ইন্টারভিউ নেওয়ার সময়েই টের পেয়েছিলাম এই আইটেমকে খাটে তুলতে বেশী সময় লাগবে না ।
বর্ষা ছিল খুব , দুপুর থেকেই শহরটা জলে ভাসছে । প্রায় বিকেল চারটে বাজে তখন , আমার কেবনে বসে পানু ডাউনলোড করছি, রতন ( অফিসের পিওন কাম আমার সব কাজের স্যাঙ্গাত )এসে দরজায় ঠুক ঠুক করল।
“ আসব স্যার?”
“ কি হল ?”
“ স্যার , এক জন এয়েছে – মেয়ে ছেলে , ইন্টারভু দিবার জন্য ।”
“ ভাগিয়ে দে, টাইম তো তিনটে পর্যন্ত ছিল । এখন আর হবে না ।”
রতন দরজা টেনে দিয়ে বেরিয়ে গেল ।
একটু বাদেই আমার কানে এল একটা মেয়ের গলা , বলছে “ প্লীজ , একটু ব্যবস্থা করে দাও না , খুব দরকার ।”
‘ খুব দরকার ’ বা ‘ নইলে মরে যাব ’ বা ‘ কোন উপায় নেই ’ বা এইরকম কিছু শব্দ শুনলে আমার মধ্যে যেন কিছু হয়ে যায় – না , দয়া নয় । দয়া মায়া বলে কোন বস্তু থাকলে আর এই শর্মাকে ব্যবসা করে খেতে হত না। ওই
কথা গুলো শুনলেই আমার মধ্যের সুযোগসন্ধানী পশুটা জিভ চাটতে থাকে।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে , কেবিনের পর্দা সামান্য ফাঁক করে দেখতে গেলাম কি হচ্ছে ।
মেয়েটার বয়স হবে ২৬/২৭ ,সাড়ে পাঁচ ফুটের মত লম্বা , হাল্কা ময়লা রঙ গায়ের , বুক পাছা বেশ ভারী , লম্বা চুল আলগা করে বেঁধে ঘাড়ের উপর ফেলে রাখা । ভিজে চুপ্পুস হয়ে গেছে , শাড়ী-ব্লাউস লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। রতন দেখলাম
চোখ সরাতে পারছে না মেয়েটার বুকের থেকে।
“ প্লীজ , রতনদা কিছু একটা ব্যবস্থা কর না, তোমার স্যার কে গিয়ে বল না পাঁচ মিনিট সময় দিতে , সেই কখন ট্রেণ ধরেছি, বৃষ্টিতে ট্রেণ দাঁড়িয়ে গিয়ে লেট হলে আমি কি করব ?”
মেয়েটা আমার অফিসে ঢুকেছে মিনিট দশেক হবে , তার মধ্যেই রতনের নাম জেনে সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছে , রতন গোগ্রাসে ওর মাই গিলছে বুঝেও স্বচ্ছন্দে কথা চালিয়ে যাচ্ছে – এ মাল তো কাজের জিনিষ , খালি একটু ঘষে মেজে নিতে
হবে ।
চেয়ারে এসে বসে , টেবিলের উপর রাখা বেল টা বাজালাম ।আওয়াজ শুনে রতন দৌড়ে এলো। আমি গলা ভারী করে বললাম – “ কি হল টা কি ? মেয়েটা গেছে ?” রতন মুখ কাঁচুমাচু করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল – “ স্যার ,
কিছুতেই যাচ্ছেনে। হেব্বী রিকুস্ট করতেছে । ডেকে দেব স্যার ?” মুখে বিরক্তি এনে বললাম –“ঢ্যামনার গাছ , খুব মায়া যে , যা ডেকে দে। যত্ত সব খুচরো ঝামেলা।“ রতন এক গাল হেঁসে বেরিয়ে গেল।
একটু বাদে দরজায় আওয়াজ – “ স্যার , আসতে পারি ?” গলাটা বেশ আদুরে আদুরে , বুঝলাম মামণির এটা প্রথম ইন্টারভিউ নয়। আমি সামনে রাখা ফাইল থেকে মাথা না তুলে ভিতরে এসে চেয়ারে বসতে বললাম। চোখের কোণ দিয়ে
দেখলাম মেয়েটা সাবলীল ভাবে উল্টো দিকের চেয়ারে বসে, হাতে ধরে রাখা বায়োডাটার কাগজটা টেবিলের উপরে রাখল। আমি কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকার ভান করে আড়চোখে মেয়েটাকে মাপছি - গোল মুখ , ঘন চুল , বড় বড় চোখ , ঠোঁট টা
সামান্য মোটা, সিথির ফাঁকে চিলতে সিদুরের ছোঁয়া। বিবাহিত মেয়েদের সিঁদুর পড়া নিয়ে আমার একটা মতবাদ আছে – দাম্পত্য সম্পর্ক যতটা মধুর সিঁথিতে সিঁদুর ততটাই বেশী থাকে , সময়ের সাথে সাথে , তিক্ততার সাথে সাথে পরিমাণে
কমতে থাকে । শেষ পর্যন্ত ততুটুকুতেই এসে থামে যাতে কুমারী মেয়ে ভেবে ছেলে ছোকরারা যত্র তত্র বিব্রত না করে আবার প্রয়োজন পড়লে এই পিছুটানটাকে ভুলে যেতে আসুবিধা না হয়। সামনে বসে থাকা মেয়েটির সিঁদুরের পরিমাণে আমার
মনে হল যে শেষের দলেই পড়বে। এবার খালি মিলিয়ে নিতে হবে যে আমার মতবাদ টা এর ক্ষেত্রে কতটা সফল ।
আমি এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – “ নাম ?”
“সোনালী সেন”
বায়োডাটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম ঃ নাম – সোনালী সেন , বাবার নাম – ঁস্বরূপ সেন , বাড়ী – শ্রীরামপুর , হুগলী , বয়স – ২৬, শিক্ষাগত যোগ্যতা – বিঃ কমঃ
“ এর আগে কাজ করেছ কোথাও?”
“ হ্যাঁ স্যার ! বিয়ের আগে করতাম , এক বছর আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম। চার বছর ধরে চাকরী করেছি ।“
“ তুমি কাজ তো করেছ রিসেপশানিস্ট হিসাবে , সেলসের কাজ তো করনি কোন দিন ...... তোমায় নেব কি করে ?”
“স্যার , নামেই রিসেপশানিস্ট , ছোট কোম্পানি , জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ –সবই করতে হত। পাবলিক ডীলিং সব আমিই করতাম স্যার। সেলস আমার কাছে নতুন নয়। সেলসের কাজ আমি ঠিক পেরে যাব স্যার।“
“ কিন্তু ..................”
“ কোন কিন্তু নয় স্যার , আপনি ভরসা করে দেখুন , ডোবাব না , কথা দিলাম । আপনি বকে মেরে কাজ শিখিয়ে পড়িয়ে নেবেন , না পারলে কান ধরে বার করে দেবেন ।“
ওর কথা বলার ধরণে আমার মজা লাগল – “ ঢোকার সময় ও রকম সব্বাই বলে ......”
“ স্যার , চাকরী করতে যখন বেড়িয়েছি তখন কাজ তো করতেই হবে , মাগনাতে তো আর কেউ মাইনে দেবে না । আমি যদি আপনাকে খুশী করতে না পারি , যা ইচ্ছে করবেন ।“
মনে মনে ভাবলাম , যা ইচ্ছে করতে তো এখনি চাই , কিন্তু দেখি তোকে কত দিনে খেলিয়ে তুলতে পারি ।
“ কিছু বললেন স্যার ?”
“ না।......... সোনালী , তোমার কনফিডেন্স আমার ভাল লেগেছে । আমার অফিস টাইমিংস কিন্তু সকাল ন’টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত , কাজ শেষ করতে করতে আট টার কম হবে না। তোমার বাড়ী তো শ্রীরামপুরে , ট্রেণে ডেলি
প্যাসেঞ্জারী করে টাইম মেনটেন করতে পারবে কি করে ?”
“ স্যার , সে আমি দমদম পার্কে একটা পেয়িং গেস্ট ব্যবস্থা দেখে রেখেছি ... চাকরী পেয়ে গেলে শিফট করে যাব ঠিক করে রেখেছিলাম । মেট্রো তে যাতায়তে অসুবিধে হবে না ।“
“ বাড়ী ছেড়ে থাকতে মন খারাপ করবে না ?”
“ বাড়ী থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম , শ্বশুরবাড়ীতে ও টিকতে না পেরে আবার বাধ্য হয়ে বাপের বাড়ীতে ফিরে আসা । বাবা মারা যাবার পর সেটাও আর বাপের বাড়ী নেই , দাদার বাড়ী , মা আর আমি একটা ঘরে পরে থাকি । আমার আর
বাড়ী নেই স্যার , মাথা গুজতে পারলেই হল। মায়ের জন্য কষ্ট হবে , রবিবার করে ঘুরে আসব মায়ের কাছ থেকে , ব্যাস ! “
“ স্যালারী কি এক্সপেক্ট করছ ?”
“ স্যার , আমি সেলসে নতুন , তাই বেশী এক্সপেক্ট করব না । তবে , পেয়িং গেস্টে থাকার খরচা , যাতায়ত , মা কে বাড়ীতে কিছু দিতে হবে , আমার নিজস্ব খরচা আর কিছুটা সেভিংস করতে তো হবে – আমাকে দেখার তো কেউ নেই –
সব কিছুই আপনাকে জানিয়েছি , আপনি যা ভাল বুঝবেন তাই দেবেন ।“
“ সোনালী , প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু সুবিধে অসুবিধে থাকে , স্যালারী হয় কাজ অনুযায়ী , প্রয়োজন আনুযায়ী নয় । তবে আমি চেষ্টা করি আমার লোকেদের এমন স্যালারী দিতে যাতে তারা মন দিয়ে আমার কাজ ভাল ভাবে করে , আর
কাজ যদি ভাল করে তার পুরস্কার হিসাবে এক্সট্রা পেমেন্ট পায়।“
“ ঠিক আছে স্যার ! “
“ তোমায় এখন আমি মাসে ১৮০০০/- দেব , ছ’মাসে পার্মানেন্ট হলে ইনক্রিমেন্ট পাবে । অবশ্য তুমি যা সেলস করবে তার টেন পার্সেন্ট পাবে এক্সট্রা পেমেন্ট হিসাবে , সেটা প্রতি কোয়ার্টারে পাবে তিন মাসের সেলসের উপরে ।“
স্যালারীর অঙ্কটা শুনে যে সোনালী অবাক হয়ে যাবে সেটা আমি জানতাম কারণ ওর বায়োডাটাতে আগের কোম্পানীর মাইনে লেখা ছিল ৭০০০/- । দ্বিগুণের বেশী মাইনে দেওয়ার কারণ গুলো আমি মনে মনে সাজিয়ে নিলাম –১)এত বেশী মাইনে
ও অন্য কোথায় পাবে না , ২) এটা আমার ইনভেস্টমেন্ট যা কিছুদিনের মধ্যেই আমি উসুল করব ,আর সবচেয়ে যেটা জরুরী সেটা হল - ৩) সোনালী বুদ্ধিমতী , এই মাইনে যে শুধু সেলসের কাজের জন্য নয় সেটা ও ঠিকই বুঝতে পারবে , যদি
আপত্তি থাকে তবে ও এখানে কাজ করবে না ।
“ তুমি কি রাজী , সোনালী?”
সোনালী আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেঁসে বলল – “ স্যার , রাজী না হওয়ার কোন কারণ আছে আমার কাছে ? এর থেকে কম স্যালারী পেলেও আমি কাজ করতাম কারণ আপনাকে ...মানে আপনার অফিস টা আমার খুব ভাল লেগে
গেছে।“
মাগী যে ইচ্ছে করেই শেষের কথাটা বলেছে সেটা ওর ঠোঁটে লেগে থাকা হাঁসিটাই বলে দিচ্ছে।
“ সোনালী , এটা এখন থেকে তোমারও অফিস , আগামী সোমবার থেকে জয়েন কোরো । তোমার এপয়ন্টমেন্ট লেটার তৈরী থাকবে । তুমি এখন আসতে পার ।“
সোনালী মাথা নেড়ে বেড়িয়ে গেল।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীমান রতন চন্দ্রের প্রবেশ – “ স্যার , আপনে খালি আমারে গালমন্দ করেন । মেয়েছেলেটা্র গতর যে আপনের চোখে লাগবে তা আমি পেরথম থেকেই জানতেম , হু !”
“ রতন , ওর একটা নাম আছে , তুই ওকে সোনালী ম্যাডাম বলে ডাকবি “ – এই বলে আমি একটা ৫০০/- টাকার নোট ছুড়ে দিলাম রতনের দিকে।
নোটটা কুড়িয়ে নিয়ে রতন বেড়িয়ে গেল ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন