি হবে
আজ,
এই
রাতে আকাশের
বুকে।
তুমি
যদি চাও
তবে জোছনা
রবে,
চাঁদ
জেগে রয়
মেঘের ফাঁকে...
এলোমেলো
মন......”
শেষ
লাইনগুলো নিঝুমের
সবচেয়ে প্রিয়।
আর গায়কের
তো কথাই
নেই! পৃথিবীতে
এই একটা
মানুষের উপরই
নিঝুম বাস্তবিক
অর্থে একেবারে,
ফিদা যাকে
বলে। কিন্তু
নিবিড়ের একে
মোটেই পছন্দ
নয়। সেদিন
এসে এই
গায়কের একটা
সিডি ইচ্ছে
করে নিঝুমের
সামনে নষ্ট
করেছে। খুব
রাগ উঠেছিল
সেদিন নিঝুমের।
চাঁদের দিকে
তাকিয়ে গান
শুনতে শুনতে
এসব টুকরো
টুকরো কথা
ভেসে আসতে
থাকে মনে।
রাতে খাবারের
সময় নিবিড়কে
একটা মেসেজ
দেয় নিঝুম
থ্যাঙ্কস জানিয়ে।
এরপর আরও
কিছু ছোটখাটো
কথার পর
বাই দিয়ে
দেয়। বোঝাই
যায় যে
সে মেসেজ
দেওয়ায় নিবিড়
খুব খুশি
হয়েছে। কিন্তু
মন থেকে
নিজেকে মাফ
করতে পারেনা
সে, তাই
ইচ্ছে করেই
বেশি কথা
বাড়ায়নি।
দু-তিন দিনের
মধ্যেই বাবাকে
বাসায় নিয়ে
আসা হয়।
ব্লক ধরা
পড়েছে হার্টে।
অপারেশন করতে
হবে। তবে
তার আগে
কিছুদিন বিশ্রাম
করতে বলেছেন
ডাক্তার, টেস্টগুলোও
করাতে হবে
এই সময়ের
মধ্যে। এই
কয়দিন মা
বাসায় না
থাকলে নিবিড়কে
কল করে
কথা বলেছে
নিঝুম। ছেলেটা
জাদু জানে
মনে হয়।
কী জানি
কেন, ওর
সাথে কথা
বললেই মনটা
আপনা থেকেই
ভাল হয়ে
যায়। নিবিড়
হয়ত রাস্তায়
আছে, কোন
মেয়ে লাইন
মারছে ওর
সাথে। নিঝুমকে
সেই কথা
বলতেই আবার
আগের মত
পিছে লাগে,
খুনসুটি করে।
মাঝে রূপাকে
নিয়েও খুনসুটি
করেছে ওরা।
নিবিড়ের নাম
দিয়েছে নিঝুম
“কার্টুন”।
নিবিড়ের সেই
নামে প্রবল
আপত্তি থাক্লেও
নিঝুম ডাকলে
সাড়া দেয়।
তেমনি একদিন
কার্টুন দেকে
মেসেজ পাঠায়
নিঝুম। সাথে
সাথে প্রবল
আপত্তি আসে
নিবিড়ের দিক
থেকে। তখন
নিঝুম বলে,
“আচ্ছা কার্টুন
হতে নাহয়
আপত্তি বুঝলাম,
কিন্তু রূপার
বর ডাকলে
তো আর
আপত্তি হবেনা
তোর তাই
না?” লিখে
শেষে একটা
ভেংচি কাটার
ইমো জুরে
দেয়। নিবিড়ও
বিশাল একটা
হাসি দিয়ে
বলে, “না
না ওটা
হতে আপত্তি
নেই!” মেসেজটা
দেখে আবারো
একটা ক্ষীণ
আশা জাগে
নিঝুমের মনে।
তবে গতবারের
মত বোকামি
করতে যায়
না আর।
আরও শিওর
হতে হবে,
তারপর কিছু
করা যাবে,
ভাবে সে।
আস্তে আস্তে
স্বাভাবিক হয়ে আসে আবার তাদের
বন্ধুত্ব। ইতিমধ্যে আকাশের সাথেও একটু
মেসেজ বিনিময়
হয়েছে নিঝুমের।
আকাশ জানিয়েছে
সে নিঝুমকে
খুবই মিস
করছে। নিঝুম
বলেছে মিস
করার কিছু
নেই। কিন্তু
আকাশকে মেসেজ
দেওয়ার কথা
শুনে খেপে
যায় নিবিড়
একদিন, সেদিন
নিঝুম তাকে
মিসডকল, মেসেজ
কিছুই দেয়নি।
অথচ আকাশকে
মেসেজ দিয়েছে।
ভীষণ বকাবকি
করে নিঝুমকে।
নিঝুম আবার
একই প্রশ্ন
করে ওকে
যে রোজ
কেন ওর
নিবিড়কে খোঁজ
দিতে হবে,
কিন্তু উত্তরে
আবার বকা
পায়। মন
খারাপ করে
বসে থাকে
কিছুক্ষণ, তারপর বলে যে সে
নিবিড়কে আর
মেসেজ দেবেনা,
কথাই বলবেনা
আর তার
সাথে। এরপর
নিবিড় আর
কী রাগ
করবে, আবার
নিঝুমের মান
ভাঙ্গায় আর
বোঝায় যে
ওর টেনশন
লাগে নিঝুমের
খোঁজ না
পেলে।
দেখতে
দেখতে নতুন
বছর শুরু
হয়ে যায়।
বছরের প্রথম
দিনে নতুন
এক বান্ধবী,
অনন্যার সাথে
নিবিড়ের পরিচয়
করিয়ে দেয়
নিঝুম; অবশ্যই
ফোনে। অনন্যা
নিঝুমের মায়ের
ছোটবেলার এক
বান্ধবীর মেয়ে।
নিঝুম আর
অনন্যা একই
স্কুলের একই
ক্লাসে পড়লেও
কখনও তাদের
মধ্যে তেমন
কথা হয়নি।
তারা জানতও
না যে
তাদের মা’রা পরিচিত।
হঠাৎ একদিন
নিঝুমের মায়ের
সাথে অনন্যার
মা’র
দেখা হতেই
জানা যায়
যে নিঝুম
আর অনন্যা
তাঁদেরই মেয়ে।
সেই সুত্রেই
বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নিঝুম
আর অনন্যার
মাঝে। অনন্যা
আজকালকার মেয়ে।
শ্যামলা বর্ণ
আর ছোটখাটো
গরনের অনন্যা
দেখতে খারাপ
নয়, তবে
অতটা আহামরিও
নয়। তবুও
তার বয়ফ্রেন্ডের
সংখ্যা ইতিমধ্যেই
তিন ছাড়িয়েছে।
আগের দুজনের
সাথে ব্রেক
আপের পর
নতুন একজন
হয়েছে এর
মাঝেই। তবে
ফোনে কথা
বলার মত
ছেলের অভাব
নেই তার
লিস্টে। অনন্যার
একটাই অভিযোগ
যে তাকে
অনেক ছেলেই
“বোন” ডাকলেও
নাকি পরে
আর তার
সাথে বোনের
সম্পর্ক রাখতে
চায় না,
অন্য কিছু
হিসেবে পেতে
চায় তাকে।
সেজন্যই নিবিড়ের
সাথে পরিচয়
করিয়ে দেয়
তাকে নিঝুম,
কারণ তার
মতে নিবিড়
কাউকে বোন
ডাকলে তার
কাছে সে
বোনই থাকে
সবসময়। সে
অন্য ছেলেদের
মত নয়।
ভালভাবেই গ্রহণ
করে অনন্যাকে
নিবিড়। তবে
অল্প কিছুদিনের
মধ্যেই নিঝুম
টের পায়
যে এদের
মধ্যে সম্পর্কটা
ঠিক ভাইবোনের
মত থাকছে
না। অন্তত
অনন্যার দিক
থেকে। তবে
নিবিড়ের ব্যাপারে
কিছু সঠিক
করে বুঝতে
পারেনা সে।
তাই চুপ
করে থাকে।
ভালই লাগে
তার ভাবতে
যে নিবিড়
আর অনন্যার
মধ্যে কিছু
একটা আছে।
কারণ বন্ধুর
হৃদয় সে
একবার ভেঙ্গে
দিয়েছে, তা
আবার জোড়া
লাগুক এটা
সে আন্তরিকভাবেই
চায়।
বেশ
কিছুদিন পর।
নিঝুমের বাবার
অপারেশন হয়ে
গেছে। বাসায়
নিয়ে আসা
হয়েছে তাঁকে।
এখন দেড়
মাসের বিশ্রাম
শুধু। অনেকেই
আসছে দেখতে।
নিবিড় আর
তার মাও
আসেন এক
বিকেলে। এসে
আঙ্কেলের সাথে
দেখা করে
নিঝুমের সাথে
ওর রুমে
চলে আসে
নিবিড়। এই
কথা সেই
কথার পর
অনন্যার কথায়
আসে। ওর
কথা শুনে
নিঝুমের মনে
হয় অনন্যাকে
ভাল লাগতে
শুরু করেছে
তার। তাই
খুনসুটি করে
আবার। অনন্যাকে
নিবিড়ের “বউ”
বলে ডাকা
শুরু করে।
নিবিড়ের দিক
থেকেও তেমন
আপত্তি দেখা
যায় না।
তার কাছে
এটা শুধুই
নিঝুমের দুষ্টুমি।
তাই সে-ও সাড়া
দেয় এই
দুষ্টুমিতে। কথায় কথায় নিবিড়কে আবারও
স্যরি বলে
নিঝুম রূপার
ব্যাপারটা নিয়ে। সেই ঘটনার পর
আজই তাদের
প্রথম দেখা।
তাই সামনাসামনি
ক্ষমা চেয়ে
নেয় নিঝুম।
কিন্তু নিবিড়
তাকে একটা
অদ্ভুত কথা
বলে, “তুই
কখনও স্যরি
বলবিনা নিঝু।
তোর মুখে
স্যরি মানায়
না। তুই
স্যরি বললে
তোকে বড়
দুর্বল লাগে।”
এক মুহূর্ত
নিবিড়ের দিকে
তাকিয়ে থাকে
নিঝুম। তারপর
চোখ সরিয়ে
কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে নিবদ্ধ করে
আবার, নিবিড়ের
মোবাইল থেকে
কম্পিউটারে গান নিচ্ছে সে। বুঝতে
পারে নিবিড়
এখনও তার
দিকে তাকিয়ে
আছে। কান
লাল হয়ে
উঠতে থাকে।
নিবিড় তা
পরিস্কারভাবেই দেখতে পাচ্ছে। তাও চোখ
সরায় না।
কিছুক্ষণ কোন
কথা বলে
না দুজনের
কেউই। অস্বস্তি
চেপে ধরতে
থাকে নিঝুমকে।
মরিয়া হয়ে
কথা খুঁজতে
থাকে সে।
আকাশের কথা
তোলে। এবং
ভুলটা করে।
নিবিড় আবার
খেপে যায়।
নিঝুমের হাতটা
মাউসে ধরে
ছিল সে।
এক ঝটকায়
মাউসটা ঠেলে
সরিয়ে দেয়।
তবে নিজের
হাতের নিচ
থেকে নিঝুমের
হাতটা সরায়
না। আলতো
করে চাপ
দিয়েই রাখে।
বলে, “দ্যাখ
নিঝুম, এই
ছেলেকে আমার
ভাল লাগেনা।
তুই কেন
ওকে মেসেজ
দিস আর
আমাকে একটা
খোঁজও দিস
না?” আরও
কিছু বলতে
যাচ্ছিল, তার
আগেই নিঝুম
“কাজ আছে”
বলে হাত
ছাড়িয়ে নিয়ে
ঘর থেকে
বেরিয়ে যায়।
ফিরে এসে
দেখে কম্পিউটার
টেবিলের সামনের
চেয়ারে নিবিড়
বসে আছে।
বিছানা কম্পিউটার
থেকে অনেক
দূরে। ওখানে
বসলে কথা
বলে আরাম
পাওয়া যাবেনা।
ঘরে একটাই
মাত্র চেয়ার।
চেয়ারের পাশে
ছোট্ট একটা
টুল। না
বসে টুলের
এপাশের দেওয়ালে
হেলান দিয়ে
দাঁড়ায় নিঝুম
চুপচাপ। ওর
সাড়া পেয়ে
নিবিড় মুখ
তোলে। জিগ্যেস
করে, “আমার
প্রশ্নের উত্তর
দিলি না
তুই?” খুব
ভালভাবেই বুঝতে
পারে নিঝুম,
কোন প্রশ্নের
কথা বলা
হচ্ছে। কোন
ভণিতায় যায়
না সে।
সরাসরি বলে,
“তোর সাথে
আমার সম্পর্কটা
কী নিবিড়?
যে রোজ
খোঁজ দিতে
হবে? আমি
আমার সব
বন্ধুকেই, যাদের মোবাইল আছে, তাদের
মিসডকল দিই
প্রায়ই। বৃষ্টির
সাথে তো
তোর এখন
যোগাযোগ হয়
না। ওর
আর আমার
মধ্যে তো
রীতিমত কম্পিটিশন
হয় মিসডকল
দেওয়ার। তবে
ও তো
কখনও এভাবে
খেপে যায়
না একদিন
মিসডকল না
দিলে। মন
খারাপ করে
অবশ্য, পরদিন
ক্লাসে গেলে
বলে যে
আগের দিন
ওর মিসডকলের
রিপ্লাই দিইনি
কেন?।
সেটা অন্য
জিনিস। তুই
তো আমাকে
একদম বকা
দিস। আর
আকাশকে নিয়েই
বা তোর
এত লাগে
কেন? তুই
খুব ভালমতই
জানিস আকাশ
একজনকে পছন্দ
করে। ওর
আর আমার
মধ্যে বন্ধুত্ব
ছাড়া আর
কিছু ছিল
না, নেইও।
আগেও বলেছি
এটা, এখনও
বলছি, সারাজীবন
বলব। আর
তুই সেদিন
বললি তুই
নাকি আকাশকে
নিয়ে জেলাস।
কিসের জেলাসি
তোর? ও
তোর বেস্টফ্রেন্ডকে
কেড়ে নেবে
ভাবছিস? ভেবে
থাকলে আর
ভাবিস না।
আমার সবচেয়ে
ভাল বন্ধু
তুই ছিলি,
তুইই থাকবি
আজীবন। আর
এটা তুই
খুব ভালভাবেই
জানিস। তাও
কিসের জেলাসি
তোর ওকে
নিয়ে? এমন
যদি হত
যে আমি
তোর গার্লফ্রেন্ড
জাতীয় কিছু
তাও নাহয়
এক কথা
ছিল। কিন্তু
তুই তো
অনন্যার প্রতি
দুর্বল, তাহলে
আমাকে নিয়ে
তোর কেন
এত হিংসা
করতে হয়
আকাশকে? আজ
আমার উত্তর
চাই নিবিড়
সব প্রশ্নের।”
একসাথে এতগুলো
কথা বলে
একটু ক্লান্ত
হয়ে পরে
নিঝুম। চুপ
করে যায়।
নিবিড় উঠে
দাঁড়ায়। ভীষণ
রাগে মাথায়
আগুন জ্বলছে।
ইচ্ছে করে
নিঝুমকে দেওয়ালটার
সাথে চেপে
ধরে কঠোর
শাস্তি দেয়।
কিন্তু কিছুই
করেনা সে।
ওর আর
নিঝুমের মাঝে
টুলটা আছে।
পা দিয়ে
ওটাকে সরিয়ে
দিয়ে নিঝুমের
কাছে আসে।
ফরসা মুখটা
ঈষৎ রক্তিম
হয়ে আছে।
নিঝুমের মতে
সে সুন্দরী
না হলেও
তার বন্ধুবান্ধবদের
মতে সে
অন্য অনেকের
চেয়ে অনেক
সুন্দরী, কিউট
যাকে বলে।
কপালের উপর
একগোছা অবাধ্য
চুল এসে
পড়েছে, রাগের
কারণে নাকের
পাটা একটু
ফুলে আছে
আর ছোট্ট
গোলাপি ওষ্ঠাধর।
চেহারা থেকে
শিশুসুলভ নিষ্পাপ
ভাবটা এখনও
যায়নি। এই
কমনীয়তা তার
সৌন্দর্যে আলাদা একটা মাত্রা এনে
দিয়েছে। সাঁঝের
আলো-আঁধারিতে
নিরাভরণ, কোনরূপ
প্রসাধনহীন হওয়া সত্ত্বেও নিঝুমের সহজ,
সাধারণ, স্বচ্ছ
রূপ যেন
নির্মল এক
আলো ছড়াচ্ছে।
কিছু একটা
বলতে যেয়েও
এই মুখের
দিকে তাকিয়ে
বলা হয়
না নিবিড়ের।
অপলক চোখে
শুধু তাকিয়ে
থাকে। কয়েক
মুহূর্ত আগেই
যাকে শাস্তি
দিতে ইচ্ছে
করেছে নির্মম
কঠোরতায়, এই
মুহূর্তে তাকেই
ভীষণ ভীষণ
আদর করে
দিতে ইচ্ছে
করছে। নিঝুমও
চোখ তুলে
সরাসরি নিবিড়ের
চোখে তাকায়।
তবে সে
দৃষ্টিতে রয়েছে
কাঠিন্য, রয়েছে
একরাশ প্রশ্ন।
দীর্ঘ কয়েকটা
মুহূর্ত চোখে
চোখে তাকিয়ে
থাকে দুজন।
নিবিড়ের গভীর
দৃষ্টির সামনে
বেশিক্ষণ তাকিয়ে
থাকতে পারেনা
নিঝুম। চোখ
নামিয়ে নেয়।
আবার নীরবতা
নেমে আসে
ওদের মাঝে।
কিন্তু এই
নির্বাক মুহূর্তগুলো
দুই কিশোরকিশোরীর
মনের গহীনেই
ছাপ ফেলে
যেতে থাকে।
নিঝুমের
চোখে কী
খুঁজছে নিবিড়
আসলে? অনন্যার
জন্য ঈর্ষা?
না নিজের
জন্য ভালোবাসা?
না, ঈর্ষা
সে দেখেনি।
কিন্তু দ্বিতীয়টা
দেখেছে। আর
দীর্ঘদিন চেনার
কারণে এটাও
দেখেছে যে
মেয়েটা নিজেই
তা দেখতে
পারছেনা। কী
করেই বা
পারবে? প্রথমত
নিবিড় তার
অবলম্বন, সে
নিজে অনেক
চাপা স্বভাবের
মেয়ে। নিজের
ব্যাপারে অনেক
ধারণাই তার
পরিস্কার নয়।
নিবিড় সেগুলো
বুঝতে তাকে
সাহায্য করেছে
সবসময়। আর
দ্বিতীয়ত, এটা দেখার কোন প্রশ্নই
ওঠে না,
কারণ এটা
সম্ভব নয়
কোনদিনই, কোন
অবস্থায়ই। এই সম্ভাবনা কোনদিন নিঝুম
ভাববেও না।
স্বাভাবিক অবস্থায় ভাবার কারণই নেই
কোন। তাও
সে চায়
নিঝুম বুঝুক
যে সে
তাকে ভালবাসে।
দীর্ঘ নীরবতা
ভাঙ্গে নিবিড়,
“আয়নায় নিজেকে
দেখেছিস কখনও?”
এরকম অপ্রাসঙ্গিক
প্রশ্নে অবাক
হয় নিঝুম।
মুখ তুলে
চায় আবার।
জিগ্যেস করে,
“মানে?” “না
কিছুনা।”, বলে আবারও নিঝুমকে রহস্যের
অতল অন্ধকারে
ফেলে চলে
যায় নিবিড়।
ওরা
চলে যাওয়ার
পরেও বহুক্ষণ
চুপচাপ বসে
থাকে নিঝুম।
নিবিড় তাকে
ভালবাসে তবে?
এই কি
সে বুঝিয়ে
গেল? সরাসরি
জিগ্যেস করবে
ভাবে সে।
কিন্তু এরপর
যেদিন কথা
হয় নিবিড়ের
সাথে, সেদিন
কিছু জিগ্যেস
করার আগেই
তার এই
ভুল ভেঙ্গে
যায়। নিবিড়ের
মুখে শুধু
অনন্যার কথাই
শুনতে পায়
সে। তারা
বলে দেখা
করবে। অনন্যা
নাকি বারবার
জোর করছে
দেখা করার
জন্য। নিবিড়
যদিও দেখা
করেনা, কিন্তু
কথায় বারবার
বুঝিয়ে দেয়
যে দেখা
করার ইচ্ছে
তারও আছে
অনন্যার সাথে।
আর কিছু
জিগ্যেস করেনা
তাই নিঝুম।
নিজের প্রশ্নের
উত্তর নিজেকেই
দেয় সে,
“নিবিড় ভালবাসেনা
আমাকে। অনন্যার
মত মেয়ে
থাকতে আমাকে
ভাল লাগার
কোন প্রশ্নই
ওঠে না।
আর সবচেয়ে
বড় বাধাটা
তো আছেই।
সেটা অতিক্রম
করা কি
আদৌ সম্ভব?
না মনেহয়।
সুতরাং সবই
আমার কল্পনা।”
আপনমনেই হেসে
ওঠে সে।
বন্ধুর সাথে
আবার দুষ্টুমি
করে অনন্যাকে
নিয়ে। এই
ভাল। এই
তো সে
ভাল আছে
নিবিড়কে ভাল
দেখে।
পরীক্ষার
আর বেশি
দেরি নেই।
সম্পূর্ণরূপে পড়াশোনায় নিজেকে নিমজ্জিত করে
রাখে নিঝুম।
মাঝে মাঝে
কথা হয়
নিবিড়ের সাথে।
ভীষণ প্রেসার
সবার মাথায়ই
পরীক্ষা নিয়ে।
কিন্তু এর
মাঝেই আবার
নিবিড় তাকে
দ্বিধায় ফেলে
দেয়। আজকাল
আকাশের সাথেও
একটু একটু
কথা বলে
নিঝুম ফোনে।
নিবিড়কে তা
বলার সাথে
সাথে সে
তার উপর
আদেশ জারি
করে, “তুই
আকাশের সাথে
আর কোনদিন
কথা বলবিনা
ফোনে।” প্রচণ্ড
অবাক হয়
নিঝুম নিবিড়ের
এহেন আচরণে।
জিগ্যেস করে
বারবার যে
কী হয়েছে।
নিবিড় একই
উত্তর বারবার
দেয়, “আমি
বলেছি ব্যস।”
আর কোন
প্রশ্ন করেনা
নিঝুম। নিবিড়
তার অনেকদিনের
বন্ধু, সবচেয়ে
ভাল বন্ধু।
ওর কথা
সে কোনদিন
ফেলেনি। তাই
বিনা প্রতিবাদে
মেনে নেয়
এই কথাও।
আকাশের মেসেজে
অনেক কাকুতিমিনতি
সত্ত্বেও আর
ফোন দেয়না
তাকে। বলে
দেয় যে
নিবিড়ের কথার
উপর কোন
কথা সে
বলবেনা, নিবিড়
তার কাছে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
হতাশ হয়
আকাশ। সরাসরি
নিবিড়ের সাথে
কথা বলবে
ঠিক করে।
কিন্তু নিবিড়
ওর ফোন
ধরেনা। মেসেজও
রিপ্লাই করেনা।
পরে কথা
বলবে আবার
ভেবে আপাতত
আর কিছু
করেনা। তবে
নিঝুমের কাছে
মেসেজ দিয়ে
নিবিড়ের ব্যাপারে
উল্টোপাল্টা কথা বলতে ছাড়ে না।
বলে, “নিবিড়
তোকেও পছন্দ
করে, আবার
অনন্যাকেও পছন্দ করে। তোকে নিয়ে
খেলছে ও।”
অসম্ভব রেগে
যায় নিঝুম।
আকাশকে বলে
দেয়, “খবরদার
একটা বাজে
কথা বলবিনা
তুই। নিবিড়
আমাকে পছন্দ
করে না,
অনন্যাকেই করে। এর প্রমাণ আমি
বহুবার পেয়েছি।
আর নিবিড়
কাউকে নিয়ে
খেলার মত
ছেলেই না।
সো ডোন্ট
ইউ ডেয়ার
টেল এনিথিং
এগেইন্সট হিম।
নাহলে তোর
সাথে আমার
বন্ধুত্ব শেষ।
এখন মেসেজ
তো দিচ্ছি।
আর একটা
বাজে কথা
বললে সেটাও
দেব না
মনে রাখিস।”
অবস্থা বেগতিক
দেখে আকাশ
নিবিড়কে নিয়ে
আর কোন
কথা বলেনা
এরপর থেকে
নিঝুমকে। কারণ
এই কয়দিনে
সেও বুঝে
গেছে নিঝুম
এক কথার
মানুষ। যা
বলে তা
করে ছাড়ে।
মাঝে
পড়াশুনার চাপে
নিবিড়কে খোঁজ
দিতে পারেনি
নিঝুম। বাসায়
অসংখ্য মিসডকল
এসেছে। কিন্তু
দেবে দেবে
করেও নিঝুমের
আর মিসডকল
দেওয়া হয়ে
উঠেনি। তবে
খুব তাড়াতাড়িই
কথা হয়
তার নিবিড়ের
সাথে, মা-বাবা বাইরে
গেলে। নিবিড়
অভিমান করে,
“খোঁজ দিস
নি কেন?”
নিঝুম বলে,
“ব্যস্ত ছিলাম
রে। স্যরি।
কিন্তু তোর
তো অনন্যাই
আছে, আমার
খোঁজ আর
চাস কেন?”
নিবিড় সেরকম
অভিমানী অথচ
আদুরে কণ্ঠেই
বলে, “আমার
ভাল লাগেনা
তোর খোঁজ
না পেলে।”
“কেন লাগেনা?
আমি কি
তোর গার্লফ্রেন্ড?
তোর গার্লফ্রেন্ড
তো অনন্যা।”
এই কথার
কোন উত্তর
দেয়না নিবিড়
যথারীতি। নিঝুম
একটা নিঃশ্বাস
ফেলে চুপ
হয়ে যায়।
এ কী
হচ্ছে তার
সাথে? কেন
এত দ্বিধাদ্বন্দে
পড়ছে বারবার?
তবে কি
আকাশের কথাই
ঠিক? নিবিড়
খেলছে তাকে
নিয়ে? না
না, এ
কীভাবে হয়?
নিবিড়কে তো
সে চেনে।
আসলে এতদিনের
বন্ধু তো,
তাই এমন
করে; নিজেকে
বুঝ দেয়।
পরীক্ষা
শুরু হয়ে
যায়। অনন্যা
আর নিঝুমের
সীট একই
রুমে পড়েছে।
ওর কাছ
থেকে নিবিড়ের
কথা শুনতে
পায় নিঝুম।
নিবিড় নাকি
তাকে “জানু”
বলে ডাকে
আজকাল। নিবিড়
নাকি তার
উপর ফিদা।
ভালই তো,
ভাবে সে।
যদিও বিশ্বাস
করতে ইচ্ছা
হয়না অনন্যার
কথা, কারণ
সে খুব
ভালমতই জানে
যে নিবিড়
এমন ছেলে
না। আর
অনন্যারও তো
বয়ফ্রেন্ড আছে। একটা এংগেজড মেয়ের
সাথে প্রেম
করার মত
ছেলে নিবিড়
না। আবার
পরক্ষনেই ভাবে
যে অনন্যার
তো মিথ্যা
বলার কোন
কারণ নেই।
হয়তো আসলেই
নিবিড় ওকে
পছন্দ করে।
হতেই পারে,
প্রেম তো
আর বলেকয়ে
হয় না।
আশ্বস্ত হয়
কিছুটা। তাই
নিবিড়কেও আর
কিছু জিগ্যেস
করেনা সে।
কিন্তু বিধিবাম।
বিধাতা অলক্ষ্যে
থেকে বোধহয়
মুচকি হাসেন
নিঝুমের স্বস্তি
দেখে। সে
কারণেই পরীক্ষার
মাঝেও আরও
কঠিন পরীক্ষায়
ফেলে দেন
তাকে। অনন্যা
হঠাৎই একদিন
পরীক্ষার পর
একসাথে হল
থেকে বেরুনর
সময় বলে
যে নিবিড়
নাকি তার
কাছে সুইসাইড
করার সবচেয়ে
সোজা উপায়
জানতে চেয়েছে।
কারণ আকাশ
তাকে বলেছে
যে নিবিড়
শুধুই নিঝুমের
একজন বন্ধু,
আর সব
বন্ধুর মতই।
তাহলে নিঝুমকে
নিয়ে এত
বাড়াবাড়ি করার
কী আছে
নিবিড়ের? নিঝুম
ভীষণ উদ্বিগ্ন
হয়ে পরে
এই কথা
শুনে। অনন্যাকে
বলে নিবিড়কে
বলতে যে
সে অনুরোধ
করেছে এমন
কিছু না
করতে, সে
নিজে কথা
বলবে তার
সাথে। অনন্যার
পরের কথা
শুনে নিঝুমের
মনে হল
তার গালে
কেউ ঠাস
করে একটা
চড় কষিয়ে
দিয়েছে, “তুমি
তো নিবিড়ের
কেউ না।
তোমার মানা
ও কেন
শুনবে?” মুখে
কিচ্ছু বলেনা
নিঝুম। অপমানটা
হজম করে
নেয়। ভাবে
যে অনন্যার
এরকম বলার
অধিকার আছে
নিশ্চয়ই নিবিড়ের
জীবনে, কারণ
ওরা পরস্পরকে
পছন্দ করে।
কিন্তু একটা
বোবা কান্না
ঠেলে ওঠে
বারবার বুকের
ভেতর। বারবার
মনে হয়,
এতদিনের বন্ধুত্বের
এই মূল্য
দিল নিবিড়
যে বাইরের
একটা মেয়ে
তাকে অপমান
করতে সাহস
পায়? নিজের
উপরই ধিক্কারে
ভরে ওঠে
মন এতদিন
এটা ভাবেনি
বলে যে
গার্লফ্রেন্ড হলে অনেকদিনের পুরনো বন্ধুকে
মানুষ খুব
সহজেই ভুলে
যেতে পারে,
নিবিড়ও যে
এমনটা করবে
এটা কেন
সে ভাবলনা
তবে? এত
কেন শিওর
হল সে
নিবিড়ের সম্পর্কে
যে নিবিড়
তাদের বন্ধুত্বকে
অসম্মান করতে
দেবেনা কাউকে?
ছি নিঝুম
ছি! নিজের
উপর অদ্ভুত
ঘেন্না হতে
থাকে তার......
বাসায়
এসে নিবিড়কে
ফোন করে।
সৌভাগ্যক্রমে মা বাইরে গিয়েছেন নিঝুমকে
বাসায় ড্রপ
করেই। তাই
বাসায় ঢুকেই
ফোন দিতে
পারে। নিবিড়
একটু গম্ভীর
হয়েই ফোনে
কথা বলে
নিঝুমের সাথে।
নিঝুম অনেক
বোঝায়, অসংখ্য
রিকোয়েস্ট করে উল্টোপাল্টা কিছু না
করার জন্য।
বলে যে
আকাশ যাই
বলুক, তার
কাছে তো
নিবিড় তার
সবচেয়ে ভাল
বন্ধু। অবশেষে
শান্ত হয়
নিবিড়। ভালভাবে
কথা বলে
নিঝুমের সাথে।
তবে নিঝুম
ঘুণাক্ষরেও বলেনা অনন্যা আজ তার
সাথে কী
ব্যবহার করেছে।
নিবিড় ওর
গলা শুনে
মন খারাপ
বুঝতে পারলেও
হাজার চাপাচাপিতেও
কিছু বলেনা।
শুধু বলে
যে টায়ার্ড
লাগছে খুব।
এরপর অল্প
কথায়ই ফোন
রেখে দেয়।
এতক্ষণে
নিজের সাথে
একা হওয়ার
সুযোগ পায়
নিঝুম। সমস্ত
আবেগের আগল
খুলে যায়।
চোখ বেয়ে
ঝরতে থাকে
অজস্র বারি।
কিন্তু কোন
প্রশ্নেরই কোন জবাব দিতে পারেনা
সে নিজেকে।
অবুঝের মত
কাঁদতে থাকে
শুধু একা
একা। তার
এই কষ্ট
কাউকে বলার
নয়। এর
ভাগীদার সে
একলাই। আগে
নিবিড় ছিল,
যাকে সবকিছু
সে মন
উজাড় করে
বলতে পারত।
কিন্তু এখন
সেই নিবিড়ই...
আরেকটা
কর্তব্য বাকি
থেকে যায়
তখনও। তবে
সেটাও সে
তাড়াতাড়িই করে ফেলে। তা হল,
আকাশকে সাবধান
করে দেওয়া।
সেইদিন রাতেই
সে আকাশকে
একটা লম্বা
মেসেজ পাঠায়
কঠোর ভাষা
প্রয়োগ করে।
বলে দেয়,
নিবিড় তার
“আর সবার
মত কেবল
একটি বন্ধু”
নয়, সে
তার সারা
জীবনের বন্ধু।
বরং আকাশকেই
তার শুধুই
একজন বন্ধু
বলা যেতে
পারে। সাথে
এটাও বলে
দেয় যে
এরপর নিবিড়ের
আর একটা
অপমানও সে
সহ্য করবেনা।
এর আগেও
মানা করেছে
আকাশকে, এবার
শেষবারের মত
সাবধান করছে।
আরও বলে,
“তুই যে
আমার সাথে
ফোনে কথা
বলতে মানা
করেছে বলে
নিবিড়কে এত
কথা শুনিয়েছিস
তা আমি
খুব ভালমত
জানি। কিন্তু
একটা কথা
তোকে বলে
দিই, আমার
নিজেরও ইচ্ছা
নেই তোর
সাথে ফোনে
কথা বলার।
তোর যদি
আমার সাথে
কথা বলতেই
হয়, নিবিড়কে
ভালভাবে রাজি
করা, দরকার
হলে ওকে
‘প্লিস’ও
বলতে হবে
তোকে। ও
যদি মানে
তাহলেই আমি
কথা বলব,
নাহলে না।
তবে এটা
মনে রাখবি,
আমার ব্যক্তিগত
আগ্রহ থেকে
তোর সাথে
কথা আমি
বলবনা। আর
হ্যাঁ, শেষ
একটা কথা
বলে রাখি।
আমার এই
মেসেজের কোন
উল্টোপাল্টা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা তুই
করবিনা। আমাকেও
না, আর
নিবিড়কে তো
না-ই।
কারণ তুই
নিজেও জানিস
যা করেছিস
খুব ভুল
করেছিস। সুতরাং
উত্তর দিতে
চাইলে ভালভাবে
দিবি। একটা
উল্টোপাল্টা কাজ করবি তো কাল
তোর সাথে
যে কোন
উপায়ে দেখা
করে এমন
মার মারব,
কোন ছেলেও
এত মারতে
পারবেনা কোনদিন
তোকে। জানিস
যে এটা
আমি পারি।
নিঝুমকে এতদিনে
ভালভাবেই চিনে
গেছিস আশা
করি। বাই।”
একটা নিঃশ্বাস
ফেলে আকাশের
নাম্বারটা বের করে মেসেজটা সেন্ড
করে দেয়
নিঝুম। এসব
কী হচ্ছে
তার জীবনে?
ছোটবেলা থেকে
ভাইদের মধ্যে
বড় হওয়ার
কারণেই হোক,
আর বিভিন্ন
স্পোর্টসে পারদর্শী হওয়ার কারণেই হোক,
ছেলেদের সে
ভয় করতে
শেখেনি কখনও।
বরং এটা
খুব ভালভাবেই
বোঝে যে
ছেলেরা তাকে
সমীহ করে
চলে। কিন্তু
কোন ছেলেকে
পিটুনি দেওয়ার
হুমকি দেওয়া
এই প্রথম।
নিজের মনেই
একটু হেসে
ফেলে সে।
তার স্বচ্ছ,কোমল অথচ
দৃঢ় প্রকৃতির
কারণেই কোন
ছেলে আজ
পর্যন্ত তাকে
কোন ফালতু
কথা বলতে
সাহস পায়নি।
শুধুমাত্র নিবিড় তার ভেতরের আসল
নিঝুমকে চেনে,
বোঝে। নিবিড়ের
নামটা মনে
আসতেই একটা
বিদ্রূপাত্মক হাসিতে ঠোঁটের কোণ বেঁকে
যায় নিঝুমের।
এ বিদ্রুপ
আর কাউকে
নয়। এ
বিদ্রুপ নিজেকে।
নিবিড়! হাহ!
আকাশ
এরপর স্যরি
লিখে মেসেজ
দেয় নিঝুমকে।
কিন্তু নিঝুম
আর নরম
হয় না।
রিপ্লাই করেনা
এই মেসেজের।
নিজের জগতে
নিজেকে পুরোপুরি
হারিয়ে ফেলতে
চায়। পরবর্তী
পরীক্ষার আগে
বেশ কয়েকদিন
ছুটি আছে।
রাজ্যের গান
শোনে এই
দিনগুলোতে সে। নিবিড়ের কোন খোঁজ
নেয় না
ইচ্ছে করেই।
যদিও ল্যান্ডলাইনে
মিসডকল আসতে
শুনে বোঝে
যে নিবিড়
তাকে খুঁজছে।
নিলীমা আর
প্রজ্ঞা দুজনেরই
লুকোনো মোবাইল,
পরীক্ষার সময়
ইউস করতে
পারছে না,
তাই ওদেরকেও
বলতে পারছে
না নিশ্চয়ই
তাকে খুঁজে
দিতে। আর
অনন্যাকে তো
বলার প্রশ্নই
আসে না।
ওকে বললেও
ও কখনোই
নিঝুমের খোঁজ
বের করে
দেবে না।
বা দিলেও
নিবিড়ের ওপর
খুবই বিরক্ত
হবে, জানে
নিঝুম। কারণ
অনন্যা তার
সাথে নিজেকে
ছাড়া আর
কাউকে নিয়ে
কথা বলা
পছন্দ করে
না। সুতরাং...নিবিড় ওকে
বলার সাহসই
পাবে না।
এজন্য অবশ্য
অনন্যাকে দোষও
দেয় না
নিঝুম। যার
যা স্বভাব।
নিবিড়ের থেকে
ইচ্ছে করেই
সে দূরে
দূরে থাকছে।
না, তার
অনুভুতি নিয়ে
খেলতে নয়,
বরং তাকে
অভ্যস্ত করতে।
যদি অনন্যার
সাথে সত্যি
কোন সম্পর্ক
হয়েই থাকে
নিবিড়ের, তবে
তার কারণে
তাতে কোন
বিঘ্ন যাতে
না ঘটে,
এই উদ্দেশ্যেই
সে নিবিড়ের
সাথে যোগাযোগ
প্রায় বন্ধ
করে দিয়েছে।
অনন্যা আর
নিবিড় দুজনের
পরীক্ষাই ভাল
হবে হয়তো
একজন আরেকজনের
সাথে কথা
বললে। তাই
হোক।
গান
বরাবরই নিঝুমের
খুব প্রিয়।
নিজে সে
রবীন্দ্র সঙ্গীত
শেখে। ঈশ্বরপ্রদত্ত
সুরেলা কণ্ঠ
তার নেই।
অনেক কষ্ট
করে, অনেক
সাধনা করে
এখন কিছুটা
সুরে এসেছে
গলা। নিঝুম
বোঝে ভাল
গানের কত
কদর। তাই
গান শুনতেও
খুব পছন্দ
করে। পরীক্ষা-অন্তর্বর্তীকালীন ছুটিতে চুটিয়ে গান শোনে,
আর নিজেও
চর্চা করে।
আর তা
করতে যেয়ে
নিজের মধ্যে
কিছু পরিবর্তন
সে টের
পায়। রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরকে সে
যেন নতুন
করে আবিষ্কার
করতে থাকে
প্রতিটা গানের
মধ্য দিয়ে।
আগে কখনও
গান এমন
করে মনে
দাগ কাটেনি
নিঝুমের। এখন
যেন প্রতিটা
শব্দ, প্রতিটা
বাক্য তার
কাছে নতুন
নতুন অর্থ
প্রকাশ করতে
থাকে। বিস্ময়ে,
শ্রদ্ধায় বারবার
মাথা নুয়ে
পড়তে থাকে
তার সঙ্গীতের
সেই মহান
স্রষ্টার উদ্দেশ্যে।
গভীর অনুরাগের
মধ্য দিয়ে
বুঝতে পারে,
অবশেষে সে
প্রেমে পড়েছে।
হ্যাঁ, গানকে
সে মন
থেকে ভালবাসতে
পেরেছে অবশেষে।
এই কয়দিন
তাই নিবিড়কে
ভুলে থাকতে
তার অসুবিধা
হয়নি। কিন্তু...ভেতরে ভেতরে
কেমন একটা
অশান্তি তাকে
কুরে কুরে
খেয়েছে। যতক্ষন
গানের মধ্যে
থেকেছে, ভাল
থেকেছে। গানের
জগতটা থেকে
বাইরে আসলেই
অবসাদ তার
নিত্যসঙ্গী হয়েছে। বাবা মা’র সামনে ভাল
থাকার চেষ্টা
করলেও নিজের
কাছে নিজেকে
সে কিছুতেই
লুকাতে পারেনা।
সেদিন অনন্যার
ওই ব্যবহার
তাকে ভীষণ
নাড়া দিয়ে
গেছে। তাই
প্রচণ্ড মানসিক
চাপ বারবার
তাকে চেপে
ধরছে। এই
চাপ নিয়েই
সে বাকি
পরীক্ষাগুলো দেয় কোনমতে। অনন্যার কাছে
শোনে নিবিড়
তার খোঁজ
করেছে। শুনে
কিছু বলে
না। বাসায়
এসে একটা
দুটা মিসডকল
দেয়। কিন্তু
কোনরকম মেসেজে
যায় না।
থিওরি পরীক্ষা
শেষ করে
কোনরকমে। এবার
কিছুদিনের বিরতির পর প্রাকটিকাল পরীক্ষা
শুরু।
ছুটির
প্রথমদিন সকালে
অনেক দেরি
করে ঘুম
থেকে ওঠে
নিঝুম। সবে
নাস্তা শেষ
করে গোসল
করেছে, ডোরবেল
বেজে ওঠে।
দরজা খুলে
নিবিড়, ঈশিতা
আর আনটিকে
দেখে ভীষণ
অবাক হয়
সে। ভাবতেই
পারেনি ওরা
চলে আসবে
আজ। মাও
খুব খুশি
হন তাঁর
বান্ধবীকে পেয়ে। নিবিড় আর ঈশিতাকে
পাঠিয়ে দেন
নিঝুমের রুমে।
ওরা আসার
পর থেকে
এখন পর্যন্ত
নিঝুম একটাও
কথা বলেনি
নিবিড়ের সাথে।
নিবিড়ের মা
আর ঈশিতার
সাথে কথা
বলে নিজের
ঘরে চলে
গেছে। নিবিড়
আর ঈশিতা
ঘরে ঢুকে
দেখে নিঝুম
জানালার কাছে
দাঁড়িয়ে আছে,
তার ‘ঝনটু
মিয়া’র
সাথে গল্প
করছে। ঝনটু
মিয়া হচ্ছে
নিঝুমের পোষা
কাকের ছানা।
আসলে ঠিক
পোষা নয়।
নিঝুমের ঘরের
জানালার ঠিক
পাশেই বিশাল
আমগাছ আছে
একটা,যার
একটা ডাল
নিঝুমের জানালা
ছুঁইছুঁই। সেই ডালেই কাকের বাসা
রয়েছে। এমনিতে
নিঝুম কাক
অসম্ভব ভয়
পায়। তার
দিকে কোন
কাক উড়ে
আসতে দেখলে
চিৎকার করে
চারপাশ কাঁপিয়ে
দেয়। এই
নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা
কত হাসাহাসি
করে, নিবিড়ও
তার বাইরে
নয়। কিন্তু
এই বাসাটায়
কয়দিন আগে
একটা কাকের
ছানা হতে
দেখেছে নিঝুম।
কেন যেন
খুব মায়া
পড়ে গেছে
তার বাচ্চাটার
ওপর। চোখ
নেই, ডানা
নেই, খালি
কিচকিচ করে।
নিঝুম এর
আগে কখনও
কাকের ছানা
দেখেনি, তাই
হয়তো এটাকে
প্রথম দেখে
তার কাছে
“চরম কিউট”
লেগেছে। তারপর
থেকে নিঝুমকে
দিনের একটা
উল্লেখযোগ্য সময় এই জানালার কাছে
কাকের বাসার
দিকে তাকিয়ে
থাকতে দেখা
যায়। কাকের
বাচ্চার আবার
নামও রেখেছে,
‘ঝনটু মিয়া’!
নিবিড় আর
অনন্যা শুনে
হাসতে হাসতে
কাহিল হয়ে
গেছে। মানুষের
এমন খেয়ালও
হতে পারে!
তবে নিবিড়
জানে যে
তার নিঝুম
এমনই। তাই
বেশি হাসাহাসি
করেনি। সস্নেহে
বলেছে, “পাগলি।”
তাই আজ
যখন ঘরে
ঢুকে নিঝুমকে
জানালার দিকে
মুখ করে
দাঁড়িয়ে থাকতে
দেখল, বুঝতে
অসুবিধা হয়নি
যে সে
ওখানে কী
করছে। নিঝুমের
সামনে যেয়ে
দাঁড়ায়। কিন্তু
কেন যেন
কিছু বলতে
পারে না।
নিঝুমও মুখ
ফিরায় না
তার দিকে।
কেমন যেন
অস্বস্তি বোধ
করতে থাকে
দুজনে। প্রথম
কথা শুরু
করে ঈশিতাই।
তারপর আস্তে
আস্তে নরমাল
হয়ে আসতে
থাকে নিবিড়
আর নিঝুম।
কথাপ্রসঙ্গে অনন্যার কথা এসে যায়।
নিঝুম জিগ্যেস
করে, “তুই
যে এখানে
এসেছিস তোর
বউ জানে?
ওকে জানা।
ও তো
তোকে দেখেনি।
আমাকে বলেছিল
তুই আসলে
জানাতে। আমার
তো ফোন
নেই, তাই
তুইই জানা।”
নিবিড় একটু
গাইগুই করলেও
তেমন আপত্তি
করেনা। ফোন
দেয় অনন্যাকে।
কিন্তু ফোন
ধরেনা কেউ।
বলে, “ওর
বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে হয়তো।”
নিঝুম বলে,
“সে এখনও
আছে? আবার
তুইও তো
তার বর।
কীজানি বাবা,
বুঝিনা তোদের
ব্যাপার।”
আরও
কিছুক্ষণ থাকার
পর ওরা
চলে যায়।
একটু পর
নিঝুম বাবার
সাথে একটু
বাইরে বের
হয়। বাইরে
গেলে বাবার
মোবাইল ওর
হাতেই থাকে।
হঠাৎই নিবিড়ের
নাম্বার থেকে
একটা মেসেজ
আসে, “কেমন
আছিস?” নিঝুমের
মেজাজটা একটু
খিঁচরে ছিল
নিবিড়ের উপর।
তাই রিপ্লাই
করে, “দেখেই
তো গেলি
কেমন আছি।
আবার জিগ্যেস
করছিস কেন?
যা তোর
বউয়ের খোঁজ
নে গিয়ে।
বাই” নিবিড়ের
রিপ্লাই আসে,
“মানে?” এর
আর কোন
উত্তর দেয়
না নিঝুম।
প্রাকটিকাল
পরীক্ষা শুরু
হয়। প্রথমদিন
অনন্যার সাথে
যায় নিঝুম।
গাড়িতে যেতে
যেতে নিবিড়কে
আর আকাশকে
নিয়ে অনেক
কথা হয়
দুজনের মাঝে।
একই কোচিঙে
পড়ার সুবাদে
আকাশ অনন্যারও
পরিচিত। তার
পুরনো বয়ফ্রেন্ডের
বন্ধু আকাশ।
সেই হিসেবেও
পরিচিত। আকাশ
খুব একটা
পছন্দ করেনা
অনন্যাকে। অনন্যাও আকাশের ব্যাপারে নানা
উল্টোপাল্টা কথা বলে। তবে নিঝুম
এসব কিছুতে
নাক গলায়
না। আকাশ
তার ভাল
একজন বন্ধু।
যদিও এই
মুহূর্তে আকাশের
উপর সে
রেগে আছে
সেদিনের ব্যাপারে,
তবে আকাশ
তাকে খুব
অল্প সময়ে
আপন করে
নিতে পেরেছে,
এজন্য সে
আকাশের প্রতি
কৃতজ্ঞ। কথায়
কথায় অনন্যা
হঠাৎ বলে,
“জান নিঝুম,
কাল নিবিড়
আমাকে খুব
সিরিয়াসলি জিগ্যেস করেছে আমি ওকে
বিয়ে করব
নাকি।” নিঝুম
অবাক হয়ে
যায় শুনে।
নিবিড় জানেনা
ওর বয়ফ্রেন্ড
আছে? মাথা
কি পুরোটাই
গেছে ছেলেটার?
সে কিছু
বলার আগেই
অনন্যা বলে,
“আমি শুনে
খুব হেসেছি।
ওকে আমি
বিয়ে করব
নাকি? ও
আমার পিছে
ঘুরে, আর
সব ছেলের
মতই।” বলে
আবার হেসে
ওঠে। কান
গরম হয়ে
যায় নিঝুমের
এই কথা
শুনে। মেয়েটা
কাকে কী
বলছে বুঝে
বলছে তো?
তবে মুখে
সেটা প্রকাশ
করেনা। বলে,
“নিবিড় খুব
ভাল ছেলে।
ও যদি
সিরিয়াসলি কিছু বলে থাকে তাহলে
সেটা মিন
করেই বলেছে।”
অনন্যা কথার
মোড় ঘুরিয়ে
দেয় হঠাৎ।
বলে, “কিন্তু
আকাশকে নাকি
ও পছন্দ
করে না?”
নিঝুম উত্তর
দেয়, “হু
করে না।
কিন্তু কেন
করে না
আমি জানিনা।
আকাশের সাথে
আমি আর
কথা বলিনা।
ও নিবিড়কে
অপমান করেছে।”
অনন্যা খোঁচা
দিতে ছাড়ে
না, “কেন,
আকাশ না
তোমার খুব
ভাল বন্ধু?”
নিঝুম অপমানটা
হজম করে
বলে, “নিবিড়ের
থেকে ভাল
নয়। হ্যাঁ
এটা সত্যি
যে ও
আমার ভাল
বন্ধু, কারণ
অন্য অনেকের
চেয়ে অনেক
কম সময়ে
ও আমাকে
বুঝতে পেরেছে,
সেজন্যই ও
আমার ভাল
বন্ধু।” অনন্যা
বলে ওঠে,
“হ্যাঁ নিবিড়ের
চেয়েও ভাল।”
এবার আর
সহ্য করতে
পারেনা নিঝুম।
তার আর
নিবিড়ের বন্ধুত্ব
একযুগেরও বেশি
সময়ের। তের
বছর ধরে
তারা বন্ধু।
আর এই
মেয়েটা মাত্র
তের সপ্তাহের
পরিচয়ে তাদের
বন্ধুত্বে যা না তা বলতে
শুরু করে
দিয়েছে? গাড়ির
সামনের সীটে
বসেছিল সে।
অনন্যার কথা
শুনে একটা
শব্দও উচ্চারণ
করেনা সে।
শুধু পিছে
ফিরে এক
পলক তাকায়
মেয়েটার দিকে।
তারপর পাথরের
মূর্তির মত
নির্বাক নিশ্চল
হয়ে সামনের
দিকে তাকিয়ে
বসে থাকে।
পুরোটা রাস্তা
আর একটা
কথাও বলেনা।
ফেরার
পথেও অনন্যার
হাজার সাধাসাধিতেও
নিঝুম কথা
বলে না।
আজ অনন্যা
তার সবচেয়ে
দুর্বল জায়গায়
আঘাত করেছে।
সে কখনওই
পারবেনা অনন্যাকে
ক্ষমা করতে।
আর নিবিড়?
নিবিড় প্রশ্রয়
না দিলে
অনন্যা এসব
বলতে পারত
না। তাই
নিবিড়ের ওপরও
রাগ উঠতে
থাকে নিঝুমের।
তবে নিবিড়কে
কিছু না
বলারই সিদ্ধান্ত
নেয় সে।
ঠিক করে,
যোগাযোগ কমিয়ে
দেবে এখন
থেকে। ও
অনন্যাকে নিয়ে
যা ইচ্ছা
করুক। নিঝুম
আর নেই
এসবে। আর
আকাশকে নিয়ে
কথা বলেছে
তো, ঠিক
আছে, এখন
থেকে আকাশই
হবে তার
বন্ধু। তাই
নিবিড়ের মানা
থাকা সত্ত্বেও
সেদিন জেদ
করে নিঝুম
আকাশকে ফোন
করে। কিন্তু
ফোন ধরেই
আকাশের “ফোন
করিস না
কেন” অভিযোগের
ফিরিস্তি শুনে
বিরক্ত হয়ে
ফোন রেখে
দেয়। এরপর
নিবিড়কে ফোন
করে। অনন্যার
ব্যাপারে কিছু
বলে না।
নিবিড় নিজেই
শুনেছে অনন্যার
কাছ থেকে
কী হয়েছে।
সেজন্য সে
স্যরি বলে।
কিন্তু নিঝুম
বলে দেয়,
“তুই কেন
স্যরি বলছিস?
তোর স্যরি
বলার তো
কিছু নেই
নিবিড়। অনন্যার
সাথে তোর
সম্পর্ক গভীর
হয়েছে, এখন
সে আমাকে
যা খুশি
বলতেই পারে।
কিন্তু আমাদের
বন্ধুত্বটা আমার কাছে এখনও অনেক
মূল্যবান। এটা নিয়ে যাকে তাকে
যা তা
আমি বলতে
দিতে পারিনা।
আকাশকে নিয়ে
তোর যখন
এতই সমস্যা
সেটা তুই
আমাকে সরাসরি
বললে পারতি
যে সমস্যাটা
আসলে কোথায়।
অনন্যার মত
বাইরের মানুষের
তো আমাদের
বন্ধুত্ব নিয়ে
কথা বলার
কোন অধিকার
নেই। ” এরপর
নিবিড়কে কিছু
বলার সুযোগ
না দিয়েই
ফোন রেখে
দেয়।
সেদিনের
পর থেকে
নিঝুম আর
নিবিড়কে কোন
মিসডকল দেয়না।
নিবিড় মেসেজ
দিলে শুধু
রিপ্লাই করে।
কিন্তু নিবিড়ের
উপর্যুপরি অনুরোধে আর অনুনয় বিনয়ে
বেশিদিন এমন
চুপ করে
থাকতে পারেনা
নিঝুম। আস্তে
আস্তে আবার
যোগাযোগ শুরু
করে। তবে
অনন্যার সাথে
আর কথা
বলে না।
নিবিড় চেয়েছিল
অনন্যার সাথে
যোগাযোগ বন্ধ
করে দিতে,
কিন্তু নিঝুম
দেয়নি তা
করতে। তার
জন্য কারো
সাথে কারো
সম্পর্ক খারাপ
হোক এটা
সে চায়নি।
কয়েকমাস
কেটে যায়।
নিবিড়ের সাথে
অনেক কথা
হয় এখন
নিঝুমের। অনন্যাকে
নিয়েও দুষ্টুমি
করে বন্ধুর
সাথে। তবে
নিবিড় মাঝেমাঝেই
তাকে আবারও
দ্বিধায় ফেলে
দেয়। যেমন
সেদিন একটা
এসএমএস পাঠাল,
যার মানে
শুধু বন্ধুত্ব
দিয়ে বের
করা সম্ভব
নয়। কিন্তু
নিবিড়কে জিগ্যেস
করায় সে
বলেছে ভাল
লেগেছে তাই
পাঠিয়েছে। আবার আরেকদিন কী যেন
বলবে বলে,
কিন্তু বলে
না। নিঝুম
ধরে নিয়েছে
নিশ্চয়ই অনন্যার
সাথে সম্পর্কের
কথা বলতে
চেয়েছিল, কিন্তু
যেহেতু নিঝুম
অনন্যার সাথে
কথা বলেনা,
তাই বলতে
পারেনি। “থাক
যখন বলা
দরকার মনে
করবে, তখন
বলবে”, ভেবে
আর চাপাচাপি
করেনি সে
নিবিড়কে। মাঝে
আবার একচোট
মান-অভিমান
হয়ে গিয়েছিল
দুজনের মাঝে।
নিঝুম রাগ
করে নিবিড়কে
কোন ফোন,
মিসডকল, মেসেজ
কিচ্ছু দেয়নি।
পরে মান
ভাঙলে ফোন
দিলে নিবিড়
বলেছে, “রাগ
করলে কি
ফোনও দেওয়া
যাবেনা?” নিঝুম
বলেছে, “না।
আমাকে রাগাস
আবার কথা
বলতে চাস
কেন?” অভিমানী
কণ্ঠের উত্তর
পেয়েছে, “আমার
ভাল লাগেনা
তোর সাথে
কথা না
বলতে পারলে,
তুই ফোন
না দিলে...”। কিছু
সময়ের জন্য
নির্বাক হয়ে
গেলেও কথাটার
মানে আর
কিছু যে
হতে পারে
এটা নিঝুমের
মাথায় আসেনি।
বন্ধুত্বের টানই ভেবে নিয়েছে এই
কথাটাকে নিঝুম,
কারণ তারও
তো ভাল
লাগেনা বেস্টফ্রেন্ডটার
সাথে কথা
না বলে
থাকতে, যতই
রাগ হোক,
যতই অভিমান
দেখাক। আর
তাছাড়া আগেও
তো এমন
কথা বলেছে
নিবিড়। সুতরাং
অন্যকিছু ভাবার
কোন কারণ
নিঝুম খুঁজে
পায়নি।
অনন্যার
সাথে সেদিনের
ঘটনার পর
আকাশকে ফোন
দিলেও পরে
আর নিজে
থেকে তাকে
ফোন দেয়নি
নিঝুম। কারণ
তখন দিয়েছিল
রাগের মাথায়।
পরে যখন
জেদ কমে
এসেছে তখন
আর নিবিড়ের
কথা সে
অমান্য করেনি।
দেয়নি ফোন
আকাশকে। তবে
আকাশের অনেক
অনুনয়ের পর
নিবিড় মেনে
নিয়েছে আকাশের
সাথে নিঝুমের
কথা বলা।
যদিও নিঝুম
আকাশের সাথে
তেমন কথা
বলেনা, সে
জানে নিবিড়
অনুমতি দিলেও
এখনও আকাশকে
পছন্দ করেনা।
তাই খুব
কম কথা
বলে আকাশের
সাথে। কিন্তু
একটা ব্যাপারে
সে খুব
খুশি যে
তার জীবনে
নিবিড় আর
আকাশের মত
দুজন বন্ধু
আছে যারা
তার কেয়ার
করে, তাকে
মূল্য দেয়।
আকাশ অবশ্য
বলে যে
নিবিড় তাকে
পছন্দ করে,
নিঝুম গায়ে
লাগায় না।
প্রজ্ঞা নিলীমার
সাথেও মাঝে
মাঝে কথা
হয়, তবে
এখন তো
স্কুল কোচিং
সব বন্ধ,
তাই আগের
মত কথা
হয় না।
ওরাও আকাশের
সাথে একমত।
কিন্তু নিঝুম
মেনে নিতে
পারে না।
সে তো
বুঝতে পারে
নিবিড়ের সাথে
দুষ্টুমি করতে
যেয়ে যে
অনন্যার সাথে
কিছু একটা
আছে ওর।
আর সে
নিজেও তো
নিবিড়কে ওভাবে
দেখেনি কখনও।
ওদের কথা
শুনে নিবিড়কে
অন্য চোখে
দেখার কথা
ভাবতে গেলেই
হাসি পেয়ে
যায় তার।
“ধ্যুত” বলে
উড়িয়ে দিয়ে
অন্য কথায়
চলে যায়।
দেখতে
দেখতে রেজাল্টের
সময় এগিয়ে
আসে। মে
মাসের শেষ
সপ্তাহ চলছে।
আর দু
সপ্তাহ পরেই
রেজাল্ট। সবার
মনেই একটা
কী হয়,
কী হয়
টেনশন। এমন
টেনশনে ভরা
এক দুপুরে
নিঝুম আর
নিবিড়ের কথা
হচ্ছে। কেউই
রেজাল্ট নিয়ে
কথা বলছে
না। এটা
ওটা নিয়ে
কথা বলতে
বলতে অনন্যার
প্রসঙ্গ এসে
যায়, যথারীতি
অনন্যাকে নিয়ে
নিবিড়কে খেপায়
নিঝুম। তারা
এখনও দেখা
করেনি। অনন্যা
নাকি বলেছে
দেখা হলেই
বিয়ে করে
ফেলবে, তাই
নাকি নিবিড়
দেখা করতে
চায় না।
শুনে হেসে
গড়িয়ে পড়ে
নিঝুম। নিবিড়
রেগে গেলে
তারপর হাসি
থামানোর চেষ্টা
করে। বলে,
“হায় রে
বীরপুরুষ আমার!
বিয়ে যদি
না-ই
করার সাহস
থাকে তবে
পছন্দ করিস
কেন?” নিবিড়
বলে, “কই
পছন্দ করলাম?”
নিঝুম আবারও
হাসে, “থাক
থাক আর
লজ্জা পেতে
হবে না।”
এমন সময়
হঠাৎই ফোনটা
কেড়ে নেয়
কেউ। ওইপাশে
শোনা যায়
ঈশিতার গলা,
“হ্যালো নিঝুম?”
একটু অপ্রস্তুত
হয়ে যায়
নিঝুম, “জ্বি?”
ঈশিতা-“কেমন আছ?”
নিঝুম-“এই তো
ভাল। তুমি
কেমন আছ?”
ঈশিতা-“আছি। তোমাকে
একটা জরুরী
কথা বলতে
আজকে ফোনটা
নিলাম তোমার
বন্ধুর হাত
থেকে জোর
করে...এই
নিবিড়, একদম
পিছে পিছে
ঘুরবিনা। যা
ওই ঘরে
যা। আমার
কথা শেষ
হলে তারপর
আসবি।”
নিঝুম
একটু ভয়
পেয়ে যায়
ঈশিতার এইসব
সিরিয়াস কণ্ঠের
কথাবার্তা শুনে। ঈশিতা কখনও তাকে
“তুমি” করে
বলে না।
আজ বলছে।
কী হল
হঠাৎ? জিগ্যেস
করে, “কী
হয়েছে? কোন
সমস্যা হয়েছে
কি?” ঈশিতা
বলে, “আচ্ছা
নিঝুম, তোমার
মনে আছে
আমি তোমাকে
জিগ্যেস করেছিলাম
নিবিড়কে তুমি
পছন্দ কর
কিনা?” নিঝুম
মনে মনে
প্রমাদ গোনে,
“এখন আবার
এ শুরু
করল সেই
একই কথা!
উফফ!” মুখে
বলে, “হু
আছে। আমি
তো উত্তর
দিয়ে দিয়েছি।”
ঈশিতা-“আজ আবারও
একই প্রশ্ন
করছি তোকে।”
নিঝুম-“দেখ, আমার
উত্তর আমি
দিয়ে দিয়েছি
সেইদিনই। আবার
কেন এসব
নিয়ে কথা
বলছ? তুমিও
আশা করি
বলবে না
যে নিবিড়
আমাকে পছন্দ
করে! তুমি
তো ওর
সাথে এক
ছাদের নিচে
থাক। তোমার
থেকে ভাল
তো নিশ্চয়ই
কেউ জানবেনা
যে ও
কাকে পছন্দ
করে না
করে। আর
আমি আসলে
প্রেম ভালোবাসা
এইসব জিনিস
নিয়ে ভাবি
না কখনও।
যদি কাউকে
পছন্দ করেও
থাকি, সেটা
আমার নিজের
কাছেই থাকবে,
তাকে বলতে
যাব না
কখনও। আর
সবচেয়ে জরুরী
কথা যেটা
সেটা হল,
নিবিড় অনন্যাকে
পছন্দ করে,
এটা তোমার
জানার কথা।
সুতরাং দয়া
করে আমাকে
শুনাতে এস
না যে
ও আমাকে
পছন্দ করে।
কারণ এটা
সম্ভব না।
প্রথম কারণ
তো তুমি
ভালভাবেই জান,
সেটা আর
আমাকে বলে
দিতে হবেনা।
আর দ্বিতীয়
কারণ তো
মাত্র বললাম
যে নিবিড়
আর অনন্যা
একজন আরেকজনকে
পছন্দ করে।”
ঈশিতা-“তোকে ধরে
থাপ্পড় লাগানো
উচিত নিঝুম।”
“মানে????”,
ঈশিতার উত্তেজিত
কণ্ঠ শুনে
হকচকিয়ে যায়
নিঝুম। এক
মুহূর্ত নীরবতা।
এরপর নিঝুমের
সমস্ত সত্তাকে
স্তম্ভিত করে
দিয়ে অস্বাভাবিক
শান্ত স্বরে
ঈশিতা বলে
ওঠে, “নিঝুম
রে, তুই
এত বোকা
কেন? কেন
বুঝতে পারছিস
না এতদিন
পরেও? হ্যাঁ
আমি সবচেয়ে
ভাল জানি
নিবিড় কাকে
পছন্দ করে।
আমাকে সেটা
বলা হয়েছে।
নিবিড় নিজেই
বলেছে। ও
তোকে পছন্দ
করে রে
পাগলি।”
“কিইইইইইইইই???”,
প্রায় আর্তনাদ
করে ওঠে
নিঝুম।
ঈশিতা
বলে, “হু
তাইই। ও
তোকে পছন্দ
করে। কিন্তু
তুই এত
অবাক হচ্ছিস
কেন? এর
আগে কেউ
কি কখনও
তোকে এ
কথাটা বলেনি?”
একটু
চুপ করে
থেকে উত্তর
দেয় নিঝুম,
“বলেছে। আমার
সব বন্ধুবান্ধবই
বলেছে। কিন্তু
সেটা শুধুই
তাদের অনুমান।
আমি কখনওই
পাত্তা দিইনি
ওদের কথায়।
আর নিবিড়ও
আমাকে তেমন
কোন ধারণা
দেয়নি। কিন্তু
তুমি...তুমি
বলছ নিবিড়
বলেছে! এও
কি সম্ভব?!”
“সম্ভব
হবেনা কেন
রে পাগল?
যাকে চার
বছর বয়স
থেকে চিনিস,
যার সাথে
তোর আত্মার
সম্পর্ক, সে
তোকে ভালবাসবে
না তো
কে বাসবে?
আর ও
ইঙ্গিত দেয়নি
কেন বলছিস?
দিয়েছে। কতবার
তোকে কিছু
বলার চেষ্টা
করেছে, মনে
পড়ে? তোর
সাথে আকাশকে
নিয়ে ঝগড়া
করেছে, তোকে
আজব আজব
মেসেজ পাঠিয়েছে,
তোর একদিন
খোঁজ না
পেলে কী
সব কাণ্ড
করেছে, মনে
নেই?”
“আছে।”,
নিঝুম ছোট্ট
করে বলে।
“তাহলে?”
নিঝুম
চুপ করে
থাকে। একটু
পর ঈশিতাই
বলে, “তুই
নাকি ওকে
চড় মারবি,
তাই ও
তোকে বলার
সাহস পাচ্ছিলনা।
আমি কত
করে বলেছি
বলে দিতে,
কিছুতেই বলেনি।
আজ বলেছিল
তুই ফোন
দিলে বলবে।
কিন্তু দেখি
শুধু আবোলতাবোল
বকে যাচ্ছিস
দুজনে, তাই
আমি জোর
করে ফোন
নিয়ে তোকে
বলে দিলাম।
দ্যাখ না,
কেমন বিদেশী
ছোট ছোট
কুকুরগুলোর মত ঘুরছে আমার পেছন
পেছন কী
বলেছি শুনতে।”,
বলতে বলতে
হেসে দেয়
ঈশিতা। সহসাই
গম্ভীর হয়ে
যায়। বলে,
“দ্যাখ, আমি
তোকে সব
বললাম। এখন
তোর সিদ্ধান্ত
জানা। যদিও
আমার মনে
হয় যে
আমি তোর
উত্তর জানি।”
নিঝুম
বলে, “জান?
কী?”
ঈশিতা
বলে, “হ্যাঁ-ই হবে।
তুইও মনে
মনে ওকে
পছন্দ করিস।”
এবার
নিঝুম হেসে
ফেলে। বলে,
“তাই মনে
হয়? আমার
কখনও এমন
মনে হয়নি
কিন্তু।”
ঈশিতা
বলে, “তুই
কবে তোর
অনুভূতি নিজে
বুঝতে পেরেছিস
বল্ তো?
সবসময় তো
নিবিড়ই তোর
কখন কী
মনে হয়
না হয়
সেটা তোর
আগেই বুঝতে
পেরেছে।”
“তাহলে
আমি যদি
পছন্দ করিই
ওকে, সেটাও
তো ওর
বুঝে যাওয়ার
কথা, তাই
না?”, ঈশিতাকে
কথা শেষ
করতে না
দিয়েই বলে
নিঝুম।
“হয়তো
বুঝতে পেরেছে।
কিন্তু তুই
এটা না
বুঝা পর্যন্ত
তো ও
আগাতে পারছে
না। শোন,
আসল কথায়
আয় এবার।
তোর ডিসিশন
কী?”, ঈশিতা
নিঝুমকে প্রসঙ্গে
টানে আবার।
বেশ
কিছুক্ষণ চুপ
করে থাকে
নিঝুম। তারপর
আস্তে আস্তে
বলে, “কী
বলব বল?
ভাললাগা আর
ভালোবাসা তো
এক নয়।
আর তাছাড়া...”
নিঝুমের
কথার মাঝে
কথা বলে
ওঠে ঈশিতা,
“তাছাড়া যেটার
কথা তুই
বলতে চাচ্ছিস
নিঝু, ওটা
কোন সমস্যাই
না আসলে।
সেটার কথা
পরে আসছে।
ভাললাগা না
ভালোবাসা, সেই পরীক্ষাটা তো তোকেই
নিতে হবে
রে। আমি
তো জানি
ও তোকে
ভালবাসে। কিন্তু
জীবনটা যেহেতু
তোদের দুজনের,
তুই দেখ্
নিবিড় তোকে
আসলেই ভালবাসে
কী না।
সেজন্য তোকে
ওর সাথে
থাকতে হবে।
”
“উম...আমায় একটু
সময় দাও
প্লিস।”, নিঝুম
বলে।
ঘরের
ভেতর থেকে
বারান্দায় অস্থিরভাবে পায়চারিরত ভাইয়ের দিকে
তাকায় ঈশিতা।
এক মুহূর্ত
ভাবে। তারপর
বলে,“আচ্ছা
দিলাম সময়।
কিন্তু বেশি
সময় নিস
না। আমার
ভাইটা তোকে
বড্ড বেশি
ভালবাসে নিঝুম।
তুই ঠকবি
না, আমি
কথা দিতে
পারি।”
“হুম্।”,
কী বলবে
ভেবে না
পেয়ে বলে
নিঝুম।
আবার
নীরবতা। একটু
পর প্রায়
শোনা যায়
না এমন
কণ্ঠে নিঝুম
বলে, “আমি
কি ওর
সাথে একটু
কথা বলতে
পারি?”
ওপাশ
থেকে ঈশিতার
কৌতুকপূর্ণ কণ্ঠ শোনা যায়, “কার
সাথে?”
থেমে
থেমে নামটা
উচ্চারণ করে
নিঝুম, “নিবিড়”,
বলতে যেয়ে
স্বর কেঁপে
যায়।
“অ্যাই
গাধা, আয়।
আর ওখানে
দাঁড়িয়ে তড়পাতে
হবেনা কখন
ওর সাথে
কথা বলতে
পারবি ভেবে
ভেবে।...আচ্ছা
নিঝু, বাই।
কথা বল
তোর ‘তার’
সাথে!”, বলেই
আর কিছু
বলার সুযোগ
না দিয়ে
নিবিড়ের কানে
ফোনটা ধরিয়ে
দিয়ে যায়
ঈশিতা।
“আচ্ছা
আমি যে
নিবিড়কে চাইলাম,
ওর সাথে
কী কথা
বলব আমি?
কেমন যেন
অদ্ভুত লাগছে
ওর সাথে
কথা বলতে
হবে ভেবেই!”,
আপনমনেই ভাবে
নিঝুম, একটা
অস্বস্তি কাজ
করছে ওর
ভেতর। এসব
সাতপাঁচ ভাবতে
ভাবতে শোনা
যায়, “হ্যালো!”,
নিবিড়ের চিরচেনা
কণ্ঠ। একটু
কি রক্তিম
হয় নিঝুম?
হয়তো হয়।
নাহলে যে
নিবিড়ের কণ্ঠ
শুনে নদীর
মত কলকলিয়ে
উঠত সে,
একটু আগেও
যে নিবিড়ের
সাথে অন্য
একজনকে নিয়ে
দুষ্টুমি করেছে,
এখন মাত্র
পনের মিনিটের
বিরতিতে সেই
নিবিড়ের কণ্ঠ
তার হৃৎপিণ্ডে
হাতুড়ির বাড়ি
মারছে কেন?
কেন নিঝুম
কথা বলতে
পারছেনা তার
প্রিয় বন্ধুর
সাথে? এ
অনুভূতি কি
শুধুই অস্বস্তি?
না সাথে
অজানা এক
আনন্দ আর
শিহরণমিশ্রিত লজ্জাও আছে? সৃষ্টিকর্তাই এর
উত্তর ভাল
দিতে পারবেন।
মানবমনের বিচিত্র
রংবেরঙের অনুভূতির
রহস্য মানুষের
কাছে আজও
তো অনেকটাই
অজানা। ইতিমধ্যে
নিবিড় আরও
দু-তিনবার
“হ্যালো হ্যালো”
বলে ফেলেছে।
কিন্তু নিঝুম
নীরব হয়ে
আছে। অবেশেষে
সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব
কাটিয়ে নিঝুম
উত্তর দেয়
নিবিড়ের ডাকাডাকির,
“হু হ্যালো!”
“কী?”,
প্রশ্ন আসে
ওপাশ থেকে।
প্রশ্নকারীকে একটু রাগত স্বরেই পাল্টা
প্রশ্ন করে
উত্তরদাতা, “কী আবার? কী শুনলাম
এটা? যা
শুনলাম তা
সত্যি?” কিন্তু
সেই রাগের
প্রশ্নে নিবিড়
কেন যেন
একটু অভিমান
খুঁজে পায়,
এ অভিমান
নিঝুমকে আগে
কেন বলা
হল না
যে নিবিড়
ওকে পছন্দ
করে সেজন্য।
এ অভিমান
তার ভীষণ
ভীষণ ভীষণ
প্রিয়। তাই
আরও একটু
উপভোগ করার
লোভ সামলাতে
পারেনা। অবাক
হবার ভান
করে নিঝুমকে
প্রশ্ন করে,
“কই কী
শুনলি? আমি
তো কিছু
জানি না?
খোলাখুলি বল্
কী শুনলি?”
এবার বিপাকে
পড়ে যায়
অভিমানিনী। যা শুনতে চাইছে তা
তো বলা
মুশকিল। বলতে
গেলে যে
ঈষৎ রক্তিম
থেকে পুরোপুরি
“মাল্টিকালার” হয়ে যেতে হয় তাকে!
কিন্তু ছোটবেলা
থেকে ড্যামকেয়ার
নিঝুমের সাথে
এসব “মেয়েসুলভ”
আচরণ একদমই
মানানসই নয়,
তাও আবার
নিবিড়ের সাথে
কথা বলার
সময়। নির্ঘাত
পরে পিছে
লাগবে এই
নিয়ে বদমাশটা।
সুতরাং লজ্জা-টজ্জা সব
বাদ, বেপরোয়া
প্রশ্ন ছুঁড়ে
দেয় নিবিড়ের
উদ্দেশ্যে, “ধুর ছাই! মরার আর
জায়গা পেলিনা?
শেষমেশ আমাকে...?!”,
কিন্তু শেষ
করতে পারেনা।
সত্যি সত্যিই
লাল আভায়
আলোকিত হয়ে
ওঠে ফর্সা
গাল দুটি।
ফোনের ও
প্রান্ত থেকেও
মনের আয়নায়
নিবিড় পরিষ্কার
দেখতে পায়
এই দৃশ্য।
হাসে নীরবেই।
খোঁচা দিতে
ছাড়ে না,
“লজ্জা পেলি
নিঝুম?” নিঝুমের
তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার মত প্রশ্নই
বটে এটা।
কিন্তু আজ
জ্বলে না
সে। আস্তে
আস্তে বলে,
“It really feels odd…isn’t it? We are best friends, but… I’ve never thought of
you like anything else…neither did I think that you’ve thought so…it’s odd
Nibir. Do you really like me?” নিবিড় বলে, “Test me. You’ll get the answer.” নিঝুমের দ্বিধান্বিত
কণ্ঠ ভেসে
আসে, “কী
জানি! দেখি...”
সেদিন
বিকেলটা অসম্ভব
অস্থির কাটে
নিঝুমের। ভাললাগা
না ভালোবাসা?
ভালোবাসা না
ভাললাগা? মাথাটাই
খারাপ হয়ে
যাবার যোগাড়
হয়। আবার
ভাবে, নিবিড়
তার সবচেয়ে
ভাল বন্ধু।
ও নিশ্চয়ই
নিঝুমকে ঠকাবে
না। ভাবতে
ভাবতে কোন
দিক দিয়ে
যে সময়
কেটে যায়
টের পায়
না। অবশেষে
ভাবে, নাহ,
তাকেই এ
পরীক্ষা নিতে
হবে। আর
এর মধ্যে
না ঢুকে
পরীক্ষা নেওয়ার
কোন উপায়
নেই, কারণ
তাকে তো
নিজের ব্যাপারেও
নিশ্চিত হতে
হবে। নিবিড়কে
মেসেজ লিখতে
শুরু করে,
“যা তোকে
বেটে হারিয়ে
দিলাম। ” ঈশিতার
কাছে শুনেছে
সে আর
নিবিড় নাকি
বেট ধরেছে
ওর সিদ্ধান্তের
উপর। নিবিড়
বলেছে যে
নিঝুম না-ই বলবে।
আর ঈশিতা
বলেছে, হ্যাঁ।
মেসেজটা লিখে
আবার কিছুক্ষণ
ভাবে। তারপর
সেন্ড বাটনে
চাপ দিয়ে
পাঠিয়ে দেয়।
দুরুদুরু বুকে
প্রতীক্ষা এরপর রিপ্লাইয়ের। প্রায় দশ
মিনিট পর
নিবিড়ের রিপ্লাই
আসে। একদম
স্বাভাবিক কথাবার্তা; দেখে স্বস্তির নিশ্বাস
ফেলে নিঝুম।
এজন্যই এই
ছেলেটা তার
বেস্ট ফ্রেন্ড।
নিবিড় ঠিকই
বুঝতে পেরেছে
যে এই
মুহূর্তে নিঝুম
ভীষণ অস্বস্তিতে
ভুগছে। তাই
অন্য কোন
কথায় যায়নি,
বন্ধুর মতই
ব্যবহার করেছে
তার সাথে।
দিন
যায়। কেটে
যায় দুটো
মাস। এরমধ্যে
ঈশিতার অনেক
অনুরোধে নিবিড়ের
বাসায় আর
না যাওয়ার
জেদ ছেড়েছে
নিঝুম। গেছে
নিবিড়ের বাসায়।
নিবিড় আকারে
ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে
যে সে
নিঝুমকে ভালবাসে।
নিঝুম এড়িয়ে
গেছে। কারণ
আরও বন্ধুবান্ধব
উপস্থিত ছিল।
কিন্তু বারবার
তার দিকে
নিবিড়ের একমনে
তাকিয়ে থাকা
দেখে শেষ
পর্যন্ত মৃদু
বকা না
দিয়ে পারেনি।
নিঝুম নিজের
মধ্যে কেমন
একটা পরিবর্তন
অনুভব করতে
পারে। নিবিড়
আশেপাশে থাকলে
কেমন একটা
ভাললাগা এসে
ভর করে
তার চারদিকে।
একটু বেশি
হাসি, একটু
বেশি আনন্দ,
আর... চলে
আসার সময়
আরও একটু
থাকার ইচ্ছে।
তবে এসব
অনুভূতির কোনটাই
সে নিবিড়ের
সামনে প্রকাশ
করেনা। নিবিড়ও
চায় না
তার কাছে
আলাদা কিছু।
সে হয়তো
আপনমনেই অনুভব
করতে পারে
সবচেয়ে আপন
বন্ধুটির অনুভূতিগুলোকে।
“ভালবাসি” বলা হয় না কোন
পক্ষ থেকেই।
তাও যেন
ভালবাসার বাঁধনে
ধীরে ধীরে
বাঁধা পড়ছে
দুটি মন।
যদিও এখনও
প্রশ্ন করে
ফেরে অবুঝ
মন, এ
কী আসলেই
ভালোবাসা? না শুধুই ভাললাগা? কিন্তু
একদিনের ঘটনায়
সব প্রশ্নের
উত্তর পাওয়া
হয়ে যায়
একে অপরের।
রেজাল্ট বের
হয়ে গেছে।
কলেজে ভর্তির
প্রক্রিয়াও সমাপ্ত। নিঝুম ভর্তি হয়েছে
তাদের স্কুলেরই
কলেজে। বলা
বাহুল্য, নিলীমা,
প্রজ্ঞা, অনন্যাও
সেই একই
কলেজে। নিবিড়
ভর্তি হয়েছে
আরেকটি কলেজে।
ক্লাস শুরুর
আগের দিনের
কথা। ছোট
একটা গেট
টুগেদারে মিলিত
হয় নিবিড়,
ঈশিতা, নিঝুম,
লিসা, সুপ্তি।
সাথে অবশ্যই
তাদের বাবা-মা’রাও
আছেন। ডিনার
শেষে বন্ধুরা
মিলে একটু
হাঁটতে বেরোয়।
নিঝুম-নিবিরের
মধ্যে কী
চলছে টা
শুধু ঈশিতাই
জানে, লিসা
আর সুপ্তিকে
জানান হয়নি।
সবার সাথে
হাঁটতে হাঁটতে
নিবিড় ইচ্ছে
করেই একটু
পিছিয়ে পড়ে,
আর ঈশিতাকে
ইঙ্গিতে বুঝায়
যাতে নিঝুমকে
পিছে পাঠিয়ে
দেয়। ঈশিতা
সেইমত লিসা
আর সুপ্তিকে
কথার জালে
ব্যস্ত রেখে
নিঝুমকে পাঠিয়ে
দেয় নিবিড়ের
সাথে। কিন্তু
পাশাপাশি এসেও
কারো দুজনের
কারো মুখে
কোন কথা
নেই। চুপচাপ
হাঁটতে থাকে।
নীরবেই যেন
একে অন্যের
সাথে ভাব
বিনিময় করে।
সেসময়টা নিবিড়ের
চরিত্রের আরেকটা
দিক স্পষ্ট
হয় নিঝুমের
কাছে। তার
বান্ধবীরা, যাদেরই বয়ফ্রেন্ড আছে, তাদের
মোটামুটি সবারই
বয়ফ্রেন্ডদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে
গেছে। অন্তত
কিস তো
হয়েছেই। মুখে
কিছু না
বললেও নিঝুমের
এটা মোটেই
পছন্দ নয়।
তার মতে
একটা মানুষকে
শরীর দিয়ে
চেনার আগে
মন দিয়ে
চিনতে হয়।
প্রথম পরিচয়েই
কিস করা,
শারীরিক সম্পর্ক
তৈরি করা,
অল্পদিনের মধ্যেই এসব করা উচিত
নয়। “যে
মানুষ আমার
শরীরকে নয়,
মনকে আগে
ভালবাসবে সে-ই প্রকৃত
প্রেমিক, সে-ই আমায়
সত্যিকার অর্থে
ভালবাসে”, এটাই নিঝুমের আদর্শ। বিস্মিত
হয়ে নিঝুম
দেখে যে
এতদিনের পরিচয়
তাদের, তবুও
এই নির্জন
পথে তাকে
একা পেয়েও
নিবিড় তাকে
ছোঁয়ার কোনরকম
চেষ্টা করছে
না। এক
অন্যরকম আনন্দে
ভরে যায়
নিঝুমের মন।
নিবিড়ের প্রতি
নতুন একটা
শ্রদ্ধা জেগে
ওঠে মনে।
নিবিড়ের মনেও
তখন একই
অনুভূতির খেলা
চলছে। সে
নিজে একটা
কো এড
স্কুলে পড়েছে,
রিলেশনে গেলে
ছেলেমেয়ে উভয়ের
আচরণই দেখার
সুযোগ হয়েছে
তার। এখনকার
দিনে ভালোবাসা
মানে শুধু
যেন শরীরের
আনন্দ। ছেলেরা
যতটা অ্যাগ্রেসিভ
এ ব্যাপারে,
মেয়েরাও তার
চেয়ে কিছু
কম নয়।
অথচ এই
একটি ঘণ্টায়
তার পাশাপাশি
হেটেও নিঝুম
সেরকম কোন
ইঙ্গিত দেয়নি।
দুজনই বুঝতে
পারে, হয়তো
এটাই ভালোবাসা,
যা শুধু
স্বচ্ছ জলের
মত বয়ে
চলে, যাতে
নেই কোন
ক্লেদ। কিন্তু
একই সাথে
একটা বিষাদও
এসে ভর
করে, এই
ভালোবাসা কীভাবে
সার্থক হবে?
নিবিড় আর
নিঝুমের মাঝে
যে সীমাহীন
সীমা, তাকে
অতিক্রম করা
কি সম্ভব
হবে তাদের
দুজনের পক্ষে?
নিবিড় ভাবে,
“আমি তো
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এই অগ্নিপরীক্ষা
দেবার, কিন্তু
নিঝুম কি
পারবে?” আর
নিঝুম যে
কী ভাবছে,
নিজেই তার
থৈ খুঁজে
পায়না। নীরবে
একজন আরেকজনের
উপস্থিতি, সান্নিধ্য উপভোগ করতে করতেই
ফিরে আসে
তাদের পরিবারের
কাছে। সেদিন
বিদায় নেবার
সময় দুজনের
মনই যেন
একই সাথে
আনন্দ আর
বেদনায় ভরপুর
হয়ে থাকে।
কলেজ
শুরু হয়ে
যায়। প্রথম
থেকেই অনেক
ব্যস্ততার মাঝে দিন কাটতে থাকে
সবারই। বিশাল
সিলেবাস, স্বল্প
সময়। সুতরাং
ব্যস্ত না
হয়ে উপায়
নেই। এরই
মাঝে সময়
বের করে
নিয়ে যোগাযোগ
করে নিঝুম-নিবিড়। যোগাযোগ
বলতে সেই
মিসডকল আর
সুযোগ পেলে
একটু মেসেজ।
নিলীমার সাথে
কলেজে দেখা
হয় নিঝুমের।
তার থেকে
জানতে পারে,
নিবিড় রোজ
ওর খবর
নেয় নিলীমার
কাছ থেকে।
নিলীমা যেন
নিবিড়ের ভালোবাসা
দেখে আরও
বেশি ভালবাসতে
শুরু করে
নিঝুমকে। তবে
নিঝুমের খোঁজ
নেওয়া ছাড়াও
নিবিড়ের সাথে
নিলীমার আরও
কিছু কথা
হয়, যা
নিঝুমের অজানা।
নিলীমা জানে
নিঝুমকে কিছু
বলে লাভ
নেই, তাই
নিবিড়কেই প্রতিদিন
জিগ্যেস করে,
কবে নিঝুমকে
“ভালবাসি” বলবে। নিবিড় বলে, “বলতে
তো চাই,
কিন্তু সাহস
হয় না
রে।” আর
তারপর রাজ্যের
বকা শোনে
নিলীমার কাছ
থেকে।
পার
হয়ে যায়
আরও সাতটি
দিন। নিঝুমের
কাজিন, অভি
এসেছে ইংল্যান্ড
থেকে। বয়সে
অভি বড়
হলেও নিঝুমের
সাথে তার
সম্পর্ক বন্ধুর
মত। ভাঙ্গা
ভাঙ্গা বাংলায়
নিঝুমকে সে
তার প্রেমিকার
কথা জানায়।
তারপর জানতে
চায় নিঝুমের
কেউ আছে
নাকি। নিঝুম
প্রথমে বলে
না। কিন্তু
ভাইয়ের চাপাচাপিতে
বলে যে
না, সেরকম
কেউ এখনও
নেই, তবে
একজন ওকে
ভালবাসে হয়তো,
আর ওরও
তাকে ভাল
লাগতে শুরু
করেছে। এরপর
নিবিড়ের কথা
খুলে বলে।
সব শুনে
অভি বলে
নিবিড়কে আপন
করে নিতে,
সমস্যা যাই
থাকুক, সে
সবসময় আছে
নিবিড় আর
নিঝুমের পাশে,
কারণ জীবনসঙ্গী
অনেকেরই ভাল
বন্ধু হয়ে
যায় সময়ের
সাথে, কিন্তু
সবচেয়ে ভাল
বন্ধুকে জীবনসঙ্গী
হিসেবে পাওয়া
ভাগ্যের ব্যাপার।
সেই সুযোগ
যখন নিঝুমের
কাছে এসে
ধরা দিয়েছে,
তখন নিঝুমের
পিছিয়ে যাওয়া
উচিত নয়।
শুধু তাকে
নিশ্চিত হতে
হবে যে
সে-ও
নিবিড়কে ভালবাসে
কিনা। নিঝুম
এর উত্তর
না দিলেও
অলক্ষ্যে থেকে
অন্তর্যামীই নিঝুমের মুখে আলোছায়ার খেলা
দেখে অভিকে
তা বুঝতে
সাহায্য করেন।
অভির সাথে
রোজই দেখা
হয়, তাই
এই কদিন
তার মোবাইল
থেকেই নিঝুম
নিবিড়ের সাথে
মেসেজিং করে।
আগের থেকে
একটু বেশি
কথা হয়,
তাই দুজন
দুজনকে আরও
একটু ভালভাবে
চেনার সুযোগ
পায়, অভিও
বাধা দেয়
না। কিন্তু
ভালবাসার কথা
কারুরই বলা
হয়না। নিবিড়ের
প্রতিটা দিন
একটা নতুন
পরীক্ষা মনে
হতে থাকে,
যে পরীক্ষায়
সে সব
প্রশ্নের উত্তর
জানে, কিন্তু
তার কাছে
লেখার জন্য
কোন কলম
নেই।
অগাস্ট
মাসের সাত
তারিখ। রাত
দশটা। অভির
সাথে তার
রুমে বসে
আড্ডা দিচ্ছে
নিঝুম, একই
সাথে অভির
ফোন থেকে
নিবিড়কেও মেসেজ
করছে। হঠাৎ
ফোনটা কেড়ে
নেয় অভি
দুষ্টুমি করে,
বলে যে
এরপর যা
মেসেজ আসবে,
সে পড়বে।
নিঝুম কয়েকবার
কেড়ে নেওয়ার
চেষ্টা করে
ব্যর্থ হয়।
আগের মেসেজগুলো
পড়তে থাকে
অভি। সাধারণ
কথাবার্তা। একটু পর মেসেজের টোন
বেজে ওঠে
অভির মোবাইলে।
হু, নিবিড়ই
মেসেজ দিয়েছে।
মেসেজটা পড়ে
সে। নিঝুম
প্রবল আগ্রহের
সাথে তাকিয়ে
আছে তার
দিকে। একটাও
কথা না
বলে, ফোনটা
বাড়িয়ে দেয়
নিঝুমের দিকে।
হঠাৎ চারপাশ
যেন স্তব্ধ
হয়ে যায়।
মেসেজে লেখা,
“if luving u is wrong, i don’t wanna be right. my luv 4 u is stronger than any
other light. the path ahead is full of struggle. but together, we’ll win every
fight....I Love You Nijhum.” অভি বলছে, “হ্যাঁ
বলে দাও
নিঝুম। he is genuine.” কিন্যু নিঝুমের
কানে এসব
যেন ঢুকেও
ঢুকছে না।
আজ এক
বিশাল প্রশ্নের
সম্মুখীন সে।
নিবিড় পেরেছে
তাদের মধ্যেকার
সমস্ত বাধা
অতিক্রম করে
তাকে মনের
কথা বলে
দিতে। কিন্তু
নিঝুম? নিঝুম
কি পারবে?
কী উত্তর
দেবে সে
নিবিড়কে? এ
কি সম্ভব?
সে যে
স্নিগ্ধা ইসলাম
নিঝুম, আর
অপরজন... নিবিড়
রায়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন